স্টাফ রিপোর্টার: অনেকটা চমক দিয়েই রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের নৌকার টিকিট ছিনিয়ে নিয়েছেন তরুণ রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। ফলে এখানে নৌকা থেকে ছিটকে গেছেন আওয়ামী লীগের তিনবারের এমপি প্রকৌশলী এনামুল হক। এরই সাথে পাল্টে যাচ্ছে বাগমারার রাজনীতির প্রেক্ষাপট।
দীর্ঘ ১৫ বছর যারা সাংসদ এনামুল হককে পাশে থেকে রাজনীতি করেছেন; বাগিয়ে নিয়েছেন দলের পদ-পদবি; নানা সুযোগ সুবিধা নিয়ে আঙ্গুল ফুলে গলাগাছ হয়েছেন একদিনের ব্যাবধানে তারা এমপির সঙ্গে ছেড়ে ভিড়ে গেছে আবুল কালামের পাশে। তারা বলছেন, আমার আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। দল যাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছে তার পাশেই আছি; থাকবো।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে এবার সাতজন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরা হলেন, টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী এনামুল হক, আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী, তাহেরপুর পৌরসভার তিনবারের মেয়র ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু তালেব, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল হোসেন, জাতীয়তাবাদি আন্দোলনের (বিএনএম) সাইফুল ইসলাম রায়হান, ন্যাশনাল পিপুলস পার্টির (এনপিপি) জিন্নাতুন ইসলাম জিন্না, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি ফ্রন্ট (বিএনএফ) এর প্রার্থী মতিউর রহমান।
আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার তিনবারের মেয়র ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও তিনি জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় বছর খানেক ধরে বাগমারার তিন প্রভাবশালী নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু, ইব্রাহীম হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা পিএম শফিকুল ইসলাম শফিকে সঙ্গে নিয়ে সাংসদ এনামুল হক বিরোধী বলায় গড়ে তুলেন। তারা দাবি তুলেন এনামুল হক ছাড়াও যে কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার। ফলে এবার দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের দুইবারের সভাপতি ও তিনবারের এমপি এনামুল হক।
মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর প্রথম এনামুল হকের সঙ্গ ছাড়েন তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ‘সিপাহশালা’ নামে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নরদাশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার আবুল। এমপি এনামুল তাকে রাজনীতির রুট লেবেন থেকে তুলে এনে আওয়ামী লীগের ও ইউপি চেয়ারম্যান বানিয়েছিলেন।
আবুলের সঙ্গে গিয়ে নৌকার প্রার্থীর পাশে ভিড়ে গেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন সুরুজসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও একে একে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দ যোগ দিয়েছেন নৌকার প্রার্থীর বলাইয়ে। ফলে নতুন প্রার্থী নিয়ে বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বাগমারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি।
স্বাধীনতার পর ১১টি সাধারণ নির্বাচনের মধ্যে এ আসন থেকে ৫ বার আওয়ামী লীগ, দুইবার জাতীয় পার্টি ও চারবার বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ১৯৭৩, ১৯৮৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ আসন থেকে। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে ১৯৮৮ ও ১৯৯১ এবং বিএনপি থেকে ১৯৭৯, ১৯৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারি), ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন।