স্টাফ রিপোর্টার: আগামী মাসের মাঝামাঝি ঘোষণা হতে পারে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের তফসিল। সেই হিসেবে জুনের মধ্যে হবে নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় বিএনপি। আর অন্য কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদেরও নিবার্চনী মাঠে নামতে দেখা যায়নি।
রাজনেতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মূলত প্রতিদ্ব›িদ্বতা হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে। আর অন্য দলগুলোর তেমন ভূমিকা থাকে না সিটি নির্বাচনে। কাউন্সিলর পদে এবার ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে মোকাবেলা করতে হবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের। কারণ, প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে ভেতরে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি মুলত দুই ধারায় বিভক্ত।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এখন পর্যন্ত বর্তমান মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ছাড়া অন্য কাউকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ভাবছেন না তারা। কারণ, মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি এ শহরকে সাজিয়ে তুলেছেন। ব্যাপক উন্নয়নে বদলে দিয়েছেন শহরকে। তারপরও বিকল্প মেয়র প্রার্থী হিসেবে এরই মধ্যে আলোচনায় এসেছে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নাম।
বর্তমান সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে তাঁকে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমÐলীর সদস্য করা হয়। এরপর তিনি নগর সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের পর লিটনকে আবার সভাপতিমÐলীর সদস্য করা হয়। এরপর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়, মেয়র না হয়ে এবার হয়তো সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন লিটন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে লিটনকে হয়তো করা হবে মন্ত্রী। তিনি ঢাকায় থেকে জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবেন। এর আগে থেকেই মেয়র পদে আলোচনায় আসে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নাম। দলের মনোনয়ন চাইতে ভেতরে ভেতরে তিনি প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন ডাবলু সরকার। তিনি বলেন, ‘দল চাইলে প্রার্থী হবো। না চাইলে আগ বাড়িয়ে নির্বাচন করবো না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলছেন, কেবল লিটন নির্বাচন না করলেই তিনি প্রার্থী হবেন। আসাদ বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমার কথা স্পষ্ট। খায়রুজ্জামান লিটন যোগ্য প্রার্থী। তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি যদি প্রার্থী না হন, তাহলে আমি প্রার্থী হতে চাইব। কিন্তু লিটন ভোটে এলে আমি প্রার্থী হবো না।’
আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘নেত্রী চাইলে আবারও প্রার্থী হবো, নগরবাসী চাইলে তাদের সেবা করবো।’ লিটন প্রার্থী না হলে আসাদুজ্জামান প্রার্থী হবেন এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনার কাছ থেকেই বিষয়টি শুনলাম। নেত্রীর সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত।’
আওয়ামী লীগের নির্বাচনের প্রস্তুতি জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন। নেত্রী তাঁকেই প্রার্থী করবেন বলে আমাদের ধারণা। আমরা তাঁকে পাস করিয়ে আনব, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশন গঠিত হবার পরে ১৯৯১ সালের ২১ মে নাগরিকদের সরাসরি ভোটে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু। এরপর ১৯৯৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একটানা মেয়র ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে পরাজিত করে মেয়র হন শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সন্তান এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এরপর ২০১৩ সালের নির্বাচনে বুলবুলের কাছেই পরাজিত হন লিটন। পরে ২০১৮ সালে বুলবুলকেই হারিয়ে ফের মেয়র হন লিটন।
আগামী নির্বাচন নিয়ে মোদাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পরিকল্পনা জানা যায়নি। গত দুইদিন যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, এখন পর্যন্ত সিটি নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন তারা।
নগর বিএনপির আহŸায়ক এরশাদ আলী ঈসা বলেন, ‘আমরা তো এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনেই অংশ নিতে চাই না। এই সিদ্ধান্তই আছে এখন পর্যন্ত। সিটি নির্বাচন নিয়ে দলীয় ফোরামে নতুন কোন আলোচনাও হয়নি।’ বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে প্রার্থী কে হবেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেরকম কিছু হলে দল সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এখনও জানি না।’