স্টাফ রিপোর্টার: পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার সকাল থেকে রাজশাহীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। এসময় বিভিন্ন এলাকার সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় তাঁদের। ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করাসহ সংবাদকর্মীকেও লাঞ্ছিত করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলা গেট ও তালাইমারী সংলগ্ন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের গেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে দলবেঁধে বিক্ষোভ নিয়ে তালাইমারী মোড়ে জড়ো হন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ নানা পেশার প্রায় ২ হাজার মানুষ। বিক্ষোভ চলাকালে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিক্ষোভ নিয়ে ভদ্রার দিকে যান আন্দোলনকারীরা। বৃষ্টি কারণে তালাইমারী মোড়ে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে সরে যান। তবে বিক্ষুব্ধরা এই বৃষ্টির মধ্যেই তাঁদের আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যান। পরে পুলিশ আবারও সেখানে সতর্ক অবস্থান নেয়। পরে আন্দোলনকারীরা রুয়েটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তালাইমারি হয়ে নর্দান মোড়ে যান। সেখান থেকে ঘুরে একই স্থানে এসে আবারও বিক্ষোভে কর্মসূচিতে মিলিত হন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে প্রথমেই ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে। মহাসড়ক অবরোধের ফলে সবধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যানবাহনের যাত্রী ও পথচারিরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আন্দোলনকারীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। এসময় সাদা পোশাকে সিটিএসবিতে কর্মরত পুলিশ সদস্য সাইফুল ইসলাম আন্দোলনের অবস্থা দেখছিলেন। হঠাৎ করে আন্দোলনকারীদের কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরে মারধর করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তার মাথা ফেঁটে গেলে কয়েকজন সাংবাদিক তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। পরে আন্দোলনকারীরা সাইফুল ইসলামের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর করেন। তবে এসময় পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. মোবারক পারভেজ জানান, আন্দোলনরত ব্যক্তিরা সকাল থেকে বিক্ষোভ করলেও পরিস্থিতি এখনো পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। তালাইমারীতে অবরোধ করলেও বিভিন্ন যানবাহন পাশের বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েটসহ আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কেউ জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করলে পুলিশ তা প্রতিরোধ করবে।
শিক্ষার্থীরা তালাইমারি মোড়, ভদ্রা হয়ে রেলগেট পর্যন্ত যান। ভদ্রায় পৌছানোর আগে দেবিশিংপাড়ায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এরপর নগরীর রেলগেট এলাকায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলা হয়। সেখানে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সও ভাঙচুরসহ রাস্তায় আগুণ জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় এখন টিভির রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রাকিবুল হাসান রাজীব ও ভিডিওজার্নালিস্ট রায়হানুল ইসলাম, দৈনিক প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম দুখু ও দৈনিক সানসাইন পত্রিকার ফটো চীফ সামাদ খানকে লাঞ্ছিত করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এখন টিভির রাজশাহী ব্যুরো অফিসের ভিডিওজার্নালিস্ট রায়হানুল ইসলাম বলেন, রেলগেট এলাকায় পেশাগত দায়িত্বপালনের সময় শিক্ষার্থীদের তাদের ওপর চড়াও হন। তাদের ভুয়া ভুয়া বলে তেড়ে আসেন। ধাক্কাধাক্কি করেন। প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম দুখুর ক্যামেরা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে তাড়া কিছুটা নিরাপদ দুরুত্বে গিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। রায়হান আরো বলেন, আন্দোলনকারীদের অনেকে সকাল থেকেই কর্তব্যরত পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে অনেকটা মারমুখী আচরণ করেছেন। তাঁদের অনেককে মুখে মাস্ক পরে থাকতেও দেখা গেছে।
বেলা পৌনে ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত রেলগেটে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। পরে সেখান থেকে ভদ্রার মোড়ে এসে আজ রোববার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বেলা ২টার দিকে কর্মসূচি শেষ করেন সমন্বয়কারীরা।
এদিকে আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীদের তান্ডবের কারণে নগর জুড়ে জনমনে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। সহিংসতার আশঙ্কায় নগরীর অধিকাংশ দোকানপাট, শপিংমল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে সকাল থেকেই নগরীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যদেরও মাঠে দেখা গেছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র জামিলুর রহমান বলেন, আহত পুলিশ সদস্য সাইফুল ইসলাম এখনও শঙ্কামুক্ত নন। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধী দেয়া হচ্ছে। তবে নগরীর সার্বিক আইনশৃংখলা পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত। আর ক্ষয়ক্ষতি হিসেব এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। সেইসাথে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় মামলার বিষয়ে সিনিয়র কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিবেন।
সারাদেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা ও খুনের প্রতিবাদ এবং ৯ দফা দাবিতে শনিবার সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্টদের শনিবার রুয়েট গেটে জমায়েত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।