স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রোববার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর জেলা পুলিশ লাইন্স মাঠে ৩১ বার তোপধ্বনি ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরের শহিদ স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অপর্ণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরের শহিদ স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও সংস্থা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আলাদাভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান। সকাল আটটায় জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ জাতীয় সংগীত পরিবেশনার সাথে সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
পরে তিনি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ’জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনাসভা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার প্রধান অতিথি ছিলেন।
আলোচনা সভায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে গোটা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্খায় উজ্জীবিত করেছিলেন। তাঁর ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজী রেখে রক্তের বিনিময়ে এদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। জি এস এম জাফরউল্লাহ্ বলেন, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে গ্রেপ্তারের পূর্ব মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বঞ্চনা, অন্যায়, অবিচার, সাম্প্রদায়িকতা, বৈষম্য ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই ২৬ মার্চ বাঙালি জাতির জন্য অহংকার ও শৃঙ্খল মুক্তির দিন, বিশে^র বুকে লাল সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। সোনার বাংলা বিনির্মাণে উজ্জীবিত হওয়ার দিন।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বৈশি^ক অতিমারি করোনার মধ্যেও আমাদের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ২ শতটি দেশের মধ্যে আমরা ৮ম। বাংলাদেশ আজ বিশে^র দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল। মহান স্বাধীনতার ৫২তম বছর পেরিয়ে ৫৩তম বছরে এসে আমরা বেশ কিছু গৌরবময় সাফল্য অর্জন করেছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, শতভাগ বিদ্যুতায়নের দেশে পদার্পণ করেছি, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণসহ দেশের প্রতিটি সেক্টরে সাফল্য অর্জন করেছি। বিভাগীয় কমিশনার আরও বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তাদের মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রয়াস এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠা। তিনি সকলকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবার উদাত্ত আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাদী ও জিন্নাতুন নেসা তালুকদার আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন। জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন, নগর পুলিশের কমিশনার আনিসুর রহমান ও জেলার পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) উদ্যোগেও মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রোববার সকাল ৮টায় সিএন্ডবি মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে কাউন্সিলরেরা পুষ্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একইসাথে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ও কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এদিকে সকালে নগরীর কুমারপাড়ায় মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরে বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করা হয়। এরপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার প্রমুখ।
সকালে রাজশাহী কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় নেতাকর্মীদের মাঝে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা।