স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে জমির বাঁধাকপি খেয়ে সাতটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অসুস্থ হওয়া ৬০টি গরুকে চিকিৎসা দিয়েছেন পশু চিকিৎসকরা। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে জেলার পবা উপজেলার বালিয়াগ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, মারা যাওয়া গরুগুলোর মালিক তিনজন। এর মধ্যে বালিয়া এলাকার মৃত মোসলেম মন্ডলের ছেলে জুয়েল রানার একটি, তার ছোট ভাই সোহেল রানার চারটি ও একই এলাকার মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে করিমের দুটি গরুর মৃত্যু হয়েছে।
সোহেল রানা জানান, পবার আশগ্রাম এলাকায় শরিফ ইসলামের দেড় বিঘা জমির বাঁধাকপি কিনে নেন জুয়েল, সোহেল ও করিম। দাম না থাকায় সেই জমিতে সাড়ে ৭ হাজার পিস বাঁধাকপি ১ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি।
বুধবার সকালে জমিতে শরিফ ও জুয়েলের মধ্যে কেনা-বেচা হয় বাঁধাকপি। এরপর তারা বাঁধাকপির জমিতে তিনজনের পালের ৭০ থেকে ৭৫টি গরু নামিয়ে দেন তারা। গরুগুলো বিকেল পর্যন্ত বাঁধাকপি জমিতে খেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিকেলে গরুগুলো বাড়িতে নিয়ে আসার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে রাস্তায় দুইটা গরু পড়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পড়ে মারাও যায়। এরপর বাড়িতে নিয়ে আসার পর আরও পাঁচটি গরু মারা যায়। সব মিলে তিনজন মালিকের সাতটি গরু মারা গেছে। এতে তাদের ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
অপরদিকে ঘটনার পর রাজশাহীর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লোকজন ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে এসে গরুগুলো দেখেছেন। এছাড়া তাদের চিকিৎসকরা গরুকে স্যালাইন থেকে শুরু করে সব ধরণের চিকিৎসা দিয়েছেন। বর্তমানে গরুগুলো স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তিনটি গরু জবাই করা হয়েছিল। তবে সেগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
স্থানীয় পশু চিকিৎসক মানিক জানান, তিনি বিকেলে এই এলাকায় গরুর চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। এ সময় জানতে পারেন বিষ দেওয়া বাঁধাকপি খেয়ে অনেকগুলো গরু অসুস্থ হয়েছে। সাতটি গরু মারা গেছে। ৬০টির বেশি গরুকে স্যালাইনসহ বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গরুগুলো এখন মোটামুটি সুস্থ রয়েছে। এখানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের স্যারেরা খবর পাওয়া মাত্র এসেছেন। তারা চিকিৎসা দিচ্ছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে জমির মালিক শরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ীহাটে আঞ্চলিক দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অসিম কুমার বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে গরুগুলো বাঁধাকপি খেয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে সেই বাঁধাকপির জমিতে বিষ দেওয়া ছিল। এর ফলে সাতটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অসুস্থ ৬০টি গরুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মৃত গরুগুলোর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকার ল্যাবে পাঠানো হবে। সেখান থেকে রিপোর্ট আসলে জানা যাবে গরুগুলোর কী কারণে মৃত্যু হয়েছিল।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আতোয়ার রহমান বলেন, পালের ৬০ থেকে ৬৫টি গরু বাঁধাকপি খেয়েছিল। সাতটি গরু মারা গেছে। জীবিত গরুগুলোর শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। এছাড়া যে গরুগুলো মারা গেছে সেগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
এ বিষয়ে কাশিয়াডাঙ্গা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, সাতটা গরু মারা গেছে। সেখানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লোকজন এসেছিলেন। তারা মৃত গরুগুলোর নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এলাকার পরিবেশ ভালো আছে। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।