অনলাইন ডেস্কঃ চোটের সঙ্গে লড়ছেন গত মার্চ থেকে। পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া শেষে এখন বোলিংয়ে ফেরার অপেক্ষা তাসকিন আহমেদের। আগামী মাসে আফগানিস্তান সিরিজ দিয়ে তাঁর ক্রিকেটে ফেরার কথা। চোট ছিটকে দেওয়ার আগে ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা এই পেসার কথা বলেছেন চোট, তাঁর ক্যারিয়ার ও আরও নানা প্রসঙ্গে।
চোট থেকে সুস্থ হয়ে দ্রুতই নাকি বোলিংয়ে ফিরছেন?
তাসকিন আহমেদ: হ্যাঁ, দ্রুতই বোলিংয়ে ফিরব। এমআরআই করিয়েছি। রেজাল্ট ভালো এসেছে। আশা করি দ্রুতই ছন্দে ফিরব।
একটু পেছনে ফিরে যাই। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে নতুন বলে দারুণ বোলিং করছেন। এতটাই যে সবাই বলছিল, আপনি বিশ্বকাপের সেরা বোলারদের একজন। সেই অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
তাসকিন: আমি সেখানে একদম বেসিক বোলিংটা করেছি। ৬ মিটার লেংথ থেকে সুইং করানোর চেষ্টা করেছি। টি-টোয়েন্টি, ব্যাটসম্যান মারবে…এসব নিয়ে চিন্তা করিনি। আমি নিজের শক্তির জায়গা নিয়ে ভেবেছি। সুইং ছিল ভালো। কন্ডিশন পেসারদের পক্ষে ছিল। সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।
সাকিব ভাইয়ের অধিনায়কত্ব অনেক সাহায্য করেছে। তিনি বলেছিলেন, স্কিলের দিক থেকে আমি বিশ্বের বড় বড় পেসারের থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে বোলারদের মাইন্ডসেটই থাকে যেন মার কম খাওয়া যায়। ব্যাটসম্যানের মার থেকে বাঁচার চিন্তা না করে আমি কীভাবে উইকেটটা নেব, এই অ্যাগ্রেসিভ মাইন্ডসেট নিয়ে সাকিব ভাই বল করতে বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘তুমি কিছু চিন্তা না করে দিল খুলে বল করো।’ আমিও তা–ই করেছি।
আপনি তো নিয়মিতই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের উইকেট নিয়েছেন। সেটা নিশ্চয়ই আনন্দের?
তাসকিন: তা তো অবশ্যই। নতুন বলের সময় প্রতিটি দলের সেরা ব্যাটসম্যানরাই খেলে। ওই সময় যেহেতু আমি বোলিং করছি, এটা আমার দায়িত্ব ব্রেকথ্রু এনে দেওয়া, ভালো শুরু এনে দেওয়া।
২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ ছিল নতুন বলে বাজে বোলিং। এবার আরও একটি বিশ্বকাপের বছর। আপনি ও হাসান মাহমুদ থাকায় পাওয়ারপ্লেতে বোলিং নিয়ে একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে।
তাসকিন: প্রত্যেক বোলারেরই নির্দিষ্ট দায়িত্ব থাকে। আমি সে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি। এখানে বাড়তি কিছু চিন্তা করি না। নতুন বলে মাঝেমধ্যে ভালো বল করেও উইকেট পাওয়া যায় না। আবার খুব ভালো বোলিং না করেও উইকেট পেয়ে যাই। কন্ডিশন বুঝে বল করা, বেসিকটা ঠিক করা, এটাই আমার ভাবনা।
কন্ডিশনের প্রসঙ্গ যখন এল, দ্রুত উইকেট বা কন্ডিশনের চরিত্র পড়তে পারা আপনার বোলিংয়ের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
তাসকিন: অনেক। দ্রুত মানিয়ে নিতে পারলে বোলিং ইউনিটের জন্য ভালো। তবে সে জন্য সময়ও লাগে। যথেষ্ট অভিজ্ঞতা লাগে।
আপনি কি এখন সেই পর্যায়ে আছেন?
তাসকিন: এখন যদি বলি আমি অভিজ্ঞ নই, তাহলে ক্রিকেট না খেলাই ভালো। আমার অভিষেক হয়েছে ২০১৪ সালে (হাসি)।
উইকেট বোঝার প্রক্রিয়াটা কী? ধরুন, প্রথম দু-একটি বল ৬ মিটারে ফেলে দেখলেন বাউন্স কেমন হচ্ছে…এ ধরনের কিছু?
তাসকিন: অনেকটা। চেষ্টা করি সুইং করানোর। আমি প্রথম ওভারের মধ্যেই বুঝে ফেলি, আজকে উইকেট কেমন আচরণ করছে। আমার বোলিং পার্টনারও এ ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে।
গত কয়েক বছরে পেসারদের নিয়ে যে দৃষ্টিভঙ্গির বদল এসেছে, সেটাকে কীভাবে দেখেন?
