অনলাইন ডেস্ক : যোগাযোগে গতি আনতে যমুনায় রেলসেতু নির্মাণ হলেও এর পুরোপুরি সুফল পেতে বেগ পেতে হবে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে। নাটোরের আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী ডাবল লাইন নির্মাণ না হলে বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে না গুরুত্বপূর্ণ এই দু’জেলার ব্যবসায়ীরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, মাস্টার প্ল্যানের ২০৪৫ সালের কথা। তবে আদৌ কাক্সিক্ষত বাণিজ্যিক সুফল মিলবে কি না- তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রের তথ্য বলছে, যোগাযোগের নতুন দ্বার ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকে দৃশ্যমান হয়েছে দেশের বড় রেলসেতু। ৩ বছরের বেশি সময়ে প্রায় ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকায় নির্মিত হয়েছে এই সেতু। বৃহৎ এই অবকাঠামোর ফলে, পশ্চিমাঞ্চল রেলের এক হাজার ৭০০ কিলোমিটার পথ ছুঁটে ৪২টি আন্তঃনগর, ছয়টি আন্তঃদেশিয় ও ১৮টি মালবাহী ট্রেনকে আর থেমে যেতে হবে না সিরাজগঞ্জের যমুনা পাড়ে।
রেলগাড়ির এই গতিময় সেতুকে ঘিরে উত্তরের মানুষের স্বপ্ন বেড়েছে অনেকগুণ। পণ্যের পরিবহন হবে, এই অঞ্চলে বাড়বে শিল্পের বিনিয়োগ, একইসাথে রাজশাহী থেকে কনটেইনার ট্রেন চলবে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত। পাশাপাশি কক্সবাজার পর্যন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের প্রত্যাশা এই অঞ্চলের মানুষের। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। যমুনা রেল সেতু থেকে নাটোরের আব্দুলপুর জংশন পর্যন্ত প্রায় ৯১ কিলোমিটার পথ। যার মধ্যে মাত্র ২০ কিলোমিটারে আছে ডাবল রেল। পাশাপাশি এ পথে ৬৬টি ট্রেনকে পাসিং করতে গতি হারায় ট্রেন, নষ্ট হয় সময়। তাতে বাণিজ্যিক সুবিধা খুব বেশি হবে না বলছেন ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া ট্রেনের গতি বাড়লেও নতুন কোন ট্রেনযুক্ত হওয়ার সুখবর নেই। বরং নানা সংকটে অন্য রুটগুলোতে অনেক ট্রেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমন বাস্তবায়তায় ২০৪৫ সালের মাস্টার পরিকল্পনার কথা কর্তাদের মুখে। যদিও সেই মাস্টার প্লান কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়েও ব্যবসায়ী ও বিশিষ্টজনদের প্রশ্ন রয়েছে।
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, যমুনা রেলসেতু পারাপারে গতি আসলেও দুর্বল রেলপথের কারণে এখনই সে সুবিধা পাবে না রাজশাহী অঞ্চল। উত্তরের ভূগোলে পকেটে থাকা রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের জন্য যমুনা রেলব্রিজের পূর্ণ সেবা পেতে প্রয়োজন আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ডাবল রেলের। তবে সে প্রকল্প কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে, তা যেমন নিশ্চিত নয়, যমুনা রেলসেতুর পূর্ণ সেবাও নিশ্চিত নয় রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দাদের জন্য। তাই পূর্ণ সেবার অপেক্ষায় দুই অঞ্চলের মানুষ।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিঙ্কু বলেন, আমাদের যমুনা রেল সেতু চালু হয়ে গেলে এটার উপর আমাদের জিএমদের সাথে বসতে হবে। কারণ এই অঞ্চলে যে ট্রেনের বগিগুলো দিবে সেগুলোতে আমরা ব্যবসার জন্য কী রকম সুযোগ-সুবিধা পাবো।
বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, সারাদেশের অন্তত বিভাগগুলোতে যদি আমরা সরাসরি পৌঁছাতে পারতাম, তাহলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক যে দুরবস্থা সেটা কিন্তু লাঘব হতো।
রহমান জুটমিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচলাক ফজলুর রহমান বলেন, জুটমিলের যে প্রোডাক্টগুলো আমরা এক্সপোর্ট করি সেটা তো রাজশাহী থেকে একেবারে চট্টগ্রাম পোর্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়। স্টেশনে আনলোড করে দেখা গেল আবার পোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে, তাহলে কেয়ারিং খরচ ডাবল হেয় যাবে। সেজন্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এটা আমাদের খুব একটা লাভ হবে না।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খাঁন বলেন, এক যুগের উপরে আমরা কিন্তু সরকারকে জানিয়ে আসছি যে, রাজশাহী অঞ্চলে ডাবল লাইনটা দিতে হবে। এটা না হলে কিন্তু ব্রিজ যেটা হচ্ছে বাস্তবায়ন হলেও আমরা মনে করি যে আমাদের সুযোগ-সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হবো।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মামুনুল ইসলাম বলেন, যমুনা সেতু হওয়ার প্রেক্ষিতে আমাদের ট্রেন বাড়ানো সম্ভব হবে না। কারণ অনেকগুলো ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। আমাদের ২০৪৫ সাল পর্যন্ত একটা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। ওখানে ফেস বাই ফেস ইউনিগেজে চলে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। স্পেশালি দু’টি বন্দরের সাথে কানেকশন করা। অলরেডি আমরা মংলা বন্দরের সাথে কানেকশন করে ফেলেছি। পোর্ট ফ্যাসিলিটিস পাওয়ার কারণে দু’টি প্রজেক্টই আমাদের পাইপলাইনে আছে।
তিনি আরও বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে আমরা আমাদের উত্তরাঞ্চলের যে জেলা আছে সেগুলোতে প্রায় ১২০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। টাইমের সাথে মানির একটা সম্পর্ক আছে। এটা অর্থনৈতিক বিষয়। এদিকে দেখলে এটা হলে এই অঞ্চলের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। আর রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর ভিজিবিলিটি চলছে। অলরেডি কিছু রিপোর্ট সাবমিট করা হয়েছে। প্রাথমিক একটা ধাপ বা ফান্ডিং সার্চ করার স্টেপ আমরা নিয়েছি।