• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • somoyerkotha24news@gmail.com
  • +880-1727-202675

ভোলাহাটে শিব মন্দিরগুলি হাজার বছরের ইতিহাস: কালের বিবর্তনে মরিচিকা, সংস্কার প্রয়োজন

প্রকাশ: বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ২:৫১

ভোলাহাটে শিব মন্দিরগুলি হাজার বছরের ইতিহাস: কালের বিবর্তনে মরিচিকা, সংস্কার প্রয়োজন

ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে সদর ইউনিয়নের পশ্চিমে থানার আশেপাশে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে হাজার বছরের পুরানা ঐতিহ্যবহণকারী হিন্দু ধর্মালম্বীদের শিবমন্দির। এ যেনো নিপুন হাতের কারুকার্য খচিত নক্সার বহিঃপ্রকাশ। দেখে চোখকে বিশ্বাস করানো যায় না, এগুলো কি মানুষের তৈরী? নাকি বিধাতার অলৌকিকভাবে তৈরী শৈলীচিত্র! মন্দিরগুলি মনোমুগ্ধকর পরিবেশের মধ্যে না থাকায়, কারোরই বিশেষ করে সরকার সু-দৃষ্টি না দেয়ায় যেনো জরাজীর্ণ, জীর্ণশীর্ণ হয়ে কালের বিবর্তনে এগুলি ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। জরুরী ভিত্তিতে এগুলির সংস্কার প্রয়োজন তা না হলে যেকোন সময় মারাত্বক ধরণের দূর্ঘটনার শিকার হবে মন্দিরঘেষা বসবাসরত সাধারণের।

এই ভোলাহাট থেকেই ইতিহাসের ‘পাল’ আমলের তামা’র লিপি সর্বপ্রথম উদ্ধার করা হয়েছিল। নয্য, গুপ্ত, পাল, সেন, সূর, সুলতানী, মোঘল সর্বশেষ ইংরেজ আমলের নিয়ম, স্বাক্ষী এবং সভ্যতার ধারক-বাহক হিসেবে কিছু কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে ইতিহাস। আম, রেশম, মাছ আর ধানের জন্য সুখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা ভোলাহাট।

সূত্রমতে, ৩৬২৩ মতান্তরে ৪৭৬৪ বর্গমাইল তথা ৪৭.৬৯ অথবা ১২৩.৫২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে সোয়া লাখ মানুষের বসবাস এ উপজেলা টিতে। ভৌগলিক বিভাজনে এককালে প্রাচীন পূনরোবর্ধন, দিনাজপুর, মালদহ, পূর্নিয়া, রাজশাহী এবং সর্বশেষ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত হয় ভোলাহাট। ১৮২৩ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ভোলাহাট উপজেলাটি ভারতের মালদহ জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে ভোলাহাটের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর উপজেলা অবস্থিত।

আরও পড়ুনঃ  রোববার ঈদ পালন করবে মাদারীপুরের ২৫ গ্রামের মানুষ

এই উপজেলার প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর। সবুজ আর সবুজে ঢেঁকে আছে পুরাটা জনপদ। উপজেলার সর্বত্রই চলাচল করলে মনে হবে প্রাচীনত্বের একটা গন্ধ যেনো কোথা থেকে ভেসে আসছে। দূর থেকে দেখে মনে হবে আধুনিক ভোলাহাটের মাটিতে রুগ্ন, অথচ তারা শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে শত শত বছরের পুরনো মন্দিরগুলো। তাদের শরীর থেকে প্রাচীন ‘গড়িয়া’ ইটগুলো যেনো খসে যেতে চাইছে। থানার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা শিব মন্দিরগুলোকে স্থানীয়রা ‘চামচিকা’ মন্দির বলে থাকে। এই প্রাচীন মন্দিরগুলোর প্রতি স্থানীয় মানুষের ও কর্তৃপক্ষের অযত্ন ও অবহেলার কারণে সকলেরই মনের ভিতর হতাশা পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রত্নসম্পদের যোগ্য প্রাচীন ইতিহাসের শক্তিশালী নিদর্শন সভ্যতার বার্তাবাহক শত শত বছরের পুরনো এই মন্দিরগুলোর কাছে গিয়ে মনে হবে, যেনো আমরা কোন গরুর গোহাল ঘরের দৃশ্য অবলোকন করছি।

