স্টাফ রিপোর্টার: আমজাদ হোসেন (৩৮) আর ইসমাইল হোসেনকে (৪৪) ১৫০ কেজি গাঁজাসহ সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল গত ১১ জুন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তারা। কিছুদিনের মধ্যে জামিনে বের হয়ে তারা আবার জড়িয়েছেন একই কারবারে। রোববার (০৮ অক্টোবর) ভোররাতে রাজশাহীর পুঠিয়ায় ৩৬ কেজি গাঁজাসহ একই টিমের কাছে ধরা পড়েছেন এ দুজন।
আমজাদ ও ইসমাইলের সঙ্গে আনিসুর রহমান (৪৪) নামের আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের তিনজনেরই বাড়ি কুড়িগ্রাম। তারা কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় এ গাঁজার চালানটি পাবনার দুজন বড় মাদক ব্যবসায়ীর কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পাবনার এ দুজনের মতো রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট ১ হাজার ৪৯২ জন বড় মাদক কারবারি আছেন। মূলত তারাই এখন মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। এরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে মাদকদ্রব্য বিক্রি করে থাকেন। এদের অনেকেই আবার দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকের চালান পাঠান।
গাঁজাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় রোববার দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। সেখানেই এসব তথ্য জানান বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহা. জিললুর রহমান। তিনি জানান, বড় মাদক ব্যবসায়ীর তালিকাটি প্রতিনিয়তই হালনাগাদ করা হয়। সর্বশেষ হালনাগাদের সময় রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় এদের সংখ্যা ১ হাজার ৪৯২ জন পাওয়া গেছে। এরা হেরোইন, গাঁজা, ইয়াবা, মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে। তাদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এদের দিকে নজরদারিও অব্যাহত রয়েছে।
তিনি জানান, গত তিন-চার মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয় বিভাগের ৮ জেলা থেকে হাজার কেজিরও বেশি গাঁজা উদ্ধার করেছে। সব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, দেশে এখন গাঁজা ঢুকছে কুমিল্লা এবং কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে। রাজশাহীর ৮ জেলার মধ্যে নওগাঁ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে যাচ্ছে কুমিল্লার গাঁজা। অন্য জেলাগুলোতে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের গাঁজা। এসব গাঁজা পাচার করা হচ্ছে নানা কৌশলে। প্রধান সড়ক বাদ দিয়ে বিভিন্ন সংযোগ সড়কে ঢুকে পড়ছে মাদক পাচারকারী গাড়িগুলো। সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলে এসব মাদকের চালান ধরা কঠিন। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
জিললুর রহমান আরও জানান, সর্বশেষ ৩৬ কেজি গাঁজার যে চালানটি জব্দ করা হয়েছে সেটি আনা হচ্ছিল একটি একটি ডেলিভারি ভ্যানে। বদনা, কলমদানি, জগ-মগের মতো বিভিন্ন প্লাস্টিকের পণ্যের আড়ালে বিপুল পরিমাণ এই গাঁজা আনা হচ্ছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুঠিয়ার বানেশ^র এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, ‘গ্রেপ্তার করার কিছুদিনের মধ্যেই মাদক কারবারিরা জামিন পেয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এমনও দেখা গেছে যে ২৪০ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার মাদক ব্যবসায়ীরা জামিন পেয়ে আবার আমাদের হাতেই গ্রেপ্তার হয়েছে গাঁজাসহ। এটিকেই তারা পেশা হিসেবে নিয়েছে। প্রতিনিয়ত কৌশল পাল্টে তারা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরাও পিঁছু লেগে থাকছি তাদের ধরার জন্য। এ জন্য সাম্প্রতিক সময়ে মাদকদ্রব্য উদ্ধার বেড়েছে।’