চারঘাট প্রতিনিধি: চারঘাট-বাঘার সাংসদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব শাহরিয়ার আলমের নির্দেশ উপেক্ষিত হচ্ছে। কোনোভাবেই আমার নির্বাচনী এলাকায় পুকুর খনন করা যাবে না বলে স্থানীয় প্রশাসনসহ নেতাকর্মীদের সামনে প্রকাশ্যে প্রতিমন্ত্রী নির্দেশনা দিলেও থামছে না চারঘাটে পুকুর খনন। স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়ে সমানতালে চলছে অবৈধ এই কর্মযজ্ঞ। আমের বাগান, বড়ই বাগান, সবজিখেত, ধানখেত সব কিছুই নষ্ট করে চলছে অবৈধ পুকুর খনন। স্থানীয় প্রশাসনসহ সকলেই উদাসীন। এতে করে পুকুর খননকারীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।
গরেজমিনে গত কয়েক দিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, আমের বাগান, বড়ই বাগান, সবজিখেত, ধানখেতসহ তিন ফসলি জমি বিনষ্ট করে এক শ্রেণির অসাধু পুকুর খননকারী সিন্ডিকেটের লোকজন সমানতালে চলাচ্ছে পুকুর খনন। কখনও দিনের বেলায়, আবার কখনও রাতের বেলায় চলছে এসব অবৈধ কর্মযজ্ঞ। ফলে চারঘাটে এখন চোখ দিলেই দেখা যাবে পুকুর আর পুকুর। গত এক বছরে চারঘাটে ৩ শতাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে। স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়ে এতো গুলো পুকুর খনন করা হলেও আইনের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি স্থানীয় প্রশাসন। ফলে দিনে দিনে কমতে শুরু করেছে আবাদি জমির পরিমাণ। এক সময় যে সকল জমিতে ধান, গম, আখ, মশুরসহ বিভিন্ন ফসলি জমিতে এখন পুকুর। কোথাও ফাঁকা নেই জমি।
জানা যায়, গত ১১ এপ্রিল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি চারঘাটে একটি অনুষ্ঠান শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বলেন, চারঘাটে সাবমারসেবল পাম্প ব্যবহার করা পুকুর পানি দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। শুধু কি মাছই খেতে হবে? চারঘাট আর কোনোভাবেই কোনো ধরনের অবৈধভাবে পুকুর খনন করতে দেয়া হবে না। পুকুর খনন কাজে যারাই সহযোগিতা করবেন তাদের চিহিৃত করে কঠোর ব্যবস্থ্ ানেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রীর এমন কঠোর নির্দেশনার পরেও থামছে না চারঘাটে অবৈধ পুকুর খনন। এতে করে প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ হচ্ছে উপেক্ষিত, আর পুৃকুর খননকারীরা হয়ে উঠছেন বেপরোয়া।
বুধবার রাতে উপজেলার সাদীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ফসলি জমি নষ্ট করে সেখানে রাতের বেলায় চলছে অবৈধ পুকুর খনন। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও বন্ধ হয়নি পুকর খনন। এলাকাবাসীর অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনকে এর আগেও লিখিত ও মৌখিক ভাবে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানালেও বন্ধ হয়নি পুকুর খনন। বর্তমানে সাদীপুর, ভায়ালক্ষিপুর, নিমপাড়া, শলুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ও পিরোজপুর এলাকায় চলছে অবৈধ পুকুর খনন। কোথাও মেলেনি প্রশাসনের অভিযান। ফলে অনেকটা বাধাহীনভাবেই চলছে চারঘাটে অবৈধ পুকুর খনন।
নাম প্রকাশে চারঘাট সদর এলাকার একজন স্কুল শিক্ষক এই প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলার যেসব এলাকায় ধান চাষ হতো, এখন সেসব এলাকায় রাতারাতি হয়ে গেছে পুকুর। সবুজের মাঠে চোখ মেলালেই দেখা যাবে শুধুই পুকুর আর পুকুর। স্থানীয় প্রশাসন কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দর চারঘাটে প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশও মানছে না কেউ। ফলে আজ চারঘাটের সাধারন মানুষ অনেকটা অসহায় বলে দাবি করেছেন ওই স্কুল শিক্ষক।
বিষয়টি সম্পর্কে চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফকরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গত নয় মাসে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা জরিমানা আদায়সহ পুকুর খনন কাজে জড়িতদের জেল প্রদান করা হয়েছে। তার পরেও রাতের আঁধারে পুকুর খনন অব্যাহত থাকলেও দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।