অনলাইন ডেস্ক : স্বাদ আর গন্ধ যাতে পুরোমাত্রায় বজায় থাকে, সে জন্য অনেকেই প্যাকেটজাত গোলমরিচ গুঁড়ো কেনেন না। টাটকা গুঁড়িয়ে দিলে গন্ধ ভাল হয় বলে, গোলমরিচ গোটা অবস্থাতেই কিনে রান্না করার সময় গুঁড়িয়ে নেন অনেকে।
গোলমরিচের দাম নেহাত কম নয়। আবার গোলমরিচের চাহিদাও বেশি। তাই ভেজাল মিশিয়ে লাভের অঙ্ক ঘরে তোলার সুযোগও রয়েছে বেশি।
স্বাদের জগতে কাঁচালঙ্কা, শুকনো লঙ্কার পাশাপাশি গোলমরিচের ঝালেরও অনুরাগী নেহাৎ কম নয়। যাঁরা খেতে ভালবাসেন বা যাঁরা রান্না করতে ভালবাসেন তাঁরা জানেন, প্রতিটি উপকরণেরই স্বাদ ঝাল হলেও তাদের ঝালের ধরন এবং গন্ধ আলাদা। যাঁরা রান্নায় অতিরিক্ত মশলাদার বা চড়া স্বাদ ততটা ভালবাসেন না, গোলমরিচের স্বাদ-গন্ধ তাঁদের অনেকেই পছন্দ করেন। সেই সব রান্নায় ঝাঁজ, ঝাল আর নিজস্ব গন্ধ দিয়ে স্বাদে অন্য মাত্রা যোগ করে গোলমরিচ। সেই স্বাদ আর গন্ধ যাতে পুরোমাত্রায় বজায় থাকে, তাই অনেকে গোলমরিচ আগে থেকে গুঁড়িয়েও রাখেন না। বাজারে যে প্যাকেটজাত গুঁড়ো গোলমরিচ পাওয়া যায়, তা-ও কেনেন না। গোলমরিচ টাটকা গুঁড়িয়ে দিলে গন্ধ ভাল হয় বলে, গোটা অবস্থাতেই কিনে রান্না করার সময় গুঁড়িয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু অন্য অনেক খাবারের উপকরণের মতো গোটা গোলমরিচেও ভেজাল মেশানো হচ্ছে আর সেই ভেজাল কেবল পেঁপের বীজের মতো নির্বিষ নয়!
গোলমরিচে ভেজাল কেন?
মশলাপাতির দেশ ভারত। ভারতীয়েরা যেমন রান্নায় মশলা খেতে ভালবাসেন, তেমনই ভারতে মশলার জোগানও রয়েছে অনেক। সেই সব মশলার মধ্যে কিছু দামি। কিছু মহার্ঘ্য, কিছু সহজলভ্য বলে দাম তুলনায় কম। গোলমরিচের দাম নেহাত কম নয়। ১ কেজি ভাল গোলমরিচের দাম ৯০০ টাকার আশপাশে। আবার গোলমরিচের চাহিদাও বেশি। তাই ভেজাল মিশিয়ে লাভের অঙ্ক ঘরে তোলার সুযোগও রয়েছে বেশি।
কী কী ভেজাল থাকতে পারে গোলমরিচে?
