স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেছেন, সুশীলগিরি ভালো। তত্ত্বধায়ক সরকারের বিতর্কিত উপদেষ্টাদের স্পষ্ট ভাষায় পয়গাম দিতে চাই- মাত্রাতিরিক্ত সুশীলগিরি করবেন না। মব জাস্টিসের কথা আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন না।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে রাজশাহী নগরীর মাদ্রাসা মাঠে খেলাফত মজলিশ রাজশাহী জেলা শাখা আয়োজিত গণ-সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মামুনুল হক বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলার মানুষ যখন সেই মহা সুসংবাদ পেল, বেলা দুটার দিকে শেখ হাসিনা পালিয়েছে। এক ঘণ্টার মধ্যে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া একটাই দৃশ্য মঞ্চায়িত হয়েছে। কোন নেতার ঘোষণা লাগে নাই, কোন আলেমের আহ্বানের প্রয়োজন হয় নাই, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত যত ভাস্কর্য বা মূর্তি ছিল সব ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। তারা মুসলমানের জনপদ থেকে ভাস্কর্য নামক মূর্তি ভেঙে গুড়িয়েছে। কিন্তু হিন্দুদের মন্দিরে, তাদের উপাসনালয়ে রক্ষিত মূর্তির গায়ে একটা ফুলের টোকাও দেয়নি। এই দুটি চিত্র বাংলাদেশের মানুষকে মনে রাখতে হবে।
খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, আগস্টের বিপ্লব ছিল অসাম্প্রদায়িক বিপ্লব। আগস্টের বিপ্লব ছিল সকল ধর্ম, বর্ণের সম্মিলিত বিপ্লব। আর দ্বিতীয় প্রতীকী চিত্র ছিল হিন্দুদের মন্দিরে আঘাত করে নাই। তাদের মূর্তি ভাঙে নাই। মুসলমানদের জনপদে কোনো মূর্তি আস্ত রাখে নাই। পাঁচ তলার সমান বিশাল দেবতা দাঁড় কড়িয়ে রেখেছিল। ওই দেবতার গলায় রশি বেঁধে রাজপথে ভূপাতিত করা হয়েছে। ওই দেবতার মাথায় উঠে বাংলার তৌহিদী জনতা প্রস্রাব করে চরম অপমান পেশ করা হয়েছে। এগুলো ছিল আগস্ট বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য। কেউ যদি আমার আগস্ট বিপ্লবকে, জুলাই বিপ্লবকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করবার চেষ্টা করে তৌহিদী জনতা সেই অপচেষ্টাকে রুখে দেবে; রুখে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশকে আমরা বলব-আমাদের এখান থেকে পলাতক শত শত খুনের মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি (হাসিনা)। যার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করেছেন বাংলাদেশের আদালত। সেই পলাতক আসামিকে আপনারা প্রশ্রয় দিয়ে ক্ষান্ত হননি। তাকে আপনারা (ভারত) বধূর মত যত্ন করে রেখেছেন। রাখেন, আপনাদের ১৬ বছর যে সার্ভিস দিয়েছে। গোটা বাংলাদেশটাকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যদি এভাবেই নাক গলাতে থাকে বাংলার মানুষ আপনাদের সঙ্গে সৌজন্যতামূলক কোনো সম্পর্ক রাখতে পারবে না। আপনাকে আমার দেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। কুটনৈতিক সৌজন্য রক্ষা করতে হবে। আর যদি আমার বাংলাদেশকে মনে করেন আপনার কৃতদাসী আমলার মত, আর বাংলাদেশের স্বাধীন পতাকায় আপনারা অগ্নিসংযোগ করবেন, আমার আগরতলার উপ-হাইকমিশনে এভাবেই আক্রমণের পরে আক্রমণ চালিয়ে যাবেন বাংলার শাহজালালের সন্তানেরা নীরবে বসে থাকবে না।
তিনি বলেন, কলকাতায় নির্বাসিত বিতর্কিত ইসলাম বিরোধী, চরম বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের প্রতি বাংলার মাটিতে বসে পিরিত দেখান, মনে রাখেন এদেশের মানুষ সহনশীল। কিন্তু এদেশের মানুষ দুর্বল নয়। আগস্ট বিপ্লবের পরে ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাংলার মাটিতে বসে আগস্ট বিপ্লবের পর এইদেশের মুসলমানদের বুকের উপর দাঁড়িয়ে তসলিমা নাসরিনের মত কুখ্যাত লেখিকাকে আবার বাংলাদেশের মাটিতে প্রকাশ্যে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে এদেশের মানুষ কোনোদিন বরদাশত করবে না।
মামুনুল হক বলেন, তত্ত্বধায়ক সরকারের বিতর্কিত উপদেষ্টাদের স্পষ্টভাষায় পয়গাম দিতে চাই আমরা ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রাজপথে রক্ত দিয়ে আজ এই পর্যন্ত দাঁড়িয়েছি। আপনাদের কোনো করুণার ভিখারি আমরা নই। যদি আমাদের করুণার পাত্র মনে করেন ওপেন চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করলাম আসুন আমাদেরকে মোকাবিলা করে দেখুন। আমাদের মোকাবিলা করা এতো সহজ হবে না।
তিনি বলেন, এদেশে আমরা ইসলামকে নিয়ে বাঁচব। ইসলামের গৌরব নিয়ে বাঁচব। মনে রাখতে হবে ঐতিহাসিকভাবে বিগত ২৫০ বছরের ইতিহাস প্রমাণ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও ইসলাম একই সূত্রে গাঁথা। মনে রাখবেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ইসলাম এক সূত্রে গাঁথা। যদি বাংলাদেশে ইসলাম আক্রান্ত হয়, তাহলে স্বাধীনতা বিপন্ন হবে। সুতরাং বাংলাদেশে যারা ইসলাম বিরোধী, তারাই স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। যারা বাংলাদেশে ইসলামকে সহ্য করতে পারে না, তারাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার দুশমন। আমরা ছাড় দেব, কিন্তু ছেড়ে দিয়ে কথা বলব না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যদি বার বার ঘায়েল করার চেষ্টা করা হয়- মনে রাখবেন বাংলাদেশে আমরা ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করি না। রক্তের বিনিময়ে কেনা এই জমিনে আমরা মালিকানার দাবি নিয়ে অধিকার নিয়ে বসবাস করি। ফ্যাসিবাদের দোসর, ভিনদেশে গৃহমত, ইসলাম বিরোধী অপশক্তি এদের সকল রসুনের গোড়া এক জায়গায়। শেখ হাসিনার গোড়া যেখানে, তসলিমা নাসরিনের শেকড়ের গোড়া সেখানে। কাজেই শেখ হাসিনা ও তসলিমা নাসরিন যৌথ প্রযোজনায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তারা আবার নতুন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। দেশীয় দোসরেরা তসলিমা নাসরিনের নামে, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে পুনর্বাসনের পাঁয়তারা করলে বাংলাদেশের মানুষ সেটাকে রুখে দেবে ইনশাআল্লাহ।