স্টাফ রিপোর্টার: রেলওয়ের স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ ভাতের হোটেল ছিল বুলু বেওয়ার (৬৫)। সেই স্টেশনেই ট্রেনে দুই পা কাটা পড়েছে তার! তবে অক্ষত অবস্থায় বেঁচে ফিরেছেন বুলু বেওয়ার বুকে থাকা চার বছরের নাতনি রাবেয়া খাতুন।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। বুলু বেওয়া আড়ানী নুরনগর গ্রামের মৃত রব্বেল আলীর স্ত্রী। রব্বেল আলী স্টেশনে কুলির কাজ করতেন। প্রায় ২০ বছর আগে তিনি মারা যাওয়ার পর স্টেশনে ভাতের হোটেল দেন বুলু।
স্থানীয়রা জানান, বুলু বেওয়া রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলস্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ হোটেলে ভাত বিক্রি করেন। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রেললাইন পার হয়ে নিজের দোকানে আসছিলেন। তিনি পার হচ্ছিলেন স্টেশনের তিন নম্বর লাইন দিয়ে। এই লাইন দিয়ে সাধারণত সকালে ট্রেন যায় না। শনিবার এর ব্যতিক্রম হয়েছে।
এ দিন ঈশ্বরদী থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি কমিউটর ট্রেনকে এই লাইনে ঢোকানো হয়। ট্রেনটি রাজশাহী যাচ্ছিল। যাওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় নাতনিকে বুকে নিয়ে নিচে পড়ে যান বুলু। এতে তার দুটি পা উরু থেকে কাটা পড়ে। তবে ট্রেন যাওয়ার পর দেখা যায়, তার নাতনি অক্ষত রয়েছে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় বুলুকে উদ্ধার করে পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার দুটি পায়েই অস্ত্রোপচার করা হয়।
জানা গেছে, বুলু বেওয়ার ছোট ছেলে রুবেল আলী শুক্রবারই বিয়ে করেছেন। তার বাড়িতে ছেলের বৌভাতের আয়োজন ছিল আজ। এ দিন বুলু বেওয়ার ভাতের হোটেল বন্ধ ছিল। তবে অন্য কোন কাজে তিনি স্টেশনে এসেছিলেন। তিন নম্বর লাইন দিয়ে ট্রেন যায় না বলে নিশ্চিন্তেই পার হচ্ছিলেন তিনি। তবে আজ এ লাইনে ট্রেন আসে। এতে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বুলুর ছেলে জুয়েল রানা বলেন, তার ভাই সোহেল রানার মেয়ে রাবেয়াকে নিয়ে লাইন পার হচ্ছিলেন মা বুলু। ট্রেনের ধাক্কায় তার মা পড়ে যান। তখনও তার ভাতিজি বুলুর কোলে ছিল। দুর্ঘটনায় তার মায়ের কোমরের নিচ থেকে দুই পা কেটে পড়েছে। তবে রাবেয়া অক্ষত আছে।
আড়ানী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মোশাররফ হোসেন বলেন, রাজশাহী-ঢাকা রুটের বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন আজ রাজশাহী থেকে ছেড়ে যেতে দেরি করে। এ কারণে তাদের বলা হয়, রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে আড়ানিতে রেখে বনলতা এক্সপ্রেসকে যেন আগে যেতে দেওয়া হয়। একই সময়ে ঈশ্বরদী থেকে কমিউটার ট্রেনটি আড়ানি স্টেশনে পৌঁছাবে। এই জন্য সিল্কসিটিকে এক নম্বরে রাখা হয়। বনলতার জন্য দুই নম্বর লাইন ফাঁকা রাখা হয়। আর কমিউটারকে তিন নম্বরে নেওয়া হয়।
তিনি জানান, সাধারণত তিন নম্বর লাইনে এই ট্রেন যায় না। এই জন্য সকালে কয়েক দফা মাইকে বলা হয়েছে যে কমিউটার ট্রেন তিন নম্বর লাইনে ঢুকছে। এরপরও বুলু ঝুঁকি নিয়ে লাইন পারাপার হচ্ছিলেন। হয়ত তিনি মাইকিং বুঝতে পারেননি। তাই মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার শিকার হন।