স্টাফ রিপোর্টার: মুখরোচক প্রচার-প্রচারণায় দুই চিকিৎসক, নেই কোন অনুমোদন, এমনকি প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সটিও হালনাগাদ নেই। আয়ুর্বেদ, হারবাল, ইউনিয়ানী ও হোমিও প্যাথিক ডিগ্রীর পাশাপাশি বিউটিশিয়ান ডিগ্রী নিয়ে নামের আগে ডাঃ ব্যবহার করে সবধরনের জটিল রোগের চিকিৎসা করছেন দুইজন চিকিৎসক।
নগরীর ঘোষপাড়া মোড়ে অবস্থিত লাইফ কেয়ার মেডিকো নামের একটি ইউনিয়ানী আয়ুর্বেদ ও হারবাল চিকিৎসা করা হচ্ছে। ডিস সংযোগে জটিল ও সর্ব রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয় উল্লেখ করে মুখরোচক প্রচারণায় মত্ত এই প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতিষ্ঠানের বাইরের সাইনবোর্ডে লাইফ কেয়ার মেডিকো লিখা থাকলেও ভিতরে ইবনে সিনা লাইফ কেয়ার মেডিকো লিখা।
বিজ্ঞাপনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কথা উল্লেখ থাকলেও প্রকৃত অর্থে একজন ইউনিয়ানী চিকিৎসক ও একজন মহিলা হোমিও চিকিৎসক ও বিউটিশিয়ান এই প্রতিষ্ঠানে রুগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন । তারা দুজনেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলে দাবি করেন প্রতিষ্ঠানটির রিসিপশনিস্ট। এমনকি চম্পা আখতারই ভালো চিকিৎসা করে এবং তার রুগী বেশি বলে প্রতিবেদককে জানান এই প্রতিষ্ঠানের রিসিপশনিস্ট।
হাইকোর্টের আদেশ মতে এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রীধারী ছাড়া অন্য কেউ নামের আগে ডা.( ডাক্তার) শব্দ লিখতে পারবে না। সেখানে হৃদয় ইসলাম ও চম্পা আখতার নামের আগে ডাক্তার লিখে দিব্যি চিকিৎসা দিচ্ছে। এবিষয়ে হৃদয় ইসলাম বলেন আমি আমার প্রেসক্রিপশন প্যাডে ডাক্তার শব্দ ব্যবহার করিনা চিকিৎসক শব্দ এবং ব্রাকেটে হাকিম শব্দ ব্যবহার করি। অথচ হাকিম শব্দটি দিয়ে বিচারককে বোঝায়।
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সাইডে তাদের নিজস্ব পেজে হৃদয় ইসলাম কে ইবনে সিনা লাইফ কেয়ার মেডিকো’র চেয়ারম্যান পরিচয় দিতে দেখা যায়। অথচ ইবনে সিনার কোন ধরনের ইউনিয়নী ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতাল রাজশাহীতে নাই। ইবনে সিনা নামের বিষয় নিয়ে তিনি বলেন “ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে আমি ইবনে সিনা নামটা ব্যবহার করবো না। তবে অফিসিয়াল পেজে থেকে নামটা সংশোধন করতে সময় লাগবে”।
ছোট একটাই চেম্বারে হৃদয় ইসলাম ও চম্পা আখতার রুগী দেখেন, চেম্বারের ভিতরে টেবিলের পাশেই রুগীর জন্য একটি টেবিল রাখা আছে। একটাই টেবিলে বিভিন্ন রোগের রুগীদের শুইয়ে পর্যবেক্ষন করা হয়। এমনকি কাপ থেরাপি দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় ঐ একই টেবিল। অনুসন্ধানে জানা যায় প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালে চালু করলেও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের হালনাগাদ কোন ট্রেড লাইসেন্সও নাই।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স শাখায় যোগাযোগ করলে তারা বলেন, “প্রতিষ্ঠানটিকে বহুবার বলার পরেও ট্রেড লাইসেন্স করেনি, তবে কয়েকদিন পূর্বে প্রতিষ্ঠানের মালিক এসেছিলেন নতুন করে ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য অথচ পূর্বে তার ট্রেড লাইসেন্স করা আছে। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি পুরাতন তাই নতুন করে ট্রেড লাইসেন্স করা যাবে না”।
নামের পূর্বে ডাক্তার ও বিউটিশিয়ান লেখার বিষয়ে চম্পা আখতার জানান তিনি হোমিও ডাক্তার ও বিউটিশিয়ান। রাজশাহীর আরডিএ মার্কেটে তার নিজের পার্লার আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় লোকজন জানান, এই প্রতিষ্ঠানটির নাম দেখে বোঝা যায় না এটি কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান এখানে আয়ুর্বেদ, হারবাল বা ইউনিয়ানী চিকিৎসা হয় নাকি এলোপ্যাথিক ( মেডিসিন) চিকিৎসা হয় তা বুঝতে পারিনা। প্রতিষ্ঠানের উচিত সাইনবোর্ডে সুনির্দিষ্ট করে কি ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয় তা লিখা।
লাইফ কেয়ার মেডিকো প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে প্রচার প্রচারণা করছে এই মুখরোচক প্রচারের সাথে প্রতিষ্ঠানের ভিতরের অবস্থার আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
এই বিষয়ে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডাঃ আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সময়ের কথা’কে বলেন, ” আমরা চিকিৎসা সেবার মান বজায় রাখতে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করছি এবং অনুমোদন বিহীন প্রতিষ্ঠানসহ যে সকল প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম আছে সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি, এই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আমরা আইনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো”।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ আনোয়ারুল কাবীরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে “তিনি এই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অবগত নন বলে জানান”।