অনলাইন ডেস্ক : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থে একদল সাংবাদিক ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার সাথে সহযোগিতা করেছে, তথ্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে এবং হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার জন্য মিথ্যা ন্যারেটিভ (বর্ণনা) তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, জুলাইয়ের অভ্যুত্থানসহ ২০০৯ সাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাবলী চলাকালীন, সাংবাদিকদের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী শাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ন্যারেটিভ তৈরি করে স্বৈরাচারী সরকারের কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেয়ার জন্য কাজ করেছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘এই সাংবাদিকরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছিল যেখানে জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং সহিংসতাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।’
আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম চাই’ নামের প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘ফ্যাসিস্ট মিডিয়া ন্যারেটিভস: আ রেট্রোস্পেক্টিভ অন জুলাই ১-৩৬’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বক্তব্য রাখছিলেন।
শফিকুল আলম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়, বিশেষ করে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় রাজনৈতিক ঘটনাবলীর সময় কিছু সাংবাদিক ক্ষমতাসীন সরকারের দালাল হিসেবে কাজ করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে, কিছু সাংবাদিক সুবিধার বিনিময়ে স্বৈরশাসকের সেবা করেছেন।’
তিনি সমালোচনা করে বলেন যে, অতীতের শাসনামলে যোগ্যতার পরিবর্তে রাজনৈতিক বিবেচনায় মিডিয়ায় নিয়োগ করা হয়েছিল, যার ফলে সরকারের স্বার্থ রক্ষাকারী পক্ষপাতদুষ্ট সাংবাদিকতার উত্থান ঘটে।
আলম বাংলাদেশে মিডিয়ার ভূমিকা পরিবর্তনের আহ্বান জানান এবং দায়িত্বশীল ও স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন, যেখানে মিডিয়া আউটলেটগুলো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা সরকারের প্রশংসা করার পরিবর্তে তথ্য উপস্থাপন ও গঠনমূলক সমালোচনা করার ওপর মনোনিবেশ করবে।
সরকারের প্রশংসা করার পরিবর্তে গঠনমূলক সমালোচনা করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে, আমি লক্ষ্য করেছি যে, একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র অধ্যাপক ইউনূসের প্রশংসা করে দুটি বা তিনটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের ফোন করে বলেছি যে, এটি করার কোনও প্রয়োজন নেই। বরং গঠনমূলক সমালোচনা করুন। আমরা চাই আপনারা প্রতিটি বিষয় তুলে ধরুন। প্রশংসার কোনও প্রয়োজন নেই।’
তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে সাংবাদিকতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমরা বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করতে চাই। এ কাজটি করার জন্য, অন্তর্র্বর্তী সরকার দ্বিতীয় ধাপে গতকাল ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। আমরা চাই সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ এই প্রচেষ্টায় অবদান রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা এমন একটি দেশ গড়ে তুলি যেখানে সকলের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে, যেখানে কেউ নিশ্চুপ থাকবে না, যেমনটি গত ১৫ বছর ধরে হয়ে আসছে।’
প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রধান প্রতিবেদক আব্বাস উদ্দিন নয়ন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবু সাদিক কায়েম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডিইউজেএ) সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি।
প্রেস সচিব অতীতে সাংবাদিকরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল তা স্বীকার করে নতুন করে শুরু করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতা এক ভয়াবহ সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে। আমরা এটিকে পেছনে ফেলে এমন একটি বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই যেখানে নানা ধরণের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে। আমরা সমালোচনাকে স্বাগত জানাই কিন্তু জোর দিয়ে বলি যে, এটি হতে হবে তথ্যের উপর ভিত্তি করে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে পুনর্মিলনের পথ উন্মুক্ত করে একটি ন্যায় ভিত্তিক জাতি গঠন করা।’
শফিকুল আলম অতীতের উলে¬খযোগ্য ঘটনা এবং ব্যর্থতা উপেক্ষা না করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতির রেকর্ড রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা রক্ষী বাহিনীর নৃশংসতার প্রতিবেদন রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা আবার ব্যর্থ হতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন আমাদের মতো একই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি না হয়। কোনও সাংবাদিকের কখনও ক্ষমতার দালাল হিসেবে কাজ করা উচিত নয়। এই সরকার একটি নজির স্থাপন করতে চায়। আমরা যদি ভুল করি, তা প্রকাশ করুন। সাংবাদিকতা এটাই হওয়া উচিত।’
প্লাবন প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র তারেক ১ থেকে ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে প্রকাশিত ১৫০ টিরও বেশি নিবন্ধ বিশ্লেষণ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, যা স্বৈরাচারী ন্যারেটিভকে বৈধতা দিয়েছিল।
কালের কণ্ঠ, জনকণ্ঠ এবং ভোরের কাগজের মতো সংবাদপত্রের কিছু নির্দিষ্ট প্রতিবেদন কিভাবে ফ্যাসিবাদী সরকারের এজেন্ডা প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছিল সে বিষয়টি তিনি তুলে ধরেন।-বাসস