অনলাইন ডেস্ক: গরিবের কোকেন নামে খ্যাত ক্যাপ্টাগন এক ধরনের মানসিক উত্তেজক বা সাইকোস্টিমুল্যান্ট মাদক। ইউরোপে ক্রমান্বয়ে এই মাদক বেশ সহজলভ্য হয়ে উঠছে। কিন্তু কোথা থেকে আসে এই মাদক?
জার্মান শুল্ক তদন্তকারীরা আখেন শহরে ক্যাপ্টাগনের এক বড়সড় চালান জব্দ করেছেন। ৩০০ কেজির এই চালানের বাজারমূল্য ৬০ মিলিয়ন ইউরো বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন অবধি এত ক্যাপ্টাগন একসঙ্গে জব্দ করার ঘটনা জার্মানিতে এটাই প্রথম।
ক্যাপ্টাগন মূলত ‘‘গরিব মানুষের কোকেইন’’ হিসেবে পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার তরুণদের মধ্যে এই মাদকের চল রয়েছে।
জার্মানিতে বিপুল পরিমাণে ক্যাপ্টাগন ধরা পড়ার পর মনে করা হচ্ছে যে ইউরোপে আগে যতটা ধারণা করা হয়েছিল তারচেয়ে বেশি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে এই মাদক।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ১৯৮৬ সালে ক্যাপ্টাগন নিষিদ্ধ করা হয় এবং ওষুধের বাজার থেকে সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়। তাসত্ত্বেও চলতি শতকের শুরুর দিকে এটির অবৈধ সংস্করণ পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ছড়াতে শুরু করে।
• ক্যাপ্টাগন কী?
ক্যাপ্টাগন হচ্ছে একটি সিন্থেটিক মাদক; যা গত শতকের ষাট এবং সত্তরের দশকে জার্মানিতে উৎপাদন করা হতো। মনোযোগের ঘাটতি সংক্রান্ত দুর্বলতা দূর করতে এটি ব্যবহার করা হতো।
মধ্যপ্রাচ্যের তরুণ সমাজের মধ্যে মূলত পার্টি ড্রাগ হিসেবে ক্যাপ্টাগন বেশ জনপ্রিয়। সিরিয়া সংঘাতে অংশ নেওয়া যোদ্ধারাও যুদ্ধক্ষেত্রে পারফরমেন্স বাড়াতে এবং ক্লান্তি দূর করতে এই মাদক ব্যবহার করেন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।
ক্যাপ্টাগন পিলে সিন্থেটিক অ্যামফিটামিন ফেনিথিলাইন, ক্যাফেইন এবং অন্যান্য উদ্দীপক উপাদান থাকে। মানবদেহে ফেনিথিলাইন দুটি অণুতে বিপাকিত হয়। এগুলো হচ্ছে অ্যামফিটামিন এবং থিওফাইলিন। দুটিই উদ্দীপক।
• ক্যাপ্টাগন কি আসক্তি সৃষ্টি করে?
স্নায়ুতন্ত্রের ওপর ক্যাপ্টাগনের প্রভাব অ্যামফিটামিনের মতোই। সাইকোস্টিমুল্যান্ট হিসেবে ক্যাপ্টাগন একজন মানুষের উচ্ছ্বাস এবং জেগে থাকার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি তার শারীরিক এবং মানসিক কর্মক্ষমতাও সাময়িক সময়ের জন্য বেড়ে যায়।
তবে এটির ব্যাপক ব্যবহার একজন মানুষের বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে এবং হৃদযন্ত্র ও রক্ত চলাচল সংক্রান্ত নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে। এটি আসক্তিও সৃষ্টি করতে পারে।
এক্ষেত্রে একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে অবৈধভাবে এসব পিল তৈরির সময় বেশিমাত্রায় ফেনিথিলাইন ব্যবহার করা হয়। অপেশাদার ব্যক্তিরা যেনতেনভাবে এই পিল তৈরি করায় সেগুলোতে বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান থাকার আশঙ্কা বেশি থাকে।
• ক্যাপ্টাগন কোথায় তৈরি করা হয়?
গত এক দশকে সিরিয়া হয়ে উঠেছে এই মাদক উৎপাদন এবং রপ্তানির মূলকেন্দ্র। যুক্তরাজ্য সরকারের এক বিবৃতিতে ধারণা করা হয়েছে, বিশ্বের ৮০ শতাংশ ক্যাপ্টাগনই সিরিয়ায় উৎপাদন হচ্ছে।
২০১১ সালে আরব বসন্ত প্রতিবাদের পর সিরিয়ায় ক্যাপ্টাগনের ব্যবহার ব্যাপক আকারে বাড়তে থাকে। বিবিসির এক অনুসন্ধানে কীভাবে সিরিয়ার ড্রাগ ইন্ডাস্ট্রি এই মাদক উৎপাদন এবং পাচারে সহায়তা করছে তা উঠে এসেছে।
তবে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ তার সরকার সংঘবদ্ধ উদ্যোগের মাধ্যমে এই মাদক থেকে মুনাফা অর্জনের কথা অস্বীকার করেছেন।
বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অবশ্য জানাচ্ছে, গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়ার ওপর আরোপিত ব্যাপক আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় দেশটির সরকার ক্যাপ্টাগন ব্যবহার করেছে।
২০২১ সালে দেশটিতে ক্যাপ্টাগন মাদক বাণিজ্যের পরিমাণ ৫.৩৫ বিলিয়ন ইউরো বলে ধারণা করা হয়। মূলত সিরিয়া থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এই মাদক।