স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কোন প্রভাব পড়েনি বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে। রোববার সকালে হরতাল শুরুর পর থেকে বিকাল পর্যন্ত নগরীতে বিএনপির কোন নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি। উল্টো হরতাল প্রতিহত করতে মাঠ দখল করে রাখে আওয়ামী লীগ।
হরতালের আগের রাতে রাজশাহীজুড়ে অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের ১২৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। এরমধ্যে রাজশাহী মহানগর পুলিশই (আরএমপি) গ্রেপ্তার করে ৭০ জনকে। অন্য ৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের কারণে হরতালের মাঠে থাকা যায়নি বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। তারপরও হরতাল সফল বলে দাবি তাদের।
তবে হরতালের দিন নগরীর মালোপাড়ায় তালাবদ্ধ দেখা গেছে বিএনপির দলীয় কার্যালয়। রাজশাহীতে হরতাল পালন বলতে বিকালে নগরীতে কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী একটি মিছিল বের করেন। এতে নেতৃত্ব দেন নগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশীদ মামুন। এর আগে সকালে পবার খড়খড়িতে একটি মিছিল হয়। হরতাল সমর্থকেরা বাঘা উপজেলায় একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয়। ছুটিতে এই প্রাইভেটকারে করে বাড়ি যাচ্ছিলেন এক পুলিশ সদস্য। নগরীর সিটি বাইপাস এলাকায় বিকালে সড়কে টায়ার পোড়ায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। পুলিশ আসার আগেই তারা পালিয়ে যায়। এর বাইরে কোথাও পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে রোববার সকাল থেকেই রাজশাহী ছিল স্বাভাবিক। দোকান-পাটও সব খোলা ছিল। মানুষ নিজ নিজ প্রয়োজনে রাস্তায় বের হয়েছেন। চলেছে রিকশা-অটোরিকশা। তবে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছিল বাসে। ফলে বাস চলেছে কম। রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেন, ‘আমরা হরতালের মাঝেও বাস চালিয়েছি। তবে সংখ্যায় কম। যাত্রীরা অনেকে আতঙ্কের কারণে বের হননি। ফলে বেশি বাস চালানো যায়নি।’
হরতালের দিন বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে না থাকলেও মানুষের জান-মালের ক্ষতি ঠেকাতে প্রস্তুত ছিল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা নগরীর বিনোদপুর, তালাইমারী, ভদ্রা, শালবাগান, আমচত্বর, সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, লক্ষ্মীপুর মোড়, কোর্ট স্টেশনসহ ১২টি পয়েন্টে অবস্থান নেন। দুপুরে তারা হরতালবিরোধী একটি মিছিলও করেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, ‘হরতালের নামে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ঠেকাতে আমরা প্রস্তুত ছিলাম। ফলে তারা মাঠে নামতে পারেনি। তাদের হরতাল সফল হয়নি। মানুষ হরতাল প্রত্যাখান করেছে। কোথাও হরতাল দেখিনি।’
হরতালের বিষয়ে কথা বলতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসার সঙ্গে কথা বলতে ফোন করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। রাজশাহী জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সমাপ্ত বলেন, ‘আমাদের সব নেতাদের গ্রেপ্তার করে নেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে ফেরার পথেও অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফলে কর্মীরা সেভাবে মাঠে নামতে পারেননি। এটাই বাস্তবতা। তবে সাধারণ মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে হরতাল পালন করেছে। আমাদের হরতাল সফল হয়েছে।’
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘বাঘায় একটা প্রাইভেটকার পোড়ানো ছাড়া জেলায় অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটেনি। গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় মামলা করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, হরতালে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে আগের রাতেই বিএনপি-জামায়াতের ৫৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে জেলার ৯টি থানা পুলিশ। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে নগর পুলিশের মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির হরতাল নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক ছিলাম। নাশকতার যারা পরিকল্পনা করেছিল, তাদের রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়। নগরীর বিভিন্ন থানা ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হরতাল চলাকালেও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পুলিশ রাখা হয়। ফলে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।