• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • ১লা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • somoyerkotha24news@gmail.com
  • +880-1727-202675

দুই যমজ বাচ্চা গায়েবের অভিযোগে মামলা

প্রকাশ: সোমবার, ২২ মে, ২০২৩ ১২:০৬

দুই যমজ বাচ্চা গায়েবের অভিযোগে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর বেসরকারী রয়্যাল হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডে জন্মের পরই দুই নবজাতক বাচ্চা গায়েব করে দেওয়ার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। শনিবার রাতে নগরীর রাজপাড়া থানায় এ মামলা করেন সৈয়দা তামান্না আক্তার (২৯) নামের এই নারী। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসছে, তামান্নার পেটে কোন বাচ্চাই ছিল না। যদিও গর্ভবতী থাকার সব ধরনের দাবিই করে আসছেন তামান্না।

মামলায় তিনি দুজন চিকিৎসক, দুজন নার্স এবং বেসরকারী রয়্যাল হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডকে আসামি করেছেন। মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এ মামলা করা হয়েছে। তামান্না যে দুই চিকিৎসকের নাম আসামি হিসেবে উল্লেখ করেছেন তারা হলেন- রয়্যাল হাসপাতালের গাইনির চিকিৎসক নিশাত আনাম বর্ণা ও অ্যানেসথেসিওলজিস্ট মোহাম্মদ আলী রিমন। গর্ভধারণের পর থেকে ডা. নিশাতের কাছেই চিকিৎসা সেবা নিতেন বলে দাবি মামলার বাদী তামান্নার।

তামান্নার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সেলিমাবাদ গ্রামে। তাঁর স্বামী পিয়াস বিশ^াস (৩০) একজন প্রবাসী। এজাহারে তামান্না জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী দেশে এসেছিলেন গত বছরের ২১ জুন। ফিরে যান ১৭ জুলাই। এরপর তিনি ১১ সেপ্টেম্বর প্রথম ডা. নিশাতের কাছে যান। তিনি তামান্না অন্তসত্তা কিনা তা জানার জন্য আলট্রাসনোগ্রামসহ কয়েকটি পরীক্ষা করতে দেন। এসব পরীক্ষা করে ৪ ডিসেম্বর আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টসহ ডা. নিশাতের কাছে গেলে তিনি জানান, তামান্না ১৭ সপ্তাহের অন্তঃসত্তা। তার পেটে যমজ বাচ্চা রয়েছে এবং সম্ভাব্য ডেলিভারীর তারিখ চলতি বছরের ৬ মে। অথচ এই চিকিৎসকই ওটি থেকে বেরিয়ে জানিয়েছেন, তামান্নার পেটে কোন সন্তান ছিল না। তাই তামান্নার অভিযোগ, তাঁর দুই সন্তানকে কোথাও পাচার করে দেওয়া হয়েছে।

মামলার এজাহারে তামান্না বলেছেন, ডাক্তার তামান্নার কাছে গর্ভবতী থাকার বিষয়টি জেনে তাঁর অধীনে গর্ভকালীন চিকিৎসা নিতে থাকেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তিনি তার মায়ের বাড়ি রাজশাহী নগরীর সাধুর মোড় এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এ বাড়িতে মা রওশন আক্তার, ভাই সৈয়দ শফিকুল আলম এবং সৈয়দ হুমায়ূন কবীরসহ তাদের দুই স্ত্রী তার গর্ভকালীন বৃদ্ধি চাক্ষুষ দেখেছেন। তিনি নিয়মিত পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টারে গিয়ে ডা. নিশাতের কাছে গর্ভকালীন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর শাশুড়ী তাহেরা বিশ্বাস (৫০) প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার তাকে এই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেছেন।

আরও পড়ুনঃ  ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে আরএমপি' র গণবিজ্ঞপ্তি

তামান্না এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ‘গর্ভকালীন সময়ে আমার পিরিয়ড হয়নি। আমার স্বামী নিয়মিত অনলাইনে আমার গর্ভকালীন বৃদ্ধির বিষয়ে অবহিত হয়েছেন। আমি প্রবাসী স্বামীর কাছে গর্ভের সন্তানের নড়াচড়ার একাধিক ভিডিও পাঠিয়েছি। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, আমি পূর্ণঅন্তঃস্বত্তা ছিলাম। কিন্তু এখন এই বাচ্চার কথা অস্বীকার করা হচ্ছে অন্য কারণে।’

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, ডা. নিশাতের নির্দেশনা অনুযায়ী গর্ভধারনের দীর্ঘ ৯ মাস ১৮ দিন পর সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারীর জন্য গত ১৮ মে দুপুর ২টার দিকে তামান্না রয়্যাল হাসপাতালে ভর্তি হন। ইতোপূর্বে এই চিকিৎসক সব সময় নরমাল ডেলিভারী করাবেন বলে তামান্নাকে আশ^স্ত করেছিলেন। কিন্তুযথা সময়ে বাচ্চা ডেলীভারী না হওয়ায় তারই পরামর্শে সিজারের জন্য তামান্নাকে রয়্যাল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে ভর্তি করার সময় তামান্নার পূর্ববর্তী সকল প্রেসক্রিপশন এবং সর্বশেষ ২ ও ১৪ মে তারিখের আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট হাসপাতালে জমা দেওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর হাসপাতালের দুজন নার্স পরীক্ষা করে তামান্নাকে সিজারের জন্য প্রস্তুত করেন। এরপর তাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের ওটিতে ডা. নিশাত আনাম বর্ণাসহ এনেসথেসিওলজিস্ট মোহাম্মদ আলী রিমন এবং দুজন নার্স ছিলেন। ওটিতে থাকা নার্সেরা তামান্নার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন এবং তাঁর হাত বেঁধে রাখেন। এরপর তার কোমরে এনেসথেসিয়া ইনজেকশন দেওয়া হয়।’

