স্টাফ রিপোর্টার: অগ্রহায়ণের প্রথম দিন রাজশাহীতে কৃষকের নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বিকালে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সঙ্গে ‘কৃষকের নবান্ন উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহীর কৃষি উদ্যোক্তা ও এ বছর বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষক মনিরুল ইসলাম মনির এ উৎসবের আয়োজন করেন। এর আগেও তিনবছর তিনি এ আয়োজন করেছেন। বরাবরের মতো এবারও তাঁর এ আয়োজনে উৎসবের ঢল নেমেছিল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত এই গ্রামে।
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে সকালে এ গ্রামের নারীরা নিজ নিজ বাড়ি লেপামোছার কাজ করেন। আঁকা হয় আলপনা। বাড়িতে বাড়িতে রান্না হয় মাংস। ভাপাপিঠা, অ্যাংকর পিঠাসহ অন্যান্য ভালো খাবার করেন নারীরা। গোসল-খাওয়াদাওয়া সেরে নতুন কাপড় পরে বিকাল ৩টায় তারা যোগ দেন নবান্ন উৎসবে। গ্রামের শিশুরাও এসেছিল নতুন নতুন পোশাক পরে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন রাজশাহী সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা, ডাকরা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রউফ, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে সালমা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির আহমেদ ও সফল উদ্যোক্তা। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কিশোরীরা তাদের ফুল ছিটিয়ে এবং গাদা ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেন।
অনুষ্ঠানস্থলটিকে সাজানো হয়েছিল কাগজের ফুল দিয়ে। সেখানেই জাতীয় সংগীতের সঙ্গে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর অতিথিরা নারীদের ধান কাটা প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করে দেন। তিনটি দলে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ১৫ জন নারী প্রায় দুই কাঠা জমির তিন সারি ধান কাটার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। আগে নিজেদের সারির ধান কেটে প্রথম হয় শাহানাপাড়ার মুকুল সরকারের দল। দ্বিতীয় হয়েছে বেলডাঙ্গা গ্রামের আলপি খাখার দল। আর তৃতীয় চৈতন্যপুরের মমতা রানীর দল। প্রতিযোগিতায় ধান কাটতে নেমে কোন কোন নারী একবারের জন্যও নিজের কোমরটি সোজা করেননি। হৈ হুল্লোড় করে তারা ধান কাটেন।
ধান কাটা প্রতিযোগিতা শেষে শিশু-কিশোর ও কিশোরীরা নৃত্য পরিবেশন করে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ির সবুজ সরকার নিজের উদ্ভাবন করা ড্রোন নিয়ে এসেছিলেন এই এ উৎসবে। তাঁর ড্রোন কীভাবে ফসলের জমিতে কীটনাশক স্প্রে করবে তা তিনি দেখান। পরে চেয়ার খেলা ও হাড়িভাঙাসহ নানা খেলা অনুষ্ঠিত হয়। চলতে থাকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের নাচগান। রাতে ধান কাটার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী নারীদের নতুন শাড়ি পুরস্কার দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘আমরা যে এলাকায় থাকি না কেন, আমাদের অতীত সবার গ্রাম। শহুরে নানা কার্যক্রমের ভেতর এ ধরনের অনুষ্ঠান হারিয়ে যেতে বসেছে। আদি এই ঐতিহ্য ধরে রাখবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এমন আয়োজন প্রতিবছর গ্রামে গ্রামে হবে এ প্রত্যাশা করি।’
উৎসবের আয়োজক কৃষক মনিরুল ইসলাম বললেন, ‘নবান্ন উৎসবে একদিনের জন্য হলেও কৃষকের যে নির্মল আনন্দ তার প্রয়োজন আছে। তাই যতদিন কৃষির সঙ্গে আছি, ততদিন চালিয়ে যাব।’