অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু স্থানীয় সরকারের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন
তিনি বলেন, বিগত প্রায় ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নিষ্ঠুরতা চরমে উঠেছিল। অমানবিকতা, হত্যা, খুন, গুমসহ নানা ধরনের অত্যাচার-নিপীড়নে দেশের মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছিল।
টুকু বলেন,‘বিএনপি’র হাজার হাজার নেত-কর্মীদের অপরিসীম আত্নত্যাগ ও চব্বিশের জুলাই-আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে বিশ্বের নিকৃষ্টতম স্বৈরশাসকের পতন ও দেশ ছেড়ে পলায়নের কারণে বাংলাদেশের মানুষ বর্বর শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে। বাক-স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে।’
শহিদদের আত্নত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে সবার আগে (যত দ্রুত সম্ভব) জাতীয় নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হলেই শহিদদের আত্নত্যাগ পূর্ণতা পাবে।’
আজ রোববার দুপুরে সিরাজগঞ্জের বাজার স্টেশন রোডের মুক্তির সোপানে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র উদ্যোগে আয়োজিত সিরাজগঞ্জে জুলাই-আগস্ট ছাত্র গণআন্দোলনে শহিদ পরিবারবর্গের নিকটাত্মীয় ও স্বজন এবং আহতদের সাথে সাক্ষাতকার ও সহযোগিতা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় সিরাজগঞ্জে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিএনপি’র শীর্ষ স্থানীয় এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হচ্ছে সুবিধাবাদী, লুটপাটকারী, গণতন্ত্র হরণ ও গণহত্যাকারী ও পলায়নকারী দল।একাত্তরে এ দলটির প্রধান নেতা স্বেচ্ছায় হানাদার বাহিনীর নিকট আত্নসমর্পণ করে নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েছিল। শীর্ষ নেতারা পালিয়ে পাশ্ববর্তী দেশে গিয়ে আরাম-আয়েশে জীবন যাপনে মত্ত ছিল।
পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনেও তারা পালিয়েছিলো এবং জুলাই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাসহ পাতি নেতা, ছোট নেতা সবাই পালিয়ে গেছে, অনেকেই গর্তের ভেতর লুকিয়েছে। কিন্তু বিএনপি পালায় না, বিএনপির একজন কর্মীও কোনদিন পালিয়ে যায়নি,বিএনপি হচ্ছে ফিনিক্স পাখির মতো, ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে বারংবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’
শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই হচ্ছেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংস্কারক এ কথা উল্লেখ করে টুকু বলেন, ‘তিনি (শহিদ জিয়া) বাকশাল থেকে জাতিকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
আপোসহীন নেত্রী ও বিএনপি’র চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে নয় বছর লাগাতার সংগ্রাম করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলেন।
বিএনপি’র এই নেতা বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করেছেন, তার চিন্তা-চেতনা, সব কথা ও বক্তব্য জনগণ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এবং তা গ্রহণ করছেন। তিনি ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন, তাতে সব সেক্টরে সংস্কারের কথা বলা হয়েছ, এমন কি কেউ দুইবারের বেশী প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। তাছাড়া, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্যের কথাও ৩১ দফা কর্মসূচিতে বলা হয়েছে।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সংস্কার করা আপনাদের কাজ না, আপনাদের প্রধান কাজ হচ্ছে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচিত সরকার ও জাতীয় সংসদই দেশের জন্য যা – যা মঙ্গল তার সকল কিছুই সংস্কার করবে।’
এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন।
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদ, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য খান সাইদ হাসান, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কন্ঠশিল্পী রুমানা মোরশেদ কনকচাঁপা, আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মমিন মিঠুন,আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা মোঃ আবুল কাশেম প্রমুখ এ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
শহীদ পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শহীদ আব্দুর রশিদের মেয়ে রুমা খাতুন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্য ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান ও আমরা জিয়া পরিবারের সদস্য মুস্তাকিম বিল্লাহ।
উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্ট’র বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-গণআন্দোলনে সিরাজগঞ্জে ১১ জন শহীদ হন।
এই অনুষ্ঠানে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র পক্ষ থেকে আন্দোলন চলাকালে শহীদ সোহানুর রহমান রনজু, সুমন সেখ, আব্দুল লতিফ, আব্দুল আলীম, আব্দুর রশিদ, শিহাব উদ্দিন, হাফেজ সিয়াম, ইয়াহিয়া আলী, জাহাঙ্গীর আলম, নজরুল ইসলাম ও শহীদ লেবুর পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান করা হয় এবং আহতের চিকিৎসার জন্যও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়।