স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না বলে অভিযোগ করছে দলটি। তবে এই নির্বাচনে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে আসছেন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা। বিএনপি বলছে, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে অনেকটা ঘোষণা দিয়েই সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী দিচ্ছে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো জামায়াত। নগরীর ২, ২৬, ২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বরসহ অন্তত সাতটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মহানগর জামায়াতের শূরা সদস্য মাজেদ আলী। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রার্থীর ছড়াছড়ি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। দলীয় সমর্থন আদায়ের চেষ্টায় মরিয়া তারা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো থেকেও দেওয়া হচ্ছে কাউন্সিলর প্রার্থী। আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে এই প্রার্থীদের পক্ষ থেকেও নানা চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতীয় পার্টিও প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৭ থেকে ১০টি ওয়ার্ডে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থী হতে ২৪ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আর কাউন্সিলর পদের জন্য মনোনয়ন ফরম তুলেছেন ৫৮ জন। শনিবার পর্যন্ত মেয়র পদের কোন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম তোলেননি। কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকেই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা হিসেবে পরিচিত।
মহানগর বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সালের সিটি নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টিতে জিতেছিলেন বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ওই নির্বাচনে মেয়র হন বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের ২১টিতেই বিজয়ী হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলররা।
বর্তমানে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতারা কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর হিসেবে আছেন তারা প্রত্যেকেই এবার নির্বাচনে আসছেন। বেশিরভাগই ইতোমধ্যে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। বাকিরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্তত ২৫টি ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর পদে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন বিএনপি নেতারা। কোন কোন ওয়ার্ডে বিএনপির একাধিক নেতা লড়াইয়ে নামছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপি নেতা মাহবুব সাঈদ টুকু। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটে আসছেন বদিউজ্জামান বদি। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর সোহরাব হোসেন এবং যুবদল নেতা আতাউর রহমান নির্বাচনে নামতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিএনপির সাবেক এমপি আজিজুর রহমানের ছেলে রেজাউল করিম নান্নুও এখানে নির্বাচন করবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনে আসছেন বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর দিলদার হোসেন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আবদুস সোবহান লিটন বিএনপির সমর্থক। তিনি এবারও নির্বাচনে আসছেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২০০২ সাল থেকে টানা চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন শাহ মখদুম থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি বেলাল আহমেদ। এবারও তিনি নির্বাচনে লড়তে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পচা। তিনি যুবদলের সাবেক নেতা। তিনিও ভোটে নেমেছেন। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটো। তিনি রাজশাহী মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন মহানগর বিএনপির সহসভাপতি তরিকুল আলম পল্টু। এবারও তিনি ভোটে আসছেন। ২০০২ সাল থেকে টানা চারবার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ারুল আমিন আজব। তিনি মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। তিনিও মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আশরাফুল হোসেন বাচ্চুও মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামসুন নাহার ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুসলিমা খাতুন বেলী। তারা দুজনই নির্বাচনে আসছেন। বেলী ইতোমধ্যে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। সামসুন নাহার তুলবেন রোববার।
মহানগর বিএনপির এক নেতা দাবি করেন, বিএনপি নেতাদের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন না করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তারা অযুহাত দিচ্ছেন যে, এটি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন নয়। তাই তাদের নির্বাচন করতে বাধা নেই। তিনি বলেন, বিএনপির অনেক জায়গারই কমিটি নেই। তাই যারা নির্বাচনে আসছেন তাদের অনেকেরই পদ-পদবী নেই, কিন্তু তারা বিএনপি করেন। তাদের নির্বাচন করতে বারণ করা হলেও কথা শুনছেন না। এ নিয়ে তারা বিব্রত।
নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশরাফুল আলম বাচ্চু বলেন, ‘আমি সক্রিয়ভাবে ছাত্রদল করেছি। তারপর বিএনপির পদে নেই। সব মানুষ আমাকে বিএনপির লোক হিসেবেই চেনে। বিএনপি নির্বাচনে আসছে না সেটা ঠিক আছে। আমি মানুষের সাথে থাকি। সে জন্যই নির্বাচনে আসছি।
সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও মহিলা দলের নেত্রী সামসুন নাহার দাবি করেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া কিংবা না নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির কেউ তাদের সঙ্গে কথা বলেননি। তাই নির্বাচনে আসছেন। তিনি বলেন, ‘আমার চেয়ে সিনিয়র নেতারা নির্বাচনে আসছেন। তারা মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। তাই আমিও নির্বাচনে আসছি। মনোনয়ন ফরম তুলব।’
বিএনপি নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে দলটির রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক এরশাদ আলী বলেন, ‘যারা নির্বাচনে আসছে তারা মনে মনে আওয়ামী লীগ। তারা বিএনপির লোক হতে পারেন না। আমরা তাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’