গোলমরিচের নকল দানার ওজন বৃদ্ধি করার জন্য খনিজ তেল ব্যবহার করা হয়।
পেঁপের বীজ
গোলমরিচে যে পেঁপের বীজ মেশানো হয়, তা অনেকেই জানেন। গোলমরিচ এবং পেঁপের বীজ— দু’টিই দেখতে এক রকম। পেঁপের বীজ সহজলভ্যও। সাদা চোখে পার্থক্য বোঝা যায় না। কিন্তু দু’টিকে আালাদা করা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ রূপিত কৌর।
একটি স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে জল ভরে তাতে গোটা গোলমরিচ ফেলে দেখুন। যদি মরিচের দানা ভেসে ওঠে তবে সেগুলি নকল, যেগুলি তলায় থিতিয়ে যাবে সেগুলিই আসল গোলমরিচ।
গোলমরিচের নকল দানার ওজন বৃদ্ধি করার জন্য এবং গোলমরিচের দানা যাতে দেখতে ভাল লাগে, সে জন্য তাতে খনিজ তেল ব্যবহার করা হয়। পুষ্টিবিদ কৌর বলছেন, খনিজ তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই সে বিষয়ে সতর্ক হওয়া দরকার।
কী ভাবে বুঝবেন?
এ ক্ষেত্রেও জলই কাজে লাগবে। একটি পাত্রে জল নিয়ে তাতে গোলমরিচগুলি ঢেলে ভাল করে গুলিয়ে দিন। কিছু ক্ষণ পরে যদি দেখেন, জলের উপরিভাগে তেলের আস্তরণ ভাসছে, তবে বুঝবেন গোলমরিচে খনিজ তেল মেশানো হয়েছে।
গোলমরিচের গুঁড়োতেও থাকতে পারে ভেজাল।
অনেক নিম্নমানের গুঁড়ো মশলার মতোই গোলমরিচের গুঁড়োতেও কাঠের গুঁড়ো মেশানো হয়। কৌর বলছেন, তাতে স্বাদ তো কমেই, বিষয়টি হজম বা স্বাস্থ্যের জন্যও উপযুক্ত নয়।
জল ভর্তি পাত্রে গুঁড়ো গোলমরিচ এক চামচ দিয়ে দেখুন। কাঠের গুঁড়ো জলের উপরের অংশে ভেসে থাকবে। গোলমরিচের গুঁড়ো পড়ে থাকবে পাত্রের নীচে। এ ভাবে বোঝার পরে ওই গোলমরিচ ব্যবহার করতে না পারলেও পরবর্তী কালে কেনার সময়ে সাবধান হতে পারবেন।
চাহিদার সঙ্গে জোগানের সমতা বজায় রাখতে গিয়ে অনেক সময়েই গোলমরিচ পুরোপুরি পাকার আগেও তা গাছ থেকে সংগ্রহ করে নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে কাঁচা গোলমরিচকে শুকোনোর পরে তাতে কালচে ভাব আনতে সিসার পরত ব্যবহার করেন অনেকে। তাতেও গোলমরিচে চকচকে ভাব আসে। আবার নকল মরিচে সিসার পরত দিলে তার ওজনও বাড়ে। কৌর জানাচ্ছেন, সিসা শরীরে গেলে তা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে।
সাবধান থাকলেও অনেক কিছু চোখ এড়িয়ে যায়।
সাবধান থাকলেও অনেক কিছু চোখ এড়িয়ে যায়। —ফাইল চিত্র।
কী ভাবে বুঝবেন?
গোলমরিচে সিসা থাকলে তা বাড়িতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বোঝা সম্ভব নয়। তা বুঝতে হলে গবেষণাগারে পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
সাবধান হবেন কী করে?
সাবধান থাকলেও অনেক কিছু চোখ এড়িয়ে যায়। আবার অনেক সময়ে সাবধান হওয়া সম্ভবও হয় না। ভেজাল এড়াতে সে ক্ষেত্রে—
১। বিশ্বস্ত জায়গা থেকে কিনুন।
২। দামে ছাড় পাচ্ছেন,সস্তায় পাচ্ছেন বা কোনও কিছু বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে দেখে গোলমরিচ কিনতে যাবেন না।
৩। প্যাকেটজাত গোলমরিচ কিনলে সব সময় প্যাকেটে সরকারি শংসাপত্র দেখে নিন। ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’ (এফএসএসএআই)-এর ছাপ থাকবে সরকার স্বীকৃত খাদ্যদ্রব্যের প্যাকেটে।