অনলাইন ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন চালু করা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ডিএমটিসিএলের সূত্র বলছে, আগামী মাসের মধ্যে কাজীপাড়া স্টেশন চালুর চেষ্টা চলছে। তবে মিরপুর স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত বেশি হওয়ায় দেরি হবে।
গত ১৮ জুলাই বিক্ষোভের সময় কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশনে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। সেদিন থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয় মেট্রোরেল চলাচল। গত ২৫ আগস্ট মেট্রোরেল চালু হলেও বন্ধ রয়েছে স্টেশন দুটি।
ডিএমটিসিএলের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রউফকে আজকের পত্রিকাকে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব কাজীপাড়া স্টেশন খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ১৮ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে জানানো হবে।
তিনি আরো বলেন, কারিগরি দল এ বিষয়ে কাজ করছে। তাঁরা ১৮ তারিখের আগে চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ দেবেন। কবে থেকে চালু করা যাবে তখন জানা যাবে।
মেট্রোরেল স্টেশনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো মূলত প্রোপ্রাইটর আইটেম। এসব উপকরণ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সিস্টেম ও নকশা একবারেই আলাদা। তাই নতুন করে যন্ত্রপাতি কিনতে হলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানেই দ্বারস্থ হতে হবে।
ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভাড়া আদায়ের সিস্টেম ‘ভেন্ডিং মেশিন’। এই মেশিনের নানা যন্ত্রাংশ কিনতে তোড়জোড় শুরু করেছে ডিএমটিসিএল। সেজন্য ভারত ও জাপানের দ্বারস্থ হয়েছে ডিএমটিসিএল।
ডিএমটিসিএলের রোলিং স্টক বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাপান ও ভারত থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এনে স্টেশন মেরামত করা হচ্ছে।
ডিএমটিসিএলের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন চালুর জন্য জাইকা এখনো নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।
হামলায় কি পরিমাণ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে তার তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে (সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) জমা দিয়েছে ডিএমটিসিএল। সেই তালিকা অনুমোদিতও হয়েছে। এখন ভারত ও জাপান থেকে সব যন্ত্রপাতি আনার পরে তা ইনস্টল করতে হবে। সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ মাস সময়ে স্টেশন দুটি পুরোদমে চালু হতে পারে বলে জানিয়েছে ডিএমটিসিএল সংশ্লিষ্টরা।
মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশনটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাজীপাড়া স্টেশনের একপাশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্য পাশ সুরক্ষিত রয়েছে। স্টেশন দুটিতে টিকিট কাটার মেশিন, অফিস রুম, টিকিট পাঞ্চ করার গেট, কম্পিউটার, সিসি ক্যামেরার ক্ষতি হয়েছে। তবে মেট্রোরেল চলাচলের ভায়াডাক্ট অংশের কোনো ক্ষতি হয়নি।
গত জুলাই শেখ হাসিনা সরকার থেকে জানানো হয়েছিল অন্তত এক বছর সময় লাগতে পারে মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন চালু হতে। আর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা। হাসিনা সরকার পতনের পর ডিএমটিসিএলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মিরপুর-১০ স্টেশনের ই-সিস্টেমের পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। কাজীপাড়া স্টেশনের ই-সিস্টেম অর্ধেকের বেশি নষ্ট হয়েছে। এছাড়া দুই স্টেশনে থাকা পাঞ্চ মেশিন, ভেন্ডিং মেশিন, বিভিন্ন ডিভাইস, কম্পিউটারসহ আরও যেসব জিনিসপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই হিসাবে মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
এমআরটি-৬ প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (ইলেকট্রিক্যাল, সিগন্যাল, টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ট্র্যাক) মো. জাকারিয়া বলেন, এই মাসের শেষে কিংবা আগামী অক্টোবর মাসের শুরুতে কাজীপাড়া স্টেশন চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে। মিরপুর-১০ স্টেশন সহসাই চালু হবে না।
এদিকে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মেট্রোরেল পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে ডিএমটিসিএল। এ লক্ষ্যে মেট্রোরেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা হলেও এখন অধস্তন কর্মচারীরা অতিরিক্ত ভাতা দাবি করছেন। কিন্তু ডিএমটিসিএলে কোনো সার্ভিস রুল না থাকায় এই অতিরিক্ত ভাতা কীভাবে দেওয়া হবে তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘শুক্রবারে চলাচলের বিষয়েও ১৮ তারিখ জানানো হবে।’