অনলাইন ডেস্ক : সিলেট বিমানবন্দরে হামজার সঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্ব তেমন জুতসই হয়নি। তাই সিলেট থেকে হামজার বাড়ি হবিগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হন মিডিয়াকর্মীরা। হবিগঞ্জের বাহুবলে স্মানঘাটে হামজা তার বাড়ির সামনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেই অনুষ্ঠান শেষে ইফতারের পর বাড়ির উঠানে হবিগঞ্জ ও ঢাকা থেকে যাওয়া সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শীর্ষ ফুটবল লিগে খেলেছেন হামজা দেওয়ান চৌধুরি। বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাংলাদেশের জার্সিতে খেলবেন। ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে খেলতে বাংলাদেশে এসেছেন। তাই সিলেট ও হবিগঞ্জ দুই জায়গায় হামজাকে দেখতে ফুটবলপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। এত মানুষের জমায়েত বেশ উপভোগ করেছেন হামজা, ‘আমি বাবার সঙ্গে মাতছি (আলোচনা করেছি)। খুব ভালো লাগছে।’
হামজা চৌধুরি বাংলাদেশে কত নম্বর জার্সি পড়ে খেলবেন? এ নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে চলছে আলোচনা। আজ হামজার বাড়িতে সাংবাদিকরা সরাসরি তাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘৮ নম্বর।’ হামজা মিডফিল্ড ও রক্ষণ দুই পজিশনেই খেলতে পারেন। বাংলাদেশ দলে কোন পজিশনে খেলবেন সেটাও জানিয়েছেন, ‘মিডফিল্ড পছন্দ করি।’
হাজার হাজার মানুষ হামজাকে দেখতে সশরীরে এসেছেন। এর বাইরে সামাজিক মাধ্যমে তাকে অনুসরণ করছেন লাখ লাখ ফুটবলপ্রেমী। ভক্তদের এত প্রত্যাশা অনেক সময় ক্রীড়াবিদদের চাপ হিসেবে কাজ করে। তবে হামজা এতে মোটেও চাপ অনুভব করছেন না, ‘মোটেও চাপ লাগছে না। জনগণ আসছে ভালোবাসা প্রদর্শন করছে। এটা চাপ নয় ভালো খেলার অনুপ্রেরণা।’
হামজা বাংলাদেশি সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠলেও তার স্ত্রী ও সন্তানরা ইংল্যান্ডের সংস্কৃতি বহন করেন। বাংলাদেশে হামজার আথিতেয়তা ও এত জনগণের উপস্থিতি তার পরিবারও পছন্দ করছে, ‘এত ভালোবাসা, আমি আসলে ব্যাখ্যা করতে পারব না। স্ত্রীও পছন্দ করছে সবার এত ভালোবাসা।’
গোলের খেলা ফুটবল। বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশা হামজা বাংলাদেশের হয়ে গোল করবেন। ২৫ মার্চ ভারত ম্যাচে গোলের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘ইন শা আল্লাহ।’ ভারত বাংলাদশকে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের হন্তারক সুনীল ছেত্রীও ফিরেছে। এ নিয়ে তেমন শঙ্কিত নন হামজা, ‘আমরা ভারতকে নিয়ে ভাবছি না। আমরা নিজেদের কথাই ভাবছি।’ বাংলাদেশ দল সৌদি থেকে আগামীকাল ফিরবে। ২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ। মাত্র কয়েক দিনের অনুশীলনে দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আশাবাদী হামজা, ‘আমি কিছু অনুশীলনের ভিডিও দেখছি। ইন শা আল্লাহ ভালো হবে।’ বাংলাদেশ দলের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার সঙ্গে তার বিগত কয়েক দিন ধরে যোগাযোগ চলছে প্রস্তুতি সংক্রান্ত বিষয়ে।
হামজা আসায় বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চান আরো অনেক প্রবাসী ফুটবলার। বিশ্বকাপ ফুটবলের মূল পর্ব খেলা বাংলাদেশের জন্য অনেক দূরের স্বপ্ন হলেও ধাপে ধাপে আশা দেখাচ্ছে তিনি, ‘আগে এশিয়ান কাপ খেলতে চাই। এরপর ইন শা আল্লাহ বিশ্বকাপ।’ বাংলাদেশের বাস্তবতায় সম্ভব কি না পুনরায় প্রশ্ন হলে তিনি আবারও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। হামজাকে কাছে পেয়ে সাংবাদিকরা নানান দিক থেকে প্রশ্ন ছুড়তে থাকেন। হামজা ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে খেলেছেন। সেই স্তরের পর ইংল্যান্ডের হয়ে না খেলে বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত কঠিন হলেও তিনি সেটা মনে করেন না, ‘আসলে কঠিন ছিল না। সময়টা ভিন্ন ছিল।’
বাংলাদেশে হামজার অসংখ্য ভক্ত রয়েছে। তাকে সবাই কাছ থেকে দেখতে পারেননি। তাদের সঙ্গে জুনে সাক্ষাত করতে চান, ‘আমি আবার জুনে আসব। তখন আবার সাক্ষাৎ হবে।’ আগামীকাল জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগদান করবেন তিনি। জাতীয় ফুটবল দলে কয়েকজন রয়েছেন যাদের বাড়ি সিলেট অঞ্চলে। তাই হামজা সিলেটি ভাষায় কথা বলতে চান সতীর্থদের সঙ্গে। বাংলা গানের মধ্যে তার প্রিয় ‘আমার সোনার বাংলা।’