স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের এক কর্মীকে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিসে নিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চারঘাট উপজেলার সরদহ বাজারে এ ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় নাজির হোসেন (৩৯) নামের এই ব্যক্তিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
তার কপালে ছয়টি ও মাথায় দুটি সেলাই পড়েছে। আহত নাজির সরদহ ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের ওয়াজ শেখের ছেলে। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের কাঁচি প্রতীকে প্রচারণায় অংশ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।
এ সময় নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পে ঢুকিয়ে তাকে মারধর করা হয়। এ নিয়ে রাতেই আহতের ভাই উজির আলী বাদী হয়ে চারঘাট মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, নাজির আলী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের একজন কর্মী। তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধা থেকে রাত টা পর্যন্ত উপজেলার ট্রাফিক মোড় এলাকায় কাঁচি প্রতীকের প্রচারণা চালান।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রচারণা শেষে বাড়ি ফেরার পথে চারঘাট পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সরদহ বাজারে নৌকা প্রতীকের অফিসে সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে থামানো হয়। পরে সেখান থেকে তাকে ধরে তাদের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে কাঁচির ভোট না করার জন্য শাসানো হয়।
তারা নাজিরকে তাদের সাথে নৌকা পোস্টার নিয়ে ছবি তুলতে বলে। সেই প্রস্তাবে নাজির রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করা হয়। তাকে হাতুড়ি, রড ও চেয়ার দিয়ে পেটানো হয়। মাথায় উপরের অংশ কেটে দুটি সেলাই এবং হাতুড়ির আঘাতে কপালে ছয়টি সেলাই পড়েছে। এ ছাড়া শরীরেও নানা জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক বলেন, নাজিরকে নৌকার অফিসে নিয়ে গিয়ে প্রথমে বলা হয়-এই তোকে নিষেধ করেছি, কাঁচির রাহেনুলের ভোট করবি না। তারপরও তুই করছিস। তুই নৌকার ভোট কর। তখন নাজির বলছে, না, রাহেনুলের ভোট করবো, নৌকার ভোট করবো না। এরপরই তাকে বেধড়ক পেটানো হয়।
আমার ভোট করারটাই তার অপরাধ। ঘটনার পরই আমিসহ আমার নেতা-কর্মীরা হাসপাতালে ছুটে যাই। চিকিৎসক নাজিরকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। প্রস্তুত থাকতে বলেছেন, অবস্থা খারাপ হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হতে পারে।
মামলায় চারঘাট পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড নৌকা প্রতীকের কার্যালয়ের সভাপতি মো. শামীম সরকার, সরদহ ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আদিল, রাসেল সরকার, হাসান আলী, ফিরোজ আলী, ফয়সাল হোসেন ডন ও বাপ্পি আলীসহ মোট সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের নির্বাচনী এজেন্ট সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, কাঁচি প্রতীকের কয়েকজন কর্মী নৌকার অফিসে ঢুকে হট্টগোল করছিল।
তখন কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দুপক্ষের হাতাহাতি হয়। এতে একজন আহত হয়েছেন। আমার প্রার্থী কোনো সহিংসতাকে সমর্থন করেন না। কাজেই এ ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
এ ঘটনার পর রাতেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) সনাতন চক্রবর্তী, চারঘাট সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার প্রণব কুমার, চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান হাসপাতাল ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এরপর ভোর রাতে এজাহারের ৬ নম্বর আসামি ফয়সাল হোসেন ডন ও ৭ নম্বর আসামি বাপ্পি আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।