স্টাফ রিপোর্টার: জন থর্প মার্কিন নাগরিক। সংগীতে মাস্টার্স করেছেন আমেরিকায়। বাংলাদেশে থেকেছেন দীর্ঘ সময়। এখানে এসে রবীন্দ্র সংগীতের প্রেমে পড়েছেন রীতিমতো। তিনি সুর এবং তাল ঠিক রেখে ইংরেজিতে অনুবাদ করে রবীন্দ্র সংগীত গাইতে পারেন। শতাধিক গানের অনুবাদ করেছেন তিনি।
এ ছাড়া সুর এবং তাল ঠিক রেখে ইংরেজিতে অনুবাদ করে নজরুল এবং লালনগীতিও গাইতে পারেন তিনি। গত শনিবার রাজশাহীতে একটি অনুষ্ঠানে অনুবাদ করা রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন তিনি।
জন থর্প ১৯৮০ সালে প্রথমে বাংলাদেশে আসেন দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি দায়িত্ব নিয়ে। ওই কাজ করতে কুষ্টিয়ায় গিয়ে শেখেন বাংলা ভাষা। কুষ্টিয়ায় বাংলা গানের প্রেমে পড়েন তিনি। সেখান থেকেই ইংরেজিতে গান অনুবাদ করতে শুরু করেন তিনি।
পরে ১৯৯৫ সালের দিকে তিনি দেশে ফিরে যান। ২০১১ সালে আবার ওই এনজিওর কাজ নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। ২০১২ সালে রাজশাহী নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন একটি গানের স্কুল। নাম দেন বরেন্দ্র মিউজিক্যাল আর্ট সেন্টার। এখানে পশ্চিমা বাদ্যযন্ত্র শেখাতেন তিনি। পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজিতে রবীন্দ্র সংগীতেরও চর্চা হতো।
স্বরলিপিসহ রবীন্দ্রনাথের ১০২টি গানের তাঁর করা একটি অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশ করেছে শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্ট, গাজীপুর। গ্রন্থটির বাংলা নাম- ‘আনন্দেরই সাগর থেকে…’। ইংরেজি নাম- ‘ফ্রম আ জুবিলান্ট সি…’। ২০১৮ সালের দিকে জন থর্প ফিরে যান নিজের দেশে।
জন থর্পের বয়স এখন ৬৯। গানের টানে চলতি মাসের শুরুতে এই বয়সেও ছুটে এসেছেন রাজশাহী। তাঁর সম্মানে শনিবার রাজশাহী দিনভর নগরীর একটি হোটেলে ‘ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আয়োজন করেছিল ‘ফাউন্টেইন মিউজিক্যাল আর্ট সেন্টার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল সজল জন থর্পেরই ছাত্র ছিলেন। তাই তিনি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
এ অনুষ্ঠানে জন থর্প রবীন্দ্রনাথের বেশকিছু গান বাংলা এবং ইংরেজিতে গেয়ে শোনান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। জন থর্প অনুষ্ঠানে নিজে কি-বোর্ড বাজিয়ে তাদের নিয়েও গান গেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে জন থর্প বলেন, ‘আমেরিকাতে কেউ রবীন্দ্রনাথের গান শোনেনি। সেখানে যদি তার গান শোনে বাংলায়, তাহলে বুঝবেই না কিছু। তাই বাংলাদেশে আগে বাংলা শিখলাম। তারপর শুননে শুনতে কয়েকটা গান শিখলাম। এরপর সুর এবং তাল মিল রেখে ইংরেজিতে গাইলাম, যেন আমার দেশের লোক সেই গানের সুর এবং কথা একটু বুঝতে পারে।’
জন থর্পের ছাত্র মাহমুদুল সজল বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের গানের কথা, সুর, তাল, লয় ঠিক রেখে অন্য ভাষায় গাওয়াটা খুবই কঠিন ব্যাপার। এই কঠিন কাজটিই করেছেন জন থর্প স্যার। আমরা যারা তাঁর সহচর্য পেয়েছি তারা ধন্য। কয়েকদিন বাদেই নিজ দেশেই ফিরে যাবেন স্যার।’
জন থর্পের বয়স এখন ৬৯ বছর। তাঁর তিন ছেলে-মেয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রেই। বড় ছেলে আর্টিস্ট, মেয়ে শিক্ষক, ছোট ছেলে প্রকৌশলী। জনের স্ত্রী জেন থর্পও রাজশাহী এসেছিলেন স্বামীর সঙ্গে। এখানে বস্তির শিশুদের জন্য একটা স্কুল করেছিলেন তিনি। জেন এখন থাকেন নিজ দেশে।