• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • somoyerkotha24news@gmail.com
  • +880-1727-202675

গাইবান্ধায় নারী হাজতিকে নির্যাতনের ঘটনায় দুই কারারক্ষীকে বদলি

প্রকাশ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১১:৫৪

গাইবান্ধায় নারী হাজতিকে নির্যাতনের ঘটনায় দুই কারারক্ষীকে বদলি

গাইবান্ধায় নারী হাজতিকে নির্যাতনের ঘটনায় দুই কারারক্ষীকে বদলি
অনলাইন ডেস্ক : গাইবান্ধা জেলা কারাগারে নারী হাজতিকে বিবস্ত্র করে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামসহ দুই কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে তাদেরকে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাদেরকে বদলি করা হয়। বদলি হওয়া অপর কারারক্ষীর নাম সাবানা খাতুন। প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামকে দিনাজপুর কারাগার এবং নারী কারারক্ষী সাবানা খাতুনকে ঠাঁকুরগাও কারাগারে বদলি করা হয়েছে।

জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভেতরে কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে মেঘনা খাতুন নামে এক নারী কয়েদির অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় মোর্শেদা খাতুন সীমা (৩৪) নামে এক নারী হাজতিকে বিবস্ত্র করে, হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করেন অভিযুক্ত দুই কারারক্ষীসহ অন্যরা। শুধু তাই নয়, নারী হাজতি সীমাকে কারাগারের নারী-পুরুষ উভয়ই মিলে বিবস্ত্র করে স্পর্শকাতর স্থানে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এমনকি কামড় দিয়ে ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে শরীরের গোশত।

এখানেই শেষ নয়, ঘটনা গোপন রাখতে দেখানো হয় প্রাণনাশসহ সম্ভ্রমহানির হুমকিও। অন্যথায় হত্যা করে হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়ার আল্টিমেটামও দেয় সুবেদারসহ অভিযুক্তরা। এ ঘটনা তুলে ধরে অসুস্থ ওই নারী হাজতির উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা, জীবন ও সম্ভ্রম রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত ১৬ এপ্রিল গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী হাজতির মা করিমন নেছা।

আরও পড়ুনঃ  বড়াইগ্রামে যুবককে তুলে নিয়ে চোখ উৎপাটন ও পায়ের রগ কর্তন, আটক ১

জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা প্রায় ৫ বছর যাবৎ গাইবান্ধা জেলা কারাগারে আবদ্ধ রয়েছেন। কারাগারে অবস্থানকালে কিছু দিন পূর্বে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম এবং নারী কয়েদি মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলেন সীমা। এতেই সুবেদার আশরাফুল ও কয়েদি মেঘলা খাতুন সীমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা প্রতিনিয়ত ঘটনার বিষয়ে কাউকে বললে কারাগারের ভেতরেই সীমাকে খুন-জখমে হত্যা করে আত্মহত্যা কিংবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দেখানো হবে বলে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিতে থাকে। হাজতি সীমা খাতুন বারবার তাদেরকে আশরাফুল-মেঘলা) ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু বলবে না মর্মে জানানোর পরও সুবেদার আশরাফুল ও মেঘলা খাতুন আতঙ্কিত হয়ে কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।

একপর্যায়ে সুবেদার আশরাফুল সীমাকে জিম্মি করতে বিভিন্ন সময়ে কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্তসহ হাত এবং পরনের কাপড় ধরে টানা-হেঁচড়া করেন। পরে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দিয়েও মনোবাসনা পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়ে সুবেদার আশরাফুলসহ তার সহযোগীরা সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে নেন। অভিযুক্তরা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার নষ্ট ভেঙে দেয়।

আরও পড়ুনঃ  দলীয় নয়, অপরাধ বিবেচনায় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এত কিছুর পর যখন সীমা এসব ঘটনা জেল সুপারকে জানাবেন বলে জানান তখন সুবেদার আশরাফুল প্রকাশ্যে তাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করেন। গত ২০ মার্চ দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে নারী কয়েদী মেঘলা খাতুন, রেহেনা, আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা পরিকল্পিতভাবে জেলা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভেতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে অতর্কিত সীমার মাথায়, কোমড়ে, বুকে, পিঠে, দুই পায়ের হাঁটুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি মারপিট করতে থাকেন। মেঘলা ভুক্তভোগী সীমার ডান হাতে কামড় দিয়ে মাংস ছিঁড়ে নেয়। শুধু তাই নয়, সুবেদার আশরাফুল, সিআইডির আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভিতরে প্রবেশ করে সীমাকে টেনে-হেঁচড়ে বের করে মহিলা ইউনিটের বারান্দা থেকে সেলের ভেতরে নিয়ে দুই হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ও দুই পা রশি দিয়ে বেঁধে বিবস্ত্র করে লাঠি দিয়ে শরীরের স্পর্শকাতর স্থান (দুই উরু), পায়ের পাতায় পেটাতে থাকেন। এ সময় নির্যাতনকারীরা এসব ঘটনা কারাগারের বাহিরে প্রকাশ হলে সীমাকে পিটিয়ে হত্যা করে হৃদরোগ মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

আরও পড়ুনঃ  বদলগাছীতে জাতীয় ভোটার দিবস পালিত

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সীমার মা অভিযোগকারী করিমন নেছা একাধিকবার হাজতি মেয়ের সাথে দেখা করতে গাইবান্ধা কারাগারে গেলেও মেয়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। অবশেষে সীমা খাতুনকে গাইবান্ধা আদালতে হাজিরার তারিখে আদালতে মেয়ের সাক্ষাৎ পান মা করিমন নেছা। ওইদিন সীমা মায়ের কাছে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে জখমের চিহ্ন দেখান।

পরে অভিযোগ দায়েরের প্রেক্ষিতে গত ১৬ এপ্রিল জেলা কারাগারে ঘটনা তদন্তে যান গাইবান্ধা জেলা প্রশাসাকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্ত করেছি। খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেব। এরপরেই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী বলেন, অভিযুক্তদের মধ্যে দুই কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামকে দিনাজপুর এবং নারী কারারক্ষী সাবানা খাতুনকে ঠাকুরগাঁও কারাগারে বদলি করেছে কারা প্রশাসন।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



সম্পাদক ও প্রকাশক : ইয়াকুব শিকদার

ঢাকা অফিস: ১২১,ডি.আই.টি, এক্সটেনশন রোড, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০। রাজশাহী অফিস: বহরমপুর (সিটি বাইপাস), জিপিও-৬০০০, রাজপাড়া, রাজশাহী। ই-মেইল: somoyerkotha24news@gmail.com, মোবাইল: 01727202675