অনলাইন ডেস্ক: ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মো. মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আজ শুক্রবার থেকে মাঠে গড়াচ্ছে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। এটা দ্বিতীয় আসর। প্রথম আসরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। এবারও ঘরের মাঠে টুর্নামেন্ট বিধায় শিরোপা ধরে রাখতে মরিয়া ও আশাবাদী বাংলাদেশের দল। তবে টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া বাকি তিন দল ভারত, নেপাল ও ভুটানকেও সমীহ করছে তারা।
সেই সঙ্গে এই তিনটি দেশও বাংলাদেশের সুরেই কথা বলেছে।নতুন বছরে বাংলাদেশের নারী ফুটবলে প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। চার দলের এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে লিগ পদ্ধতিতে। শীর্ষ দুই দল খেলবে ফাইনালে। ৮ ফেব্রুয়ারি হবে ফাইনাল। টুর্নামেন্টের প্রথমদিনে আজ দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৩টায় প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে ভারত ও ভুটান। দ্বিতীয় ম্যাচে সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল।
টুর্নামেন্ট উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বাফুফে ভবনে। এতে উপস্থিত ছিলেন অংশগ্রহণকারী চার দলের কোচ ও অধিনায়করা। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ সাইফুল বারী টিটু বলেন, ‘আমার এই দলের খেলোয়াড়দের বয়স কম হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ক্ষিপ্রতা অনেক বেশি। ব্যক্তিগত স্কিলও ভালো। কিন্তু পরিপক্বতাটা হয়তো একটু কম। আমাদের লক্ষ্য পারফরম্যান্সে পরিপক্বতা দেখানো। এটাই ধরে রাখতে হবে। যে দল মাঠে এই ব্যাপারটি বেশি দেখাতে পারবে, শিরোপা জিতবে তারাই।’
নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফাইনালে ‘এক পা’ দিয়ে রাখতে চান কোচ টিটু। তারপরের ম্যাচগুলো এগুতে চান ধাপে ধাপে। তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাচের অবস্থা বুঝে কৌশল নির্ধারণে কোচের ভূমিকা থাকে। হয়তো আমার অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগতে পারে। তবে কাজটা মূলত ফুটবলারদের। তাদের খেলার ওপরই নির্ভর করে কোচ সফল হবেন কিনা।’ দলের খেলোয়াড়দের প্রসঙ্গে টিটুর ভাষ্য, ‘দলের কেউই আগে একসঙ্গে খেলেনি। এবারই প্রথম খেলবে। এটাকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছি।’
২০২১ আসরের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন গোলাম রব্বানী ছোটন। এবার তার জায়গায় এসেছেন টিটু। এজন্য কতটা চ্যালেঞ্জ অনুভব করছেন? ‘চ্যালেঞ্জের কিছু নেই। আমরা এ দেশের নাগরিক। কিছু দেওয়া দরকার। আমরা রোহিঙ্গা নই, দেশ আমাদের থাকতে দিয়েছে, এখানেই আমাদের জন্ম। দেশকে আমাদের কিছু দিতে হবে। এটা খেলোয়াড়দের মনে রাখলেই হবে। ’
বাংলাদেশ অধিনায়ক আফইদা খন্দকার প্রাপ্তি বলেন, ‘প্রথম ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ। নেপালের বিপক্ষে জিতে আমরা ফাইনালের পথে থাকতে চাই। সেই লক্ষ্যেই মাঠে খেলব। নেপালের বিপক্ষে এর আগেও অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছি আমরা। এর আগে তাদের বিপক্ষে যেভাবে খেলে এসেছি, আশাকরি এবারও সেভাবেই খেলতে পারব।’ নেপালের কোচ ও অধিনায়ক বলেছেন, এবার প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় পাননি তারা।
তারপরও এই আসরে ভালো করতে আশাবাদী তারা। নেপাল কোচ বাল গোপাল সাহু বলেন, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে আমাদের প্রথম ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা স্বাগতিক, শক্তিশালী এবং বর্তমান চ্যাম্পিয়নও বটে। ম্যাচটি আমাদের জন্য কঠিন হবে।’ নেপাল অধিনায়ক সারাহ বজ্রছায়া বলেন, ‘টুর্নামেন্টের সব দলই সমান শক্তিশালী ও শিরোপার দাবিদার। ফলে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে আসরটি।’
বাংলাদেশই একমাত্র দল যে দলে সিনিয়র জাতীয় দলের খেলোয়াড় (৫ জন) রয়েছেন। তবে ভারত এগিয়ে অন্য জায়গায়। তাদের অধিনায়ক নিতু লিন্ডা একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ নারী বিশ্বকাপে খেলেছেন।
বাংলাদেশ দল উঠেছে পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে। জাতীয় দলের পরে এই প্রথম কোন বয়সভিত্তিক দল দেশের ভেতর টুর্নামেন্টে অংশ নিতে এরকম হোটেলে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনিতে সাফ কিংবা ঘরের মাঠে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বরাবরই বাংলাদেশ নারী দল থাকে বাফুফের ক্যাম্পে।
বাফুফে কর্তারা সবসময় বলতেন, ‘নারী ফুটবলাররা হোটেলের পরিবর্তে ভবনেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।’ সেই ভবন ছেড়ে এখন পাঁচ তারকা হোটেলে থাকা নিয়ে আফঈদা বললেন, ‘আমরা এখানেও ভালো রয়েছি। সব দল একসঙ্গে রয়েছি। সুইমিংপুলে আড্ডা দিয়েছি গতকাল।’
চার দলের কোচদের মধ্যে বাংলাদেশ কোচ টিটুই বেশি অভিজ্ঞ। তিনি জাতীয় দলে খেলেছেন। খেলা ছাড়ার পর থেকেই কোচ হন। ক্লাবে ও জাতীয় দলে কোচিং করিয়েছেন। তিনি জাতীয় পুরুষ ফুটবল দলের কোচ ছিলেন একাধিকবার। নারী ফুটবলেও সিনিয়র দলের কোচ ছিলেন। এবার দায়িত্ব জুনিয়র টুর্নামেন্টে।
বাংলাদেশ দল ॥ স্বর্ণা রানী ম-ল, জুঁই আক্তার, মেরি আইরিশ, ত্রিপুরা নরভি, আফঈদা খন্দকার প্রান্তি (অধিনায়ক), ইতি খাতুন, সুরমা জান্নাত, জয়নব বিবি রিতা, রুমা আক্তার, নাদিয়া আক্তার জুঁথি, রিতু আক্তার, স্বপ্না রানী (সহ-অধিনায়ক), ঐশী খাতুন, নুসরাত জাহান মিতু, কানন রানী বাহাদুর, মুনকি আক্তার, বন্যা খাতুন, লুৎফর আক্তার লিমা, পূজা দাস, সাগরিকা, তৃষ্ণা রানী, উমেহলা মারমা, সুলতানা আক্তার, নবীরণ খাতুন।