স্টাফ রিপোর্টার : ছোট্ট দোকান। দোকানের সামনে কোনো সাইনবোর্ড নেই। দোকানটিতে পাওয়া যায় শুধু জিলাপি আর নিমকি। প্রতিবছর রোজার দিনে দুপুরের পর থেকে রাজশাহী নগরের বাটার মোড়ের এই দোকানে জিলাপি কিনতে ক্রেতাদের ভিড় লেগে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না
দোকানের নাম নেই বলে এই জিলাপি পরিচিত ‘বাটার মোড়ের জিলাপি’ নামে। এই জিলাপি শুধু খাবারই নয়, এটি এখন রাজশাহীর একটি ঐতিহ্যের নাম। বাটার মোড়ের জিলাপি যেন একটি সুস্বাদু ইতিহাস। ৬৫ বছর ধরে এই জিলাপি ছাড়া যেন ইফতার পূর্ণ হয় না রাজশাহীর বাসিন্দাদের অনেকেরই। তাই এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দূরদূরান্তে।
১৯৬০ সালে এই জিলাপির ব্যবসা শুরু করেছিলেন সোয়েব উদ্দিন। তখন থেকে ধীরে ধীরে এটি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। ২০০২ সালে সোয়েব উদ্দিনের মৃত্যুর পর তাঁর চার ছেলে সোহেল, শামীম, নাইট ও নাহিদ বাবার ব্যবসার হাল ধরেন। শুরুর দিকে জিলাপির কারিগর ছিলেন জামিলী সাহা। পরে তাঁর ছেলে কালিপদ সাহা বাবার সঙ্গে যোগ দিয়ে এই ঐতিহ্য ধরে রাখেন। ২০১৭ সালে কালিপদ সাহার মৃত্যুর পর তাঁর দুই শিষ্য সাফাত আলী ও শফিকুল ইসলাম এই বিশেষ জিলাপি তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
শুরু থেকে বাটার মোড়ের জিলাপির স্বাদ একই। মচমচে ও রসে ভরা এই জিলাপির বিশেষত্ব হলো, এটি সম্পূর্ণ কেমিক্যাল ও কৃত্রিম রংমুক্ত। এর উপাদানের মধ্যে রয়েছে আটা, ময়দা ও মাষকলাই ডালের সংমিশ্রণ; যা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে জিলাপি বানানো হয়।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে জিলাপি কিনতে এসেছিলেন নগরের গোরহাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা কবিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই জিলাপির স্বাদই আলাদা। বছরের পর বছর স্বাদ একই রকম। তাই এটি আমাদের ইফতারিতে থাকে। এই জিলাপি ছাড়া ইফতার পরিপূর্ণ হয় না।’
জিলাপির কারিগর সাফাত আলী বলেন, এই জিলাপি শুধু একটি ব্যবসা নয়। এটি একটি ঐতিহ্য, যা সোয়েব উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা ধরে রেখেছেন। তাঁরা একইভাবে ধরে রেখেছেন এর স্বাদও। তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো, এই বিশেষ স্বাদকে একই রকম রাখা।
দোকানের মালিকদের একজন মো. শামীম বলেন, ‘প্রতিবছর রমজানে জিলাপির কদর বেড়ে যায়। সাধারণত দিনে ৯০ থেকে ১০০ কেজি জিলাপি বিক্রি হয়। তবে পবিত্র রমজানে তা ২০০ কেজি ছাড়িয়ে যায়।’
শামীম জানান, তাঁরা দাম বাড়াতে চান না। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবার প্রতি কেজি জিলাপি ২২০ টাকায় বিক্রি করছেন, যা আগের বছরের চেয়ে ২০ টাকা বেশি।