স্টাফ রিপোর্টার: নাটোরের এক কলেজ প্রদর্শকের প্রায় ৬৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ টাকার আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি ৫ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনেরও অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ১৩ নভেম্বর দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক সাইদুর রহমান। আসামির নাম আবুল কালাম আজাদ (৫৫)। তিনি নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজের কম্পিউটার প্রদর্শক। সিংড়ার কয়রাবাড়ি গ্রামে তাঁর বাড়ি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, প্রদর্শক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠলে দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেনকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। পরে এই কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদকে তাঁর সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। সেই সম্পদ বিবরণী অনুযায়ী আবার সম্পদের অনুসন্ধান করেন প্রাক্তন উপসহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরী।
তাঁর দাখিল করা প্রতিবেদনে উঠে আসে, আবুল কালাম আজাদ সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন তার নামে ৮৬ লাখ ২৩ হাজার ১৫০ টাকা মূল্যের স্থাবর ও ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। অর্থাৎ তার মোট ৮৭ লাখ ৩৮ হাজার ১৫০ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার নামে মোট ৯৩ লাখ ৩৭ হাজার ৮৩৩ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। ফলে তিনি ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮৩ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
এদিকে সম্পদ বিবরণীতে আবুল কালাম আজাদ উল্লেখ করেছেন তিনি জমি পেয়েছেন পৈতৃক সূত্রে। কিন্তু উপজেলা ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি ক্রয় সূত্রে জমির মালিকানা অর্জন করেছেন। এ রকম মিথ্যা তথ্য দিয়েও তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
দুদক আরও জানিয়েছে, আবুল কালাম আজাদের চাকরির বেতন-ভাতা, কৃষি, ব্যবসায় ও অন্যান্য উৎস থেকে তার এ পর্যন্ত মোট আয়ের পরিমাণ ৩১ লাখ ২ হাজার ৪৪১ টাকা। অথচ এখন তার অর্জিত সম্পদের মূল্য মোট ৯৬ লাখ ৯৬ হাজার ৫৫৩ টাকা। ফলে তিনি অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। দুদক আইনে এটিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এই অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য মামলার নথিপত্র আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও দুদক জানিয়েছে।
এ বিষয়ে কলেজ প্রদর্শক আবুল কালাম আজাদের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তাঁর কলেজের অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিক রকি বলেন, তিনি ঢাকায় আছেন। আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।