তাসকিন: উন্নতিটা এখন সবার সামনে। শুধু বাংলাদেশ নয়, দেশের বাইরেও সবাই জানে যে আমাদের পেস বোলিং ভালো। ম্যাচ জেতার পেছনে পেসারের ভূমিকা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। আগে একটা সময় ছিল, কিছু হলেই দোষ পড়ত বোলারদের। এখন সেটা একটু কমেছে। এখনো খারাপ দিন যে আসে না, তা নয়; তবে সবার উন্নতিটা এখন সবার সামনে।
ডেথ বোলিংয়েও অনেক উন্নতি হয়েছে। নিয়মিত ইয়র্কার করছেন। নিশানাও ভালো। ইনিংসের শেষের বোলিং নিয়ে একটু বলুন…
তাসকিন: ইয়র্কারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ডেথে নয়, নতুন বলেও। ব্যাটসম্যান তো সব সময়ই মারার চিন্তায় থাকে। তাই এটা অনেক বড় অস্ত্র। যেসব উইকেটে বল কম গ্রিপ করবে, সেখানে ইয়র্কারই ভরসা। বড় ব্যাপার কি জানেন, ইয়র্কারের ক্ষেত্রে আপনি বল ছাড়ার আগে কেমন অনুভব করছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ফিল্ডিং সেটের বিষয়ও আছে। কেউ লেগ স্টাম্পের গোড়ায়, কেউ ব্যাটসম্যানের বুটে মারতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এটা একেবারে ব্যক্তিগত বিষয়।
ব্লাফ মানে ধোঁকা দেওয়া আপনার বোলিংয়ে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? মানে ফিল্ডিং সাজালেন একটা বলের জন্য কিন্তু ব্যাটসম্যানকে চমকে দিতে করলেন আরেকটা।
তাসকিন: মাঝেমধ্যে করি। খুব বেশি নয়। যদি উইকেটে সাহায্য থাকে, তাহলে ব্লাফ করা হয়। ভালো উইকেটে ব্লাফ করতে গেলে আপনি নিজেই ব্লাফ হয়ে যেতে পারেন (হাসি)।
টেস্ট খেলছেন না প্রায় এক বছর। শুনছি, বিশ্বকাপের কারণে এ বছরও আপনাকে টেস্ট খেলানো হবে না। তিন সংস্করণ নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?
তাসকিন: চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু খেলতে পারলে অন্য রকম সন্তুষ্টি কাজ করে। তিন ফরম্যাটের জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারার মধ্যেও আনন্দ আছে। কারণ, এটা সহজ নয়। কিন্তু কঠিন বলে মজাও বেশি। নিজেকে প্রস্তুত করতে অনেক বেশি মেহনত করতে হয়। আমি এখনো ভাবিই না যে আমার কোনো একটা সংস্করণে বিশ্রাম নিতে হবে। আরও চার-পাঁচ বছর খেলার পর বয়স হলে তারপর দেখা যাবে। এখন এসব চিন্তা করার সময় নেই। যদি ম্যানেজমেন্ট মনে করে যে আমাকে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে খেলাবে, সেটা তাদের ব্যাপার। আমি ব্যক্তিগতভাবে সব খেলতে চাই।
ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছেন কিন্তু টেস্ট খেলতে পারছেন না। খারাপ লাগে না?
তাসকিন: চোট তো আর বলেকয়ে আসে না। আর খেলতে নামলে গা বাঁচিয়ে খেলা যায় না। দেশের হয়ে খেলাটাই গর্বের বিষয়। যদি কিছু একটা হয়ে যায়, তাহলে হয়তো কালকে ঘুম থেকে উঠে আর না-ও খেলতে পারি। তাই যত দিন দেশের হয়ে খেলতে নামব, সেরাটা দিয়েই খেলব।
এখন পেস বোলিংয়ের নেতা চিন্তা করলে আপনার কথা আলোচনায় আসে। এটাকে কীভাবে দেখেন?
তাসকিন: যখন যে হাতে বল নেয়, তখন সে-ই নেতা। তবে হ্যাঁ, এখন এই দলে মোস্তাফিজ আর আমি একটু বেশি ক্রিকেট খেলেছি। সে জন্য অনেকে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করে। আমিও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিই। তবে আমি জানি যে আমার আরও পরিণত হওয়ার জায়গা আছে। তাই এসব নিয়ে ভাবি না যে আমি অনেক বড় কিছু হয়ে গিয়েছি। তবে হ্যাঁ, আমি ওই জায়গাটায় পৌঁছাতে চাই।
এ বছর একটা বিশ্বকাপ আছে। পারফরম্যান্সের বিবেচনায় এই আপনাকে বিশ্বকাপ দলের অটো চয়েস বললে ভুল হবে না। কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপের চিত্রটা এমন ছিল না। ওই বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়ায় আপনি কান্না ধরে রাখতে পারেননি। এখন সেই স্মৃতি চিন্তা করলে কেমন লাগে?
তাসকিন: উনিশ বিশ্বকাপে যখন আমাকে বাদ দিয়েছিল, তখন খুব কষ্ট লেগেছিল। তবে ওই কষ্টটা পাওয়ার পর আমি নিজেকে বদলাতে চেয়েছি। বলছি না যে এখন যা করছি ১০০ ভাগ ঠিক করছি। কিন্তু আমার ওয়ার্ক এথিকস আগের থেকে অনেক অনেক ভালো হয়েছে। এটা সাহায্য করছে। যদি সুস্থ থাকি, তাহলে এই বিশ্বকাপকে বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় করে তুলব। এর পেছনে যেন আমার অনেক বেশি অবদান থাকে।