স্টাফ রিপোর্টার: ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করা বরেন্দ্র এলাকায় পানির স্তর নিচে নামছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে নেওয়া হয়েছে নতুন উদ্যোগ। নদী ও বিভিন্ন জলাধার থেকে পানি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। তারা বলছে, সেচের নতুন এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ৩ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বছরে দু-তিনটি করে
ফসল চাষাবাদ হবে। বছরে উৎপাদিত হবে ২৭ হাজার ৯২০ টন ধান।
দেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত শুষ্ক। তাপমাত্রাও তুলনামূলক বেশি। শুষ্ক মৌসুমে এসব এলাকার ভূ-উপরিস্থ পানি কম থাকে। অন্যদিকে বর্ষাকালে এই এলাকার নদী গুলোয় পানি থাকে। এসব বরেন্দ্র এলাকায় নদীর পানি সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজে ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ‘বরেন্দ্র এলাকার খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প’নামের এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে এখন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গত বছরের অক্টোবরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। চলবে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, নাচোল, গোমস্তাপুর, শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলা; রাজশাহীর বাগমারা ও গোদাগাড়ী উপজেলা এবং নওগাঁর মহাদেবপুর—মোট আটটি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। মূলত এসব এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য উৎস হিসেবে ধরা হয়েছে পদ্মা, মহানন্দা, পুনর্ভবা, রানী ও বারনই নদী। এসব নদী থেকে পানি এনে জলাধারে পানি সংরক্ষণের জন্য ৩৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার খাল ও খাড়ি এবং একটি পুকুর ও দুটিবিল পুনঃখনন করা হচ্ছে। পানি আনা ও জমিতে সরবরাহের লক্ষ্যে ১৪৮ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ চলছে।
এ প্রসঙ্গে বিএমডি এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক নাজিরুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের আওতায় খালে পানি সংরক্ষণে ক্রস ড্যাম নির্মাণ করা হবে ১৩টি। নদীতে বসানো হবে ৪টি পন্টুন। মেরামত করা হবে আরও ২টি। স্থাপন করা হবে বিদ্যুৎ-চালিত ২৬টি লোলিফুট পাম্প (এলএলপি)। এসব পাম্পেরমাধ্যমে নদী থেকে পানিখালেআনাহবে। খাল থেকে ১৩২টি সৌরবিদ্যুৎ-চালিত লোলিফট পাম্পেরমাধ্যমে ৩ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে পানি সরবরাহ করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে শুরুতেই খালের পাড়ে ১ লাখ বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাগমারা উপজেলায় রানী নদী থেকে খালে পানি সরবরাহের জন্য ৮০০ মিটার এবং শিবগঞ্জ উপজেলায় মহানন্দা নদী থেকে খালে পানি সরবরাহের জন্য ১ হাজার ৫০০ মিটার পাইপ লাইন বসানো হয়েছে। এসব স্থানে ৫৫০ মিটার খাল খনন করে ৫ হাজার ফলদ ও বনজ বৃক্ষ রোপ ণকরা হয়েছে। এ ছাড়া বাগমারা, গোমস্তাপুর ও মহাদেবপুর উপজেলায় ১৩২টি সৌরবিদ্যুৎ-চালিত লোলিফট পাম্প স্থাপন কাজ চলছে। শিবগঞ্জ উপজেলায় রানী নদীতে একটি নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে। পুনর্ভবা নদীর কাজীগ্রাম এলাকায় স্থাপনের জন্য আরও একটি পন্টুন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
বিএমডিএর চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান বলেন, সরকার সেচ কাজে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারকে প্রাধান্য দিচ্ছে। সরকারি প্রাধান্যকে গুরুত্ব দিয়ে তা অর্জনের লক্ষ্যে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কেনিরুৎ সাহিতকরে ভূ-উপরিস্থ এবং বৃষ্টির পানি ব্যবহারেরও পর জোর দিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিএমডিএ। প্রকল্পের কাজ শেষে এ অঞ্চলের কৃষিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।