নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর নিয়ামতপুর সীমান্ত সংলগ্ন গুজিশহর প্রেমতলী গোসাই মেলার নামে চলছে,রমরমা জুয়া অর্ধনগ্ন ও নগ্ন নারীর নৃত্য। মেলাকে কেন্দ্র করে মেলার পার্শ্বেই গড়ে উঠেছে, জমজমাট মাদকের হাট, ভাসমান পতিতাদের পদচারণাও লক্ষ্য করা গেছে।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশকে উপেক্ষা করে অঘোষিত ছুটি দিয়ে গুজিশহর উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে তৈরী করা হয়েছে যাত্রাপালা,ভ্যারাইটি শো’র রঙ্গমঞ্চ। ঐতিহ্যবাহী এই গোসাই মেলায় পুতুলনাচ, ভ্যারাইটি-শো যাত্রাপালার নামে চলছে অশ্লীল, অর্ধনগ্ন ও নগ্ন নারীর নৃত্য, বসেছে অসংখ্য জুয়ার আসর। এই সবের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে টোল আদায়ের নামে করা হচ্ছে রীতিমতো প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি।
এসব কর্মকান্ডের সময় স্থানীয় থানা পুলিশকেও ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে, এক কথায় বলতে গেলে পুলিশ পাহারায় মেলায় এসব অনৈতিক কর্মকান্ড চলছে এমনটা জানানো হয়। প্রত্যন্ত মফস্বল এলাকায় এ রকম প্রকাশ্যে অশ্লীল কার্যক্রমে খোদ মেলা আয়োজকদের মাঝে অনেকেই চরম ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা বলছেন, ঐতিহ্যবাহী এ গোসাই মেলাটি নষ্ট করার জন্যই এবার এত কিছুর আয়োজন। অশ্লীলতা বন্ধের জোর নির্দেশ থাকলেও সব কিছুই চলছে প্রকাশ্যে। অথচ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও মেলা কমিটি রয়েছে নিরব ভূমিকায়।
মেলার কারণে এলাকায় বেড়েছে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমুলক কর্মকান্ড। এলাকায় দেখা দিয়েছে আইনশৃংখলার চরম অবনতি বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রজ্ঞাপন জারী করে বলা হয়েছে, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে বা অন্যকোন কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চত্বরে মেলা বা যাত্রাপালা করা যাবে না । কিন্তু এখানে মেলা উপলক্ষে গুজিশহর উচ্চ বিদ্যালয় অঘোষিত ছুটি দিয়ে বিদ্যালয় চত্বরে রঙ্গমঞ্চ করে সেখানে রাতভর চলছে অর্ধনগ্ন ও নগ্ন নারীর অশ্লীল নৃত্য। আর এসব নারী দেহের অশ্লীল নৃত্য উপভোগ করছে স্কুল পড়ুয়া ১২ বছরের শিশু থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধ।
মেলাকে কেন্দ্র করে স্কুলটির পার্শ্বেই গড়ে উঠেছে মাদকসেবীদের মিলন-মেলা ও মাদকের হাট। এখানে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে চোলাইমদ,গাঁজা, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য। বিক্রিও হচ্ছে ওপেন-সিক্রেট যেন দেখার কেউ নেই। এসব কারণে এলাকার সচেতন মহলের মাঝে চাঁপাক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তারা মেলায় জুয়া আসর, যাত্রাপালা ও ভ্যারাইটি-শো’র নামে অশ্লীল নৃত্য বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এব্যাপারে গুজিশহর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মেলা কমিটির সম্পাদক নুরুল ইসলাম জানান, স্কুল ছুটি দেয়া হয়নি, দিনে স্কুলের পাঠদান চলছে, আর রাতে যাত্রাপালা চলছে ।
এব্যাপারে মেলা কমিটির সভাপতি বলেন, স্থানীয় আশ্রম, মসজিদ ও স্কুলের উন্নয়নের জন্য এই গোসাই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, স্কুল চত্বরে যাত্রাপালা অনুষ্ঠানের বিষয়ে তিনি অবগত নন।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিষয়টি তিনি বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে নিয়ামতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ পাহারায় মেলায় অনৈতিক কর্মকান্ড হচ্ছে এমন অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, মেলার বৈধ অনুমতি থাকায় জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সেখানে পুলিশ যেতে পারে, তবে বিষয়টি তাঁর জানা নেই।