স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে দুই কর্মকর্তার জন্য সরকারী কোয়ার্টার নির্মাণ করতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একটি পুকুর ভরাট করে ফেলেছে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ। লোকচক্ষুর আড়ালের ওই পুকুরটি ভরাট করে এখন সেখানে দোতলা ডুপ্লেক্স দুটি বাসভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পুকুর ভরাট ও দুটি ভবন নির্মাণ করতে ব্যয় করা হচ্ছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
অথচ গত বছরের আগস্টে রাজশাহী শহরের পুকুর-জলাশয় মাটিভরাট না করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিটের রায়ে এ নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আইনেও জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ। এসবের তোয়াক্কা না করে রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় পুকুর ভরাট করে দুই কর্মকর্তার জন্য বাসভবন নির্মাণ করছে সরকারী সংস্থা সওজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুজন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর জন্য কোয়ার্টার দুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। অথচ শালবাগানেই উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীদের জন্য আগে থেকেই সরকারী কোয়ার্টার রয়েছে। নিয়মে না থাকলেও এসব কোয়ার্টারে একজন গাড়িচালক এবং একজন কর্মচারীর জামাতা থাকেন। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীদের পরিবর্তে তাঁরা এখানে থাকার কারণে প্রতি বছর মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এখন উল্টো দুই কর্মকর্তার জন্য দুটি কোয়ার্টার নির্মাণ করতে ব্যয় করা হচ্ছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শালবাগান এলাকায় সওজের একটি অফিসের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রয়েছে আবাসিক এলাকা। এর উত্তর পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে মসজিদ, নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবন এবং গ্যারেজ। গ্যারেজের উত্তর-পূর্ব কোণে থাকা প্রায় ১০ কাঠা আয়তনের পুকুরটি ইতোমধ্যে বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এখন সেখানে কোয়ার্টার নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদারের শ্রমিকেরা। একই এলাকার মানিক ও রাসেল নামের দুজন ঠিকাদার এই কাজ করছেন।
দুপুরে ভরাট করা পুকুরের ওপরেই বসেছিলেন সওজের দুজন কর্মকর্তা। তারা জানান, দুই কর্মকর্তার জন্য আলাদা আলাদা দুটি ডুপ্লেক্স বাসভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। পুকুর ভরাট করার বিষয়ে জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বললেন, ‘রাজশাহী শহরে তো অসংখ্য পুকুর ছিল। এখন কয়টা আছে! সবই তো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এটা একটু নিচু জায়গা ছিল।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সওজের এক কর্মচারী জানান, কোয়ার্টার দুটি নির্মাণে বিপুল টাকা ব্যয় ধরা হলেও ভবনের জন্য পিলার করা হচ্ছে না। অল্প একটু মাটি খুঁড়ে ইট দিয়ে এর দেয়াল তোলা হচ্ছে। ভবন দুটি হবে ব্রিকসের পিলারে। শহরে যে কোন স্থাপনা নির্মাণের জন্য রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অনুমোদন প্রয়োজন হলেও সওজ এর কিছুই নেয়নি। পুকুর ভরাট করা হলেও নিয়ম মেনে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভূমির শ্রেণিও পরিবর্তন করেনি। নির্মাণ কাজও পছন্দের ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
আরডিএর অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য সওজ কোন প্ল্যান পাস করেছে বলে শুনিনি। কীভাবে ভবন নির্মাণ করছে সেটা খোঁজ নেওয়া হবে।’ সওজের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হাকিম বলেন, ‘কোয়ার্টার নির্মাণের জন্য আরডিএ থেকে প্ল্যান পাস করানো হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই।’ পুকুর ভরাটের কারণে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটাও আমি জানি না।’ তিনি জানান, দুটি কোয়ার্টার নির্মাণেই ব্যয় হচ্ছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
নগরীর বোয়ালিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন মিয়া বলেন, ‘আইনে পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ। সরকারী সংস্থা পুকুর ভরাট করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করলেও জেলা প্রশাসনে আবেদন করতে হবে। এ ধরনের কোন আবেদন সওজ করে থাকলে তদন্তের জন্য আমার কাছে আসতো। আমি কিছু জানি না। নায়েবকে পাঠিয়ে বিষয়টি দেখছি।’