• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • somoyerkotha24news@gmail.com
  • +880-1727-202675

খবরের বাহন হিসেবে গণমাধ্যমের চেয়ে মোবাইল সেটের ওপর মানুষের নির্ভরতা বেশি

প্রকাশ: শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ৩:৪০

খবরের বাহন হিসেবে গণমাধ্যমের চেয়ে মোবাইল সেটের ওপর মানুষের নির্ভরতা বেশি

খবরের বাহন হিসেবে প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে মোবাইল সেটের ওপর মানুষের নির্ভরতা বেশি। সামগ্রিকভাবে গনমাধ্যমের ওপর মানুষ আস্থা হারাননি, তবে রাজনৈতিক, সরকারি ও প্রভাশালীদের হস্তক্ষেপকে বন্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে বড়ো অন্তরায় হিসেবে দেখছেন তারা।

জুলাই আন্দোলনে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে জনমতে ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে পাঠক, দর্শক ও শ্রোতাদের মনোভাব জানার জন্য পরিচালিত এক জরিপে এ চিত্রি উঠে এসেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এর জন্য জরিপটি করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। গণমাধ্যমের ব্যবহার নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপকভিত্তিক এ ধরনের জরিপ দেশে এটিই প্রথম।

এতে দেখা গেছে মানুষ মুদ্রিত খবরের কাগজ কম পড়লেও অনলাইন সংস্কারণ পড়ছেন মোবাইলে। জাতীয় দুর্যোগ বা সংকটে তথ্য খোঁজার জন্য এখনো মানুষ চোখ রাখেন টেলিভিশনের পর্দায়। তবে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে রেডিও’র প্রাসঙ্গিকতা তলানিতে। জরিপে গণমাধ্যমকে স্বাধীন, পক্ষপাতহীন, সরকারি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত দেখার আকাঙ্খা ব্যক্ত হয়েছে। তবে বেশিরভাগ উত্তরদাতাই মনে করেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত।

গণমাধ্যম বিষয়ক জাতীয় এ জনমত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৩ শতাংশ জানিয়েছেন তারা মুদ্রিত সংবাদপত্র পড়েন না। কারণ হিসেবে ৪৬ ভাগ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, খবরের কাগজ পড়ার প্রয়োজন মনে করেন না তারা। টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এ হার ৫৩ শতাংশের বেশি। তবে জরিপে অংশ নেওয়া ৬৫ ভাগ মানুষ জানিয়েছেন তারা টেলিভিশন দেখেন।

পরিসংখ্যানে রেডিও’র অবস্থা বেশি নাজুক। ৯৪ শতাংশ জানিয়েছেন তারা রেডিও শোনেন না। তাদের ৫৪ শতাংশ বলেছেন তারা রেডিও শোনার প্রয়োজন মনে করেন না। প্রায় ৩৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী রেডিও সেটের অপ্রাপ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন।

স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রীয় গণমাদ্যম হিসেবে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন সরকারের জাতীয় সম্প্রচার কার্যক্রম চলমান থাকলেও বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিকের বাকু ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা অধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হলে গণমাধ্যমের বিস্তার লাভ করে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে তথ্য অনুযায়ী দেশের মিডিয়া তালিকাভুক্ত পত্র পত্রিকার সংখ্যা ৭ শত ২৪ টি। তার মধ্যে ঢাকায় ৩ শত ৮৫ টি এবং ঢাকার বাইরে ৩ শত ৩৯ টি। তন্মধ্যে অষ্টম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ বাস্তবায়নকারী পত্রিকার সংখ্যা ১ শত ৮৫টি আর টেলিভিশনের সংখ্যা ৪৬ টি এবং তথ্য অধিদফতরের ওয়েব সাইট থেকে জানা যায় নিবদ্ধিত অনলাই মিডিয়া সংখ্যা ২ শত চারটি। বিগত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষে নামে-বেনামে অসংখ্য পত্র-পত্রিকা, অনলাইন টেলিভিশন, নিউজ পোর্টাল চালু হয়েছে। ফলে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের পরিবর্তে অনলাইন গণমাধ্যম ব্যাপকহারে অপতথ্য বা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকলক্ষেত্রে গণমাধ্যম একটি অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এসব থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে সরকার একটি কমিশন গঠন করেছেন। তার নাম হলো গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করবার লক্ষ্যে ২০২৪ সনের ১৮ নভেম্ব গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদনক্রমে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কমিশন প্রধান সাংবাদিক কামাল আহমেদ-এর নেতৃতে ১১ সদস্য বিশিষ্ট গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিকট পেশ করবেন। কমিশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সম্পাদক পরিষদের সদস্য, নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) প্রতিনিধি, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন ওনার্স (অ্যাটকো), জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, টেলিভিশনের সিইও, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, জেলা সাংবাদদাতা, এমনকি শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রয়েছেন।

