স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগ ১৪ দলের জোটচর্চা করছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন শরীক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। শনিবার বিকালে রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে ওয়ার্কার্স পার্টির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ অভিযোগ তোলেন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘এই সেদিনও ঠাকুরগাঁওয়ে উপনির্বাচন হয়ে গেল। আমাদের বলা হলো, ওয়ার্কার্স পার্টিকে একটা সিট ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা খুশি হলাম। আমরা হাতুড়ি নিয়ে নির্বাচন করলাম, কিন্তু কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগের এক বন্ধুও এলো না। আমাদের কাছে ভিডিও আছে, যেখানে বিজয়ী প্রার্থী ঘোষণা করছে- “ওই নৌকার মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে বলেই আমি লাঙলে জয়লাভ করেছি।” কেবল কি তাই? সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ভোট ভাগ করা হয়েছে। দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে যাতে ভোট ভাগ হয়ে যায়। এই যে নগ্ন খেলা, এটা আর যাই হোক এটা জোটচর্চা নয়। এটা আর যাই হোক, এটা জোটের রাজনীতি হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে হাতুড়ি মার্কা নিয়ে আমরা যেসব সিট জয়লাভ করেছিলাম, ২০১৮ সালে সেইসব সিট আমাদের ভাগে এসেছিল। আমরা পেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের বলা হলো, নৌকা নিয়ে নির্বাচন করো। কিন্তু নির্বাচন যখন করতে গেলাম, দেখলাম- নৌকার মাঝিরাই নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে। নৌকার মাঝিরাই নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে কেউ জাতীয় পার্টিকে জিতিয়েছে, কেউ বিএনপিকে জিতিয়েছে। এটা আমার কথা না। এটা ইতিহাসের কথা।’
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনসভা করে গিয়েছেন কয়দিন আগে। ভোট চেয়েছেন। কার ভোট? নৌকায় ভোট চেয়েছেন। ঠিকই আছে। তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, তিনি নৌকায় ভোট চাইতেই পারেন। কিন্তুতিনি একইসঙ্গে ১৪ দলের জোটনেত্রী। তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, “১৪ দল একত্রে নির্বাচন করবে।” এটা আমার কথা নয়, গণভবনে ১৪ দলের সাথে সভা করে তিনি বলেছেন। কিন্তু ভোট চাইবার বেলায় নৌকা, হাতুড়ির কোন জায়গা নাই। ভোট চাইবার বেলায় নৌকা, মশালের কোন জায়গা নাই। সেখানে কোদালের কোন জায়গা নাই। তাহলে হলো? এই ১৪ দলের ঐক্যজোট হলো? ওই নির্বাচন কি হলো? অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক দুর্ভাগ্য আমাদের রয়েছে।’
ওয়ার্কার্স পার্টির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘যে রাজনৈতিক বিজয় আমরা অর্জন করেছিলাম তা ছিল ঐক্যবব্ধ শক্তি। ঐক্যের বিজয়। সেই বিজয় ছিল ১৪ দলের। আমরা কি ভুলে গেছি? বিএনপি-জামায়াত জোট ২১ আগস্ট কি গ্রেনেড হামলা করেছিল। আমরা ভুলে যাই নাই। আপনারা আমাদের বলেছিলেন- “একসাথে আন্দোলন, একসাথে নির্বাচন, একসাথে সরকার।” আমাদের কোন দাবি ছিল না। আপনারাই বলেছিলেন। একসাথে আন্দোলন করেছি, একসাথে নির্বাচনও করেছি। কিন্তু যখন সরকার গঠনের প্রশ্ন আসলো, আমরা হোঁচট খেলাম। তারপরও আমরা ঐক্যকে রক্ষা করেছি। ওই হেফাজত যখন ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় অভ্যুত্থানের চেষ্টা নিয়েছিল, এই ওয়ার্কার্স পার্টি সেদিন আওয়ামী লীগ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল, আর কেউ নয়। এমনকি ওই মহাজোটের এরশাদ সাহেবেরা হেফাজতকে পানি খাইয়েছিল, তাদের কাছে গিয়ে তাদেরকে তোষামোদ করেছিল।’
রাজনীতির জন্য এখনও ১৪ দল প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, ‘আমরা জোট চাই, এখনও আমরা মনে করি ১৪ দল প্রাসঙ্গিক। কারণ, আমাদের সামনে শত্রু বিভীষণ। এই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করা এ দেশের মানুষের কাছে কিছু না। কিন্তু আজকে যখন দেখি, আমার ১৪ দলের মূল শরিক আওয়ামী লীগ ১৪ দলকে কোনকিছু না জিজ্ঞেস করেই, ১৪ দলকে কিছু না জানিয়েই যদি মনে করে থাকে এককভাবে তারাই এ শক্তির মোকাবিলা করবে, তাহলে তারা ভুল করছে। তারা ভুল করবে। কারণ, এই একইভাবে ’৯৬ সালে, একই ষড়যন্ত্রের মুখে তারা পড়েছিল ২০০১ সালে। আমরা তো ভুলে যাই না।
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত আগুন সন্ত্রাস করেছিল, নির্বাচন বর্জন করেছিল, আমাদেরকে মন্ত্রিত্ব আগে দেওয়া হলো। আমরা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে আমরা নির্বাচনকালে মন্ত্রিত্বে যোগদান করেছি। নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এমনকি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচনের দায়, নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছি আমরা। ভুলে গেছেন সব এখন? সব ভুলে যান! ভুলে যান! ২০১৮ সালে আরেকবার যখন নির্বাচন হলো, তখন একইভাবে এই ওয়ার্কার্স পার্টি দাঁড়িয়ে থেকে আপনাদের সেই লড়াইকে করেছে। আপনাদের পাশে তখন আর কেউ ছিল না। আজকে আবার সেই নির্বাচনের প্রশ্ন সামনে।’
এমপি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে এগিয়েছি, কোন সন্দেহ নাই। বিএনপি-জামায়াত জোটকে পরাস্থ করেছি। জঙ্গিবাদকে পরাস্থ করেছি। সেনাশাসনের ষড়যন্ত্রকে প্রতিরোধ করেছি। কিন্তু আজকে আবার সেই পুরনো প্রশ্ন। সেই প্রশ্ন, সেই শক্তি যাদেরকে পরাজিত করেছিলাম। তারা আবার সারা বাংলাদেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কী বলছে? বলছে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। বলছে, ইভিএমে তারা কোন ভোট করবে না। একটার পর একটা শর্ত তাদের, শর্তের কোন শেষ নেই। তাদের নেত্রী জেলখানায়। তাদের আরেক নেতা পলাতক লন্ডনে। সেখান থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ জন্য সতর্ক থাকতে হবে।’
আগামী নির্বাচনে পার্টির নেতারা হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে সমাবেশে ঘোষণা দেন মেনন। রাজশাহী ওয়ার্কার্স পার্টি এই সমাবেশের আয়োজন করে। এতে রাজশাহী বিভাগের আট জেলা থেকে চার থেকে পাঁচ হাজার নেতাকর্মী যোগ দেন। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। এছাড়াও বক্তব্য দেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আমিনুল ইসলাম গোলাপ ও আনিসুর রহমান মল্লিক। নগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। পরিচালনায় ছিলেন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু ও জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা।