অনলাইন ডেস্ক : রাজশাহীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলামকে জোরপূর্বক বের করে চেয়ার দখলের ঘটনায় ইতিমধ্যে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে। এবার ওই ঘটনায় সংস্থার আরও দুই প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া সংস্থার চেয়ারম্যান ড. এম আছাদুজ্জামানকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই কর্মকর্তা হলেন নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম রেজা ও সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ। ২৩ মার্চের ওই ঘটনার পর রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় মামলা করেন অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সেলিম ও আবুল কালাম। মামলার অন্য আসামিরা হলেন বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান, উপসহকারী প্রকৌশলী মেহেদী, সহকারী মেকানিক আপেল, মেহেদী হাসান, গুদামরক্ষক নুরুজ্জামান, মজিবুর রহমান, আব্দুল কাইয়ুম খান, ক্যাশিয়ার শফিকুল ইসলাম, গাড়িচালক শাহাবুল, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শমসের আলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম। অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছেন আরও ৫০ থেকে ৬০ জন।
রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
এদিকে ঘটনা তদন্তে গত বৃহস্পতিবার কৃষি মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমামকে আহ্বায়ক ও উপসচিব মনিরুজ্জামানকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটির সদস্যের মধ্যে রয়েছেন বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরক ও জাফরুল্লাহ। কমিটিতে জেলা প্রশাসনের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাকে রাখতে বলা হয়েছে। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে শুক্রবার বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. এম আছাদুজ্জামানকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে বিএমডিএর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যানকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে ডেকে ওই ঘটনার জন্য ভর্ৎসনা করা হয়েছে। পাশাপাশি সংস্থার প্রধান হিসেবে এ বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য তাঁকেও শোকজ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম রেজা বিএমডিএর সিরাজগঞ্জ রিজিয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত। কোনো অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থল থেকে রাজশাহীতে চলে যান। অতিরিক্ত সচিবকে হেনস্তার সঙ্গে তার জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে মন্ত্রণালয়। তাই তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিএমডিএর ইডি শফিকুল ইসলামকে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে বদলির আদেশ হয়। কিন্তু রিলিজ অর্ডার না পাওয়ায় তিনি দপ্তর ছাড়তে পারছিলেন না। এরই মধ্যে ২৩ মার্চ দুপুরে একদল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে বিএমডিএর ইডির দপ্তরে ঢুকে পড়েন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান। তাঁরা শফিকুলকে জোরপূর্বক দপ্তর ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম কৃষি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। ২৫ মার্চ মামলা করেন রাজপাড়া থানায়। তাঁর অভিযোগ, তিনি মন্ত্রণালয়ের রিলিজ স্লিপ না পাওয়ায় বিএমডিএ থেকে অবমুক্ত হতে পারছিলেন না। রিলিজ স্লিপ না পাওয়া পর্যন্ত তাঁকে বিএমডিএতে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার জন্য মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিএমডিএ ছেড়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করছিলেন। তিনি তাঁদের রিলিজ স্লিপ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা কোনো কথা শোনেননি।
বিএমডিএর পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরক বলেন, ‘বদলি হওয়ার পরে মন্ত্রণালয় রিলিজ করা সত্ত্বেও যদি তিনি (শফিকুল ইসলাম) পূর্ববর্তী স্থানে জোরপূর্বক অবস্থান করেন, তাহলে মন্ত্রণালয় বিষয়টি বিবেচনা করবে। কিন্তু
তাঁকে চেয়ার থেকে টেনে নামানো এবং সেই চেয়ার দখল করা চাকরিবিধির গুরুতর লঙ্ঘন। দোষীদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দরকার ছিল।’