• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • ১লা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • somoyerkotha24news@gmail.com
  • +880-1727-202675

পানির জন্য কেন মমতার কাছে দৌঁড়াতে হবে, প্রশ্ন আসিফ নজরুলের

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩ ১০:২২

পানির জন্য কেন মমতার কাছে দৌঁড়াতে হবে, প্রশ্ন আসিফ নজরুলের

স্টাফ রিপোর্টার: ভারতের কাছ থেকে পানির নায্য হিস্যা আদায়ে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক নদী আইন বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, পানির হিস্যা আদায়ে চুক্তি করতে হবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে। সেখানে মমতা ব্যানার্জী গুরুত্বপূর্ণ নন।

ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে ‘গঙ্গা চুক্তির অবসানে বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মঙ্গলবার বিকালে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে এ আয়োজন করে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের রাজশাহী শাখা এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ রাজশাহী।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা একটা ভুল করি সব সময়। বলি, তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না সে জন্য মমতার দোষ। কি আশ্চর্য কথা! ভারত যে কথা আমার-আপনার মুখ দিয়ে বলাতে চায়, সেটা আমরা অবলীলায় বলে দেই। আচ্ছা, মমতা যদি সমস্যা হয় তাহলে ১৯৭৭ সালেও তো ভারতের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছিল। তখনও তো পশ্চিমবঙ্গ আমাদের পানি দিতে চায়নি। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক সব চুক্তি কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে আমার সাথে চুক্তি করবে, এখানে প্রদেশের কিচ্ছু বলার নাই। বলতে পারেন, বাস্তবায়নে সমস্যা হবে। বাস্তবায়নে সমস্যা হলে সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমরা ভারতের সঙ্গে চুক্তি না করে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সমঝোতা করতে এগোই। পশ্চিমবঙ্গের সমান স্ট্যাটাস আমাদের? আমরা স্বতন্ত্র দেশ, পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটা প্রদেশ। কেন আমাকে মমতার কাছে দৌড়াতে হবে যে চুক্তি করো? কেন? অ্যামেরিকার সঙ্গে যদি ফ্রান্স চুক্তি করে, তাহলে কি নিউ জার্সির গভর্নরের অনুমতি নিতে হয়? ফ্লোরিডায় দৌড়াবে?’

আরও পড়ুনঃ  ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ২৪ জন বন্দিকে মুক্তি

তিনি বলেন, ‘আমরা তো ভারতকে বলব, পশ্চিবঙ্গ কে? তুমিও স্বতন্ত্র দেশ, আমিও স্বতন্ত্র দেশ। পানি দাও। পানি না দিলে তোমার সাথে ব্যবসায়ীক চুক্তি হবে না। ইন্ডিয়ার মানুষ এখানে চাকরি করতে পারবে না। এটা আমরা বলতে পারি না। এ রকম করলে ভারত পশ্চিমবঙ্গকে বিকল্প আধার থেকে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করতো। এই অবস্থানটা আমাদের নিতে হবে।’

ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মার করুণ দশার কথা বলতে গিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘ভারতের উত্তরপ্রদেশে অসংখ্য প্রকল্প আছে পানি প্রত্যাহারের। সেখান থেকে ভারত ইচ্ছামতো পানি প্রত্যাহার করে। কী পরিমাণ পানি প্রত্যাহার করে সেটা বাংলাদেশকে জানায় না। তারপর বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে পানি প্রত্যাহার করে। তারপর অবশিষ্ট যে পানিটা ফারাক্কায় আসে, সেটা ভাগ করে নেয় বাংলাদেশের সাথে। ভারত এটাকে বলে ন্যায়সঙ্গত। আর আমরাও গাধার মতো বলি, খুবই ন্যায়সঙ্গত একটা চুক্তি হয়েছে।’

আরও পড়ুনঃ  আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

বাংলাদেশে পানি আইন নিয়ে মানুষের ভ্রান্ত ধারণা এবং জ্ঞানের পরিধি নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, আমাদের সমস্যা হচ্ছে জ্ঞানের। আমার খুব দুঃখ লাগে বলতে, আমাদের ১৭ কোটি মানুষের দেশ। কিন্তু আন্তর্জাতিক নদী আইনে আমি ছাড়া কোন পিএইচডি নেই। এটা কি সম্ভব একটা দেশে? নেপালের জনসংখ্যা কত কম, সেখানেও প্রায় ছয়-সাতজন আছেন। আমাদের দেশে আর কেউ নেই। আমি ১৯৯৮ সালে দেশে এসেছি। তারপর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ওয়ান-ইলেভেন অনেক সরকার এসেছে, একটা লোকও পরামর্শ চাইনি যে তিনি আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনে যাবেন, কীভাবে পানির ন্যায্য হিস্যাটা আদায় করা যায়। এই দেশে কি মূল্য আছে পড়াশোনার? কি মূল্য গবেষণার?’

আরও পড়ুনঃ  মসজিদ ভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পে জনবল নিয়োগে আউটসোর্সিং বাতিল

তিনি বলেন, ‘পানির অধিকারটা আমরা দিনের পর দিন হারিয়ে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এটাই স্বাভাবিক। জ্ঞানি মানুষ হিসেবে পরিচিত বহু লোকের থেকে শুনেছি, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে কেন যায় না? বাংলাদেশের তো যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক আদালতের যে নিয়ম সেখানে বাংলাদেশ নিজেই সাইন করেনি। ভারত সাইন করেছে, কিন্তু বলেছে ভারতের বিরুদ্ধে পানি সংক্রান্ত বিষয়ে কোন অভিযোগ তোলা যাবে না।’

সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবদুর রহমান সিদ্দিকী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি ও নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক মো. আনোয়ার সাদাত। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের রাজশাহী শাখার সভাপতি ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ। সেমিনারে তিনি স্বাগত বক্তব্য দেন।

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



সম্পাদক ও প্রকাশক : ইয়াকুব শিকদার

ঢাকা অফিস: ১২১,ডি.আই.টি, এক্সটেনশন রোড, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০। রাজশাহী অফিস: বহরমপুর (সিটি বাইপাস), জিপিও-৬০০০, রাজপাড়া, রাজশাহী। ই-মেইল: somoyerkotha24news@gmail.com, মোবাইল: 01727202675