স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে জুতা মারার হুমকি দেওয়া যুবককে আগামী বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) স্বশরীরে আদালতে তলব করা হয়েছে। রোববার রাজশাহী-১ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান রাজশাহীর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয় আদালত) মো. আবু সাঈদ এই যুবককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তাঁর কার্যালয়ে তলব করেন।
কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে- অনুসন্ধান কমিটির গোচরীভূত হয়েছে যে, মাহাবুর রহমান মাহাম নামের এই ব্যক্তি শনিবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে তার ফেসবুক আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করেন।
এই ভিডিওতে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী শারমিন আক্তার নিপা ওরফে মাহিয়া মাহির নির্বাচনী প্রচারণা বাধাগ্রস্ত করার জন্য তার সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ও মান-সম্মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। এছাড়া ভবিষ্যতে প্রচার-প্রচারণা চালালে জুতাপেটা করাসহ বড় ধরনের ক্ষতি করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।
এটি নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। তাই কেন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা আগামী বুধবার মাহাবুর রহমান মাহামকে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত মাহাবুর রহমান মাহামের বাড়ি তানোর উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের কালনা পূর্বপাড়া গ্রামে। বাবার নাম মৃত ছদের আলী। তিনি বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের রাজশাহী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে বেড়ান।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাহাবুর রহমান মাহাম এলাকায় দুষ্টু প্রকৃতির ছেলে হিসেবে পরিচিত। থাকেন উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশীদ ময়নার কাছাকাছি। তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের গাড়ি ভাঙচুর মামলার আসামি তিনি। সে মামলা এখনও চলমান।
শনিবার রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক ভিডিওতে মাহিকে জুতা দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনার মতো মাহিয়া মাহিকে, এই যে দেখছেন এই জুতা?
এই জুতা দিয়ে, একদম জুতা দিয়ে পিটানো উচিত আপনার মতো মেয়েকে। কারণ, আপনি এমন একটা মেয়ে আপনার মা এই চলচ্চিত্র জগতে যাওয়ার আগে আপনাকে নিষেধ করেছে।’ যদিও কিছুক্ষণ পর তিনি সেই ভিডিও ফেসবুক আইডি থেকে মুছে ফেলেন।
আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহিয়া মাহি গত কয়েকদিন ধরে নিজের প্রচার-প্রচারণায় এ আসনের নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে কথা বলছেন।
ফারুক চৌধুরীর নানা বিতর্ক সামনে এনে তিনি এবার তাঁকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। আর এ কারণেই ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে মাহিকে হুমকি দেন মাহাম।
এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে থানায় গিয়ে মাহামের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন মাহি।
মাহাম ভিডিওতে মাহিয়া মাহি সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। কারা সিনেমায় যায়, সেই প্রশ্নও তোলেন। বলেন, ‘আপনার মতো মাহিয়া মাহির দ্বারা তানোর-গোদাগাড়ীর উন্নয়ন তো দূরের কথা; হাজারো ছেলে নষ্ট হবে। আপনার মতো দুশ্চরিত্রা মহিলা থাকলে।
আপনার মতো বেয়াদব মহিলাকে আমি এখনও বলছি, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে আর একটা যদি বাজে মন্তব্য কখনও করেন, আপনাকে জুতা দিয়ে পিটানো উচিত। আপনি ওমর ফারুক চৌধুরীর বাসার কাজের মেয়ের যোগ্য না।’
যোগাযোগ করা হলে মাহাম বলেন, ‘ভিডিও ছাড়ার পর রাজশাহী থেকে কয়েকজন সাংবাদিক ফোন করেছিলেন। তারা নানা কথা বলছেন। সেই কারণে ভিডিও ডিলিট করে দিয়েছি।’
মাহাম জানান, তিনি নৌকার সমর্থক। তবে এখন তার কোন দলীয় পদ নেই। এরপরই মাহাম মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ আসনের নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ভিডিওটি আমি দেখেছি। অভিযোগ পেলে মাহামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহিম বলেন, ‘মাহির পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্ত শুরু করব। এরপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’