অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর উত্তরায় দুই মিনিটের মিশনে চায়নিজ নাগরিক ওয়াং বু (৩৭) হত্যা করে সাদা গাড়িতে পালিয়ে গেছেন অন্য দুই চীনা নাগরিক। ওই চীনা নাগরিককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের ৬৩ নম্বর বাসার নিচতলায় গতকাল বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা ৭ মিনিট থেকে ১২টা ৯ মিনিট পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডের মিশন পরিচালিত হয়। নিহত ওই ব্যক্তি ইট, বালু ও পাথরের ব্যবসা করতেন।
পরবর্তী সময় হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে উত্তরা পশ্চিম থানা-পুলিশ। তারপর একে একে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), র্যাবের গোয়েন্দা, ডিবিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
থানা-পুলিশ ও আশপাশের লোকজন আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ছয়তলার পুরো ভবনটিতে চীনা নাগরিকেরাই বসবাস করেন। তবে বাড়িটির কেয়ারটেকার ও চীনা নাগরিকদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন তরিকুল ইসলাম নামের এক যুবক। তাঁর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন রবিন নামের আরেক যুবক।
তরিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে ছিলাম। বুধবার রাত ১টার দিকে আমি এই বাসায় আসছি।’
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে আমরা খুনের বিষয়টি জানতে পারি। দুপুরে খাওয়ার সময় আমার বস লিও ওপর থেকে নিচে নামেন। তখন ওয়াং বুকে ডাকতে গিয়ে দেখেন রুমের দরজার খোলা। তারপর রুমে ঢুকে তিনি দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় ওয়াং বুর লাশ পড়ে রয়েছে। পরে পুলিশকে খবর দিলে বেলা দেড়টার দিকে পুলিশ আসে।’
তরিকুল বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, রাত ১২টা ৭ মিনিটের নিহত চীনা নাগরিকের আরও কাছে দুজন চীনা নাগরিক আসেন। এর দুই মিনিটের মাথায় তাঁরা দৌড়াদৌড়ি করে পালিয়ে যান।’
পালিয়ে যাওয়া দুজনের পরিচয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তরিকুল বলেন, ‘যারে মারছে ওই (নিহত ব্যক্তি) তাঁদের চিনেন। বাকি কেউ তাঁদের চিনেন না।’
কবে বাসার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত ১৮ তারিখে (১৮ ফেব্রুয়ারি) নিহত চীনা নাগরিক বাসায় উঠেছেন। তবে কত টাকা ভাড়ায় উঠেছেন, তা সঠিক আমি বলতে পারব না।’
খুনিরা বাসায় কীভাবে প্রবেশ করেছে এবং বের হয়েছে—জানতে চাইলে বাসার কেয়ারটেকার তরিকুল বলেন, ‘খুনিরা ঢোকার সময় ওয়াং বু নিজেই গেট খুলে দিয়েছিল। পরে আর গেট লাগানো হয়নি। ওই সময় রবিন ভাই ছিল। তিনি তখন ওপরে চলে গেছিলেন।’
তরিকুল আরও বলেন, ‘বাড়িটির পঞ্চম তলায় আমার বস লিও থাকেন। এ ছাড়া বাকি চার-পাঁচজন যারা আছেন, সবাই চীনা নাগরিক।’
২০১৯ সালে ওয়াং বুর কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের আগে একটি সাদা নোয়া গাড়িতে ওই দুই খুনি বাসায় এসেছিল। তারপর গেটের বাইরে রাস্তায় গাড়ি রেখেই তারা দুজন বাড়িতে প্রবেশ করে। ওই সময় গাড়িটির সিগন্যাল বাতিও জ্বলছিল। হত্যাকাণ্ডের পর তারা ওই গাড়িতে করেই দ্রুত পালিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘পালিয়ে যাওয়া দুজনের পাসপোর্ট পেয়েছে পুলিশ। তারা হত্যাকাণ্ডের পর দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।’
সরেজমিন ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছয়তলা ভবনটির নিচতলার ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), থানা-পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কাজ করছেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলের ওই বাড়ির সামনে এসে ভিড় জমান উৎসুক জনতা।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওয়াং বুকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৬টা ১৪ মিনিটে ঘটনাস্থলের ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখানে কাউকে এলাউ করব না। এ বিষয়ে কোনো কথাও বলব না। আপনারা এখানে থাকলে প্রবলেম। আপনাদের সঙ্গে ব্রিফ করবেন ডিসি মিডিয়া।’
সর্বশেষ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সিআইডি, পিবিআই ও থানা-পুলিশকে ঘটনার আলামত সংগ্রহ করতে দেখা যায়। নিহতের মরদেহ ফ্ল্যাটটির একটি রুমেই পড়ে ছিল।
আলামত সংগ্রহের পর সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের পরিদর্শক শেখ রাসেল কবীর বলেন, ‘নিহতের গলায়, বাম কাঁধে, ডান হাতে, বাম সিনা ও বাহুতে মোট ১১টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে ঘাড়ের মধ্যেই সব থেকে বেশি গুরুতর আঘাত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ছুরি মেরে তাঁকে ১৪-১৫ ঘণ্টা আগে হত্যা করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে রাসেল কবির বলেন, ‘নিহতের দুটি রক্তমাখা মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তার কিছু রক্তমাখা কাপড়চোপড়, শরীরের বিভিন্ন জায়গার আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব আলামত আমরা রাসায়নিক, ডিএনএ পরীক্ষা করব। সেই সঙ্গে ফিঙ্গার ও ফুট প্রিন্ট করা হবে।’-আজকের পত্রিকা