অনলাইন ডেস্ক : মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ১৪৪ নিহত এবং ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার ক্যাও জিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই ভূমিকম্পের প্রভাবে মিয়ানমারের পাশের দেশ থাইল্যান্ডেও অন্তত তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারের মান্দালয় শহরের কাছে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ দশমিক ৭ হওয়ায় এটি অত্যন্ত শক্তিশালী বিবেচিত হয়। ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল মাত্র ৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার বা ৬ মাইল। তুলনামূলকভাবে অগভীর হওয়ায় এটি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে। ভূমিকম্পের ১১ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার একটি আফটার শক রেকর্ড করা হয়। এর ফলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়েছে।
মান্দালয়ে ভূমিকম্পের পর বহু ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের দ্রুত মান্দালয়ের প্রধান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
৪৫ বছর বয়সী দাউ ক্যি শুইন নামের এক ব্যক্তি জানান, ভূমিকম্পের সময় তাঁর তিন বছর বয়সী মেয়ে মারা যায়। তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি নিচে যাই, কিন্তু সময়মতো পৌঁছাতে পারিনি। আমি তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তার আগেই ইটের নিচে চাপা পড়ে সে মারা যায়।’ রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সাহায্য করার মতো কোনো সরকার নেই, পর্যাপ্ত ডাক্তারও নেই। আমি মরে যাব, কিন্তু আমি মরতে চাই না। দয়া করে সাহায্য করুন।’
মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। মানবিক সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকায় তারা পরিস্থিতি মূল্যায়নে সমস্যায় পড়েছে। চার বছর আগে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে ইতিমধ্যে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখন আরও ভয়াবহ হয়েছে।
মান্দালয় থেকে ৬০০ মাইল (৯৬৫ কিলোমিটার) দূরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককেও ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে। সেখানকার রাস্তায় আফটার শকের আশঙ্কায় অনেক মানুষ জড়ো হয়।
ব্যাংককে একটি ৩০ তলা ভবন ধসে পড়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, নির্মাণশ্রমিক ও পথচারীরা নিরাপদ স্থানে দৌড়াচ্ছেন। উঁচু সড়ক থেকে তোলা ভিডিওতে ধুলার মেঘে ঢেকে যাওয়া এলাকা দেখা যায়। একজন উদ্ধারকর্মী জানান, এই ভবন ধসে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা ব্যাংকককে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন এবং আফটার শকের ক্ষতি এড়াতে উঁচু ভবন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাসিন্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
মিয়ানমারের পশ্চিমে বাংলাদেশের ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো পাওয়া যায়নি। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় ও হো চি মিন সিটিতেও ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ভিএনএক্সপ্রেস জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলোর একটি। ২০১১ সালে মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন এবং শতাধিক ভবন ধ্বংস হয়েছিল।