অনলাইন ডেস্ক : সিরিয়ায় হামলায় নিহত ৭ শতাধিক বেসামরিক, প্রাণহানি ছাড়াল ১ হাজার
সিরিয়ার উপকূলে লাতাকিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনী চেকপয়েন্ট স্থাপন করেছে
সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের অনুগতদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ডে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৭ শতাধিক মানুষই বেসামরিক নাগরিক।
যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী একটি গোষ্ঠীর বরাত দিয়ে রোববার (৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ ওই গোষ্ঠীর মতে, সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী দেশটির উপকূলে অব্যাহত সহিংসতায় আলাউইত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শত শত বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, শুক্রবার এবং শনিবার আলাউইতদের লক্ষ্য করে প্রায় ৩০টি “গণহত্যায়” প্রায় ৭৪৫ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন।
বিবিসি নিউজ অবশ্য স্বাধীনভাবে এই দাবিগুলো যাচাই করতে পারেনি।
বিবিসি বলছে, চলমান সংঘাতে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের নিজের এলাকা বলে পরিচিত — যিনি নিজেও আলাউইত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত — এই অঞ্চলে শত শত মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, গত দুই দিনে মোট ১ হাজার জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যা গত বছরের ডিসেম্বরে বিদ্রোহীদের হাতে আসাদ সরকারের উৎখাতের পর থেকে সিরিয়ায় সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা।
প্রাণহানির এই সংখ্যার মধ্যে বহু সংখ্যক সরকারি সেনা এবং আসাদের অনুগত বন্দুকধারীরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন যারা গত বৃহস্পতিবার থেকে উপকূলীয় লাতাকিয়া এবং তারতুস প্রদেশে সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছেন।
এসওএইচআর-এর প্রতিবেদন অনুসারে, সহিংসতায় ইসলামপন্থি নেতৃত্বাধীন সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ১২৫ জন সদস্য এবং আসাদপন্থি ১৪৮ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। মূলত শিয়া ইসলামের শাখা আলাউইতরা সিরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র দেশটির সংবাদ সংস্থা সানাকে বলেছেন, সরকার তার নিরাপত্তা কর্মীদের ওপর “বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ হামলার” পর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে।
গত শুক্রবার বিবিসিকে শহরের একজন কর্মী জানিয়েছেন, সহিংসতার ফলে আলাউইত সম্প্রদায় “ভয়ঙ্কর অবস্থায়” পড়ে গেছে, শত শত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স অনুসারে, লাতাকিয়ার হামেইমিমে একটি রাশিয়ান সামরিক ঘাঁটিতে বিশাল সংখ্যক জনতা আশ্রয় নিয়েছে।
রয়টার্সের শেয়ার করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ঘাঁটির বাইরে কয়েক ডজন মানুষ “মানুষ রাশিয়ার নিরাপত্তা চায়” বলে স্লোগান দিচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কয়েক ডজন পরিবার প্রতিবেশী লেবাননে পালিয়ে গেছে।
সিরিয়ায় জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন বলেছেন, সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে “বেসামরিক হতাহতের অত্যন্ত উদ্বেগজনক প্রতিবেদন” দেখে তিনি “গভীরভাবে উদ্বিগ্ন”। তিনি সকল পক্ষকে এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন যা দেশকে “অস্থিতিশীল” করতে পারে এবং “বিশ্বাসযোগ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক পরিবর্তন”কে বিপন্ন করতে পারে।