সে মতে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। সে লক্ষ্যে কমিশন ঢাকায় ১১২ সার্কিট হাউস রোডস্থ তথ্য ভবনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। উক্ত কমিশন কর্তৃক গণমাধ্যম স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যম ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুপারিশ করা হবে। তাই গণমাধ্যম সংস্কার সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ জরিপের মাধ্যমে দেশের জনগণের গণমাধ্যম সংক্রান্ত মতামত সরবরাহ করা হবে। সে লক্ষ্যে “গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন” উক্ত জরিপ পরিচালনার নিমিত্ত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর নিকট অনুরোধ করে।

চলতি বছর ০১-০৭ জানুয়ারি গণমাধ্যম বিষয়ে জনমত বিবিএস দেশব্যাপী জরিপ পরিচালিত হয়। এ জরিপে দেশের ৬৪ জেলার প্রতিটি জেলা হতে ৩৬ টি করে মোট ২৩০৪ টি নমুনা এলাকা (পিএসইউ) দৈবচয়ন পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হয়েছে এবং প্রতিটি নমুনা এলাকা (পিএসইউ) হতে নমুনায়নের মাধ্যমে নির্বাচিত ২০ টি সাধারণ খানা অর্থাৎ মোট ৪৬,০৮০ টি খানা হতে তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়। উল্লেখ্য, নির্বাচিত প্রতিটি সাধারণ খানা হতে ১০ বছর বেশি বয়সি সকল সদস্যের (পুরুষ এবং মহিলা) মধ্য থেকে ক্রিশ গ্রিড (Kish Grid) পদ্ধতিতে একজন উত্তরদাতা নির্বাচন করে তাদের নিকট হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের বিস্তার, মানুষের সংবাদ গ্রহণের অভ্যাসের পরিবর্তন, গণমাধ্যমের ওপর মানুষের আস্থা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে।

তথ্য সংগ্রহকালীন নির্বাচিত খানা সদস্যদেও খানায় অনুপস্থিতি, উত্তর দিতে অস্বীকৃতি ইত্যাদি কারণে ১০৩৫ টি খানার তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। অবশিষ্ট ৪৫ হাজার ৪৫ টি খানার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে, জরিপে ২.২৫ শতাংশ কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, জরিপের স্যাম্পলিং ডিজাইনে ১০ শতাংশ প্রতিক্রিয়া ধরা হয়েছিল।

এতে দেখা গেছে মুদ্রিত খবরের কাগজ না পড়লেও ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা মোবাইল ফোনে অনলাইন সংস্কারণ দেখেন। কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাব-এ পত্রিকার অনলাইন সংস্কারণ দেখেন বলে জনিয়েছেন আড়াই শতাংশ উত্তরদাতা। সামগ্রিকভাবে ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানান তারা গণমাধ্যমের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের হার ৭ শতাংশ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে খবরের জন্য ৩১ শতাংশ উত্তরদাতার আস্থা রয়েছে ফেসবুকে। এরপর ইউটিউবে, ১৬.৫ শতাংশ। কোনো কিছু শিখা বা জ্ঞানার্জনের জন্য প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে শিক্ষকের ওপরই ভরসা বেশি। এক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ উত্তরদাতার কাছে শিক্ষকরাই সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য।
#
লেখক: মোহাম্মদ সায়েম হোসেন, সিনিয়র তথ্য অফিসার তথ্য অধিদফতর, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা। সংযুক্ত (গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন)
পিআইডি ফিচার

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



সম্পাদক ও প্রকাশক : ইয়াকুব শিকদার

ঢাকা অফিস: ১২১,ডি.আই.টি, এক্সটেনশন রোড, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০। রাজশাহী অফিস: বহরমপুর (সিটি বাইপাস), জিপিও-৬০০০, রাজপাড়া, রাজশাহী। ই-মেইল: somoyerkotha24news@gmail.com, মোবাইল: 01727202675