স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদকে হত্যার মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ছয়মাস আগেই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। তবে তার পরেও দুজনের স্বজনেরা ফাঁসি স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে গত ৭ মে ফের রিট আবেদন করেন। এ আবেদন অবশ্য খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এ দুই আসামি হলেন- ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম। তারা এখন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন অধ্যাপক ড. তাহেরের ছাত্র ছিলেন। পরে বিভাগের সহকর্মী হন।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল বুধবার (১৭ মে) সকালে জানান, প্রায় ছয়মাস আগে দুই আসামির ডেথ রেফারেন্স বহাল হলে কারাবিধি অনুযায়ী তাদের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এতে তারা সম্মতি দিলে লিভ টু আপিলের পরই তাদের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু গত ৭ মে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের স্ত্রী ইসরাত রহমান এবং জাহাঙ্গীর আলমের ভাই মিজানুর রহমান হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, আসামিদের গ্রেপ্তার ও জবানবন্দি গ্রহণে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ব্যত্যয় হয়েছে। তবে পরবর্তীতে এই রিট আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আপিল বিভাগ ফাঁসি বহাল রাখার পরও এ দুই আসামির হাইকোর্টে রিট আদালত অবমাননার সমান বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগ ফাঁসি বহাল রাখার পরও হাইকোর্টে রিট আদালতকে একরকম অসম্মান করার সামিল। কারণ এখন আর তাদের কিছুই করণীয় নেই। শুধু তারা এতটুকু করতে পারেন যে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে দোষ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চাওয়া।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল জানান, প্রাণভিক্ষার আবেদন পাঠানোর পর তারা প্রতিউত্তরের অপেক্ষা করছিলেন। এরমধ্যেই হাইকোর্টে রিট করা হয়। এখন রিটের আদেশের কপি নিম্ন আদালত হয়ে কারাগারে আসবে। তখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে করণীয় জানতে সরকারকে চিঠি লেখা হবে। এরমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত জানবে। সবকিছুই একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। রাষ্ট্রপতি যদি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন, তাহলে তার পরে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক তাহেরের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে তার সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এরপর ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পরে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।
পরে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হাইকোর্টে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। এরপর হাইকোর্টে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল আপিলের রায়ে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। অপর দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ফাঁসির আসামি জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালাম। এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে খালাস পেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।
পুলিশের তদন্ত অনুযায়ী, বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিনই প্রবীণ শিক্ষক ড. তাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিরেন। ড. তাহের পরিকল্পনা কমিটির সদস্য ও সাক্ষাৎকার বোর্ডের সদস্য ছিলেন। পদোন্নতির জন্য মহিউদ্দিনের চাকরির বয়স ১২ বছর এবং সহকারী অধ্যাপক পদে তাঁর পাঁচ বছর পূর্ণ না হওয়ায় পরিকল্পনা কমিটির সভায় অধ্যাপক তাহের তাঁর পদোন্নতির বিষয়ে মতামত দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
তাছাড়া পদোন্নতির জন্য একক গবেষণার প্রয়োজন হলেও মহিউদ্দিনের গবেষণাগুলো ছিল যৌথ। বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুলতান উল ইসলামের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা করলেও মহিউদ্দিন তা একক নামে প্রকাশের চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক সুলতান অভিযোগ করলে পরিকল্পনা কমিটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। মহিউদ্দিন এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে বাসার তত্ত্বাবধায়কের সহায়তায় তাকে হত্যা করা হয়।