আরও পড়ুনঃ  নির্বাচন নিয়ে লুকোচুরি খেলছে অন্তর্বর্তী সরকার : সিরাজগঞ্জে রিজভী

শত শত বছরের পুরনো ‘গড়িয়া’ ইটের তৈরী কারুকার্যখচিত মন্দিরগুলি আজো কালের স্বাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে যেনো হাত বাড়িয়ে কিছু পুরনো ইতিহাসের কথার স্বাগত জানায়। কথায় বলে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝিনা। সে ধরণের অবস্থা হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে। নইলে পরবর্তী প্রজন্মটিকে কোন কার্টুন ছবি অথবা কোন এ্যানিমেশন এঁকে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোলাহাটের ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা এই ধরণের ছিল। তাই আমাদের উচিৎ হবে একটু যত্নশীল হয়ে যে প্রত্নসম্পদ ভোলাহাটের যেস্থানগুলিতে বিদ্যমান রয়েছে, তার সংরক্ষণ ও যত্ন করা। সর্বোপরি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি দেয়া।

বাপদাদার বয়সের বয়োবৃদ্ধ রৃষিকেষ রবিদাসের মুখে জানা যায়, এগুলো আমরা জন্ম থেকেই দেখে আসছি। এগুলির কোনপ্রকার সৌন্দর্যের পরিবর্তন-পরিবর্ধন নেই। মন্দির গুলি আমার বাবা ও দাদাও একই কথা উল্লেখ করেন। হাজার বছরের পুরানা মন্দিরগুলি বর্তমান কালের স্বাক্ষী হয়ে ধ্বংসাবশেষ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও এর আশেপাশে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ী। আর এই মন্দিরঘেঁষা বসবাসরত সাধারণেরা অবজ্ঞা-অবহেলা করে কঠিন বিপদজনকের মধ্যে তাঁদের বসবাস অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা ঐ বসবাসকারীদের সাবধান করলেও কোনই ভ্রুক্ষেপ না করে তারা বসবাস অব্যাহত রেখেছে। যার কারণে যেকোন সময় মন্দির ধ্বসে মারাত্বক দূর্ঘটনার শিকার হবে বসবাসকারীদের।

আরও পড়ুনঃ  বড়াইগ্রামে ‘অধ্যক্ষ একরামুল আলম স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ এর যাত্রা শুরু

মন্দিরগুলির ব্যাপারে রাজকুমার রবিদাস বলেন, আমরা হিন্দুধর্মালম্বী এমনিতেই কোণ্ঠাসা হয়ে বসবাস করছি। জোর করে কাউকে কিছু বলতে পারি না। তারপরেও আমাদের ধর্ম আলাদা। ৫ আগষ্টের পর থেকে দেশের ভেতরে-বাইরে বসবাস করতে হচ্ছে খুব চিন্তাভাবনা করে। তাই সরকার বাহাদুরের নিকট আমাদের হিন্দুধর্মালম্বীদের আকুল মিনতি আমাদের বাপদাদার আমলের পুরানা ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে শিবমন্দিরগুলির আশু সংস্কারের জোর দাবী জানাচ্ছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় ১২০০ শতাব্দীতে (১১৫৬-১২০৬) নির্মিত অতি প্রাচীণ শিবমন্দিরগুলি ধ্বংসের প্রান্তে। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে মন্দিরগুলো। ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও যথাযথ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এগুলির প্রতি সু-দৃষ্টি দেয়ার আহবান জানিয়েছেন এলাকার সচেতনমহল।

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



সম্পাদক ও প্রকাশক : ইয়াকুব শিকদার

ঢাকা অফিস: ১২১,ডি.আই.টি, এক্সটেনশন রোড, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০। রাজশাহী অফিস: বহরমপুর (সিটি বাইপাস), জিপিও-৬০০০, রাজপাড়া, রাজশাহী। ই-মেইল: somoyerkotha24news@gmail.com, মোবাইল: 01727202675