তামান্না এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ‘ইনজেকশন দেওয়ার পর দ্রুত আমার জ্ঞান লোপ পেতে থাকে। অর্ধচেতন অবস্থায় আমার পেটের ভেতর থেকে বাচ্চা বের করে নেওয়া হচ্ছে বলে বুঝতে পারি । আমার পূর্ণ জ্ঞান ফেরে ১৯ মে সকাল ৯টায়। জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারি যে, ১৮ মে বিকাল ৪টায় ডা. নিশান আনাম বর্ণা ওটি থেকে বের হয়ে যান। এবং বের হয়ে যাওয়ার সময় আত্মীয়দের বলেন যে, রোগীর প্রেশার অনেক বেশী বলে ওটি করা যাবে না। প্রেশার কমার জন্য ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। কমলে সিজার করা হবে। এরপর ১৯ মে রাত পর্যন্ত পর্যন্ত হাসপাতালে আসেননি। আগের দিন সন্ধ্যায় ডা. মোহাম্মদ আলী রিপন আমার আত্মীয়দের বলেন যে, আমার গর্ভে কোন বাচ্চা নেই এবং কখনো ছিল না।’

আরও পড়ুনঃ  নগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৪

এজাহারে বলা হয়েছে, ১৮ মে অচেতন থাকা অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রয়্যাল হাসপাতালের নিচতলায় তামান্নার একটি আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। এটি দেখিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, তামান্নার গর্ভে কোন বাচ্চা নেই। এরপর স্বজনেরা হাসপাতালে জমা দেওয়া তার আগের মডিকেল ফাইল ফেরত নিলে দেখা যায় এই ফাইলে ডা. তামান্নার গত বছরের ৪ ডিসেম্বরের পর দেওয়া আট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপত্র নেই। স্বজনেরা পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে নির্ধারিত দিনগুলোতে করা আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টের কপিগুলো আবার চাইলে বলা হয়েছে, ডা. নিশাতের অনুমতি ছাড়া দেওয়া যাবে না।

তামান্না এজাহারে আরও বলেছেন, ‘ওটি থেকে আমাকে বের করার পর থেকেই আমার গর্ভধারনের রাস্তা দিয়ে তীব্র রক্তপাত হচ্ছে যা সাধারনত বাচ্চা ডেলিভারীর পর হয়ে থাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে যে, এটি আমার নিয়মিত পিরিয়ডের রক্ত। কিন্তু গর্ভকালীন অবস্থায় বিগত সময়ে আমার কখনো মাসিকের রক্তাপাত হয়নি। আরো সন্দেহজনক যে, এই রক্তপাত বন্ধ করার জন্য ডা. নিশাতের পরামর্শক্রমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে ওষুধ দিয়েছে। কিন্তু পিরিয়ড বন্ধ করার জন্য কখনো কোন ডাক্তার কোন মেয়েকে ওষুধ দেন না। আমি সন্দেহ করছি যে, আমার আমার বাচ্চা ডেলিভারীর পর অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৮টায়

থানায় এই এজাহার দেওয়ার সময়ও তামান্না রয়্যাল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাই এ মামলার সাক্ষী ভাসুর ইমন বিশ্বাসের (৪০) মাধ্যমে থানায় পাঠিয়েছেন। পুলিশ এজাহারটি মামলা হিসেবে রেডর্ক করেছে। তবে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর রাজপাড়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) কাজল নন্দী বলেন, ‘বিষয়টি একটু স্পর্শকাতর। আমরা আগে প্রাথমিক তদন্ত করে দেখছি।’ তাহলে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি সেটি বলব না।’ কাজল নন্দী জানান, তামান্না সত্যিই গর্ভবতী ছিলেন কি না তা জানা যাবে পপুলার ডায়াগনস্টিক থেকে আলট্রাসনোগ্রামের রিপোর্ট পেলে। এই রিপোর্ট পেতে লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে। মঙ্গলবার এ আবেদন করা হবে।

বাচ্চা সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় কথা হয় অভিযুক্ত চিকিৎসক নিশাত আনাম বর্ণার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ওটিতে রোগীকে পরীক্ষা করে আমার কাছে মনে হয়, তার পেটে বাচ্চা নেই। পরে রোগীর স্বজনদের একটা আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে আনতে বলি এবং দেখি সত্যিই বাচ্চা নেই। এখানে একটা ঘটনা ঘটেছে মেডিক্যাল টার্মে, সেটা হলো- মেন্টাল প্রেগন্যান্সি। যদি রোগীর পেট ফুলে যায়, সাইকোলজিক্যালি সে প্রেগন্যান্ট ভাবতে শুরু করে। তার মনে হয়, বাচ্চা নড়ছে, সে প্রেগন্যান্ট। আসলে এই রোগীর ক্ষেত্রে এমন ঘটনাই ঘটেছে।’

বাচ্চা সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘কোন রোগীকে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পর তার নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়। কারণ, তার কোন অনুভূতি থাকে না। সেক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করা হয়। আর সৈয়দা তামান্না আখতারের ক্ষেত্রে তা হয়নি।’ তবে শুরু থেকেই তামান্নাকে গর্ভকালীন চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সেটি কৌশলে এড়িয়ে যান।

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



সম্পাদক ও প্রকাশক : ইয়াকুব শিকদার

ঢাকা অফিস: ১২১,ডি.আই.টি, এক্সটেনশন রোড, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০। রাজশাহী অফিস: বহরমপুর (সিটি বাইপাস), জিপিও-৬০০০, রাজপাড়া, রাজশাহী। ই-মেইল: somoyerkotha24news@gmail.com, মোবাইল: 01727202675