স্টাফ রিপোর্টার : মাদকের ভয়াবহ ছোবলে জর্জরিত রাজশাহী মহানগর রাজপাড়া থানা এলাকার আইডি বাগানপাড়া। বছরের বারো মাসই ঘটা করেই অভিযান চালায় পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। বগুড়া এপিবিএনের সদস্যরাও রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে চৌকি ফেলে তল্লাশি করছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে রাজশাহীতে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার হয়েছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিটা ঠিক তার উল্টো। আইডি বাগানপাড়ায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে ওই এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা। মাহাবুলের স্ত্রী বুলবুলি ও আকুলের ছেলে জনের নেতৃত্বে এ সিন্ডিকেটের ১০ থেকে ১৫ জন মাদক কারবারি রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদক সেবীরা প্রতিদিন ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, ট্যপান্টা টেবলেটসহ বিভিন্ন মাদক কিনতে আসছে ওই মাদক বিক্রির স্পটে ।
জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগের একটি তালিকাকে পুঁজি করেই বিভিন্ন সংস্থা এসব অভিযান পরিচালনা করায় ২০ বছরে মাদক চোরাচালানে যুক্ত নতুন নতুন মাদক ব্যবসায়ীরা সবার চোখের আড়ালে থেকে যাচ্ছে। আবার বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের নাম বাদ দিয়ে তালিকা মাঝে মাঝে হালনাগাদ করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে চারটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এসব অভিযান করা হয়ে থাকে। অভিযানের অন্যতম উদ্দেশ্যই থাকে মাদক ব্যবসায়ীদের জানান দিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ইঙ্গিত করা। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল এসব অভিযানে আটক বা জব্দ হওয়া হেরোইন ইয়াবা ও ফেনসিডিল আটকের পর গায়েব করে দিয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া। তৃতীয় উদ্দেশ্য হল নকল হেরোইন, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের বোতলে পানি ভরে নকল মাদক দিয়ে মামলা দেখানো যাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ জনসাধারণ মনে করতে পারে মাদকবিরোধী অভিযান সফল হচ্ছে। চতুর্থ উদ্দেশ্য হল আটক বা জব্দ মাদকের সঙ্গে আটক ব্যক্তির (অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাহক বা কামলা) স্বীকারোক্তির কথা বলে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের ফোন করে জানানো যে আটক ব্যক্তি জানিয়েছে যে সে আটক মালের মালিক। মালের মালিক হিসেবে তাকে পলাতক আসামি করা হবে। এক্ষেত্রে নাম বাদ দেয়ার জন্য হাঁকা হয় বিপুল অঙ্কের টাকা। টাকা না দিলে পলাতক আসামি করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বড় মাদক ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে পুলিশের সঙ্গে সমঝোতা করে।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, একজন নারী হাতে ব্যাগে করে হেরোইন দিচ্ছে মাদক সেবনকারিদের, আরেক নারী বসে থেকে টাকা নিচ্ছে ক্রেতাদের কাছে থেকে। এ ভাবে দিনরাত ২৪ ঘন্টা আইডিবাগান পাড়া ও রেল লাইনের ধারে মাদক ব্যবসা চলছে। বাড়ির সামনেই এ যেন মাদকের হাট বসেছে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, রাজশাহী আরএমপি রাজপাড়া থানার লক্ষীপুর আইডি বাগানপাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত মাদক ব্যবসা করলেও জন ও বুলুবলি মাঝেমধ্যে গ্রেপ্তার হলে ও পুনরায় জামিনে এসে প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা চালায়. একাধিক সূত্রে জানা যায়, বুলবুলি ও জন স্থানীয় পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সাথে রয়েছে তাদের গভীর সখ্যতা. সিনিয়র কর্মকর্তারা অভিযান চালানোর নির্দেশ দিলেও অভিযানের আগেই জেনে পালিয়ে যায় তারা.
এসব মাদক কারবারিরা হলো, আইডি বাগানপাড়া রেল লাইনের ধারে জনের স্ত্রী মোছা সাইদা বেগম, সাজ্জাদের মেয়ে পিংকি, সম্রাটের স্ত্রী জরিনা বেগম ও তার নাতনি বন্যা, হুকি, খুকি, এমরান, লক্ষিপুর বাঁকির মোড় ডোমপাড়া এলাকার সেলিমের ছেলে সম্রাট, আইডি বাগানপাড়া রেল লাইন ধার বজলুর মেয়ে লাকি এবং ফেলকিসহ কিছু নারী ও পুরুষ। এরা বর্তমানে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মাদক মামলাও। তবে দীর্ঘদিন যাবত ওই এলাকায় পুলিশের জোরালো অভিযান না থাকায় ও মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার না করায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, লক্ষিপুর আইডি বাগানপাড়া থেকে প্রতিদিন চিহ্নিত মাদক কারবারিদের কাছে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল, ট্যপান্টা টেবলেট রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে যুবকরা এসে প্রকাশ্যে ক্রয় করে নিয়ে যায়। দিন রাত ২৪ ঘন্টা মাদক কারবারিরা সক্রিয় ভাবে মাদক বিক্রি করে। এলাকা বাসী তাদের কার্যকলাপে প্রতিবাদ করলে পড়তে হয় মাদক কারবারিদের হামলা, মামলাসহ বিভিন্ন হুমকির মুখে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করলেই উল্টা মাদক কারবারিরা হুমকি দিয়ে থাকে যে, বেশি কথা বলে উল্টো মাদক দিয়ে ফাসিয়ে দিবে । পুলিশ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন সহ সকলকে ম্যানেজ করে ব্যবসা করে বলে হুমকি প্রদান করে মাদক সিন্ডিকেট এর হোতারা। মাদক ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তাদের মাদক বিক্রির কারনে মাদক আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে এলাকার যুবকরা। দ্রুত এসব মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে যুবসমাজ শেষ হয়ে যাবে।
এ বিষয় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যবহ রয়েছে। তবে আইডি বাগানপাড়া মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।