স্টাফ রিপোর্টার : উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাসপাতাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতালের শুধু উত্তরাঞ্চল না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষরা এখানে এসে সেবা নিচ্ছেন। তবে এই হাসপাতালে শয্যার চেয়ে থাকছে তিনগুন বেশি রোগী। ১২০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও কখনও পাঁচ হাজারের বেশি রোগী ছাড়িয়ে যায়। হাসপাতালটিতে ২৪০০ বেডে উন্নীত করার কাজও থেমে গেছে। এছাড়াও এই হাসপাতালে আছে জনবল ঘাটতি। তবুও এই হাসপাতাল চিকিৎসাসেবা ভালো হওয়ায় উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের কাছে জনপ্রিয়।
শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নয়- বিভাগের প্রতি জেলার হাসপাতালে একই অবস্থা। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও আছে। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে আছে চিকিৎসকের ঘাটতি। রাজশাহী বিভাগের সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৫২০টি। বিভাগের আটটি জেলার ৫৯টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে।
ইদের আগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, শয্যার ঘাটতি থাকায় ওয়ার্ডের মেঝেতে এমনকি হাসপাতালের বারান্দাতেও রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোজার মধ্যে মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোতে চাপ ছিল বেশি। হাসপাতালের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬ টি বেডের বিপরীতে রোগী ছিল প্রায় ৪০ জন। যারা চিকিৎসা নিয়েছেন বেশিরভাগই ওয়ার্ডের মেঝেতে ও বারান্দায় ছিলেন। তবে ইদের ছুটিতে হাসপাতালের ওয়ার্ডের বেডগুলো ফাঁকা ছিল।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও সেবার মান বাড়েনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের। সীমান্ত ঘেঁষা এই হাসপাতালেও আছে শয্যার ঘাটতি। তবে আরও ভালো চিকিৎসার জন্য রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসা রোগীর দৈনিক সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। অর্থোপেডিক, চক্ষু, নাক, কান, গলাসহ বড় ধরনের অস্ত্রোপচার হচ্ছে নিয়মিত। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেলে রোগীদের পাঠানো হয়। এখানে ১০টি আইসিউ বেড থাকলেও নেই জনবল ও যন্ত্রপাতি। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, ১০ শয্যার আইসিইউ ও ডায়ালাইসিস ইউনিটের অবকাঠামো তৈরি হলেও জনবল ও যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়নি। এছাড়াও শয্যা সঙ্কট আছে। গুরুত্বর রোগীদের শয্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
কাগজে-কলমে নওগাঁ ২৫০ শয্যা হাসপাতাল হলেও এই হাসপাতালে রয়েছে বাস্তবে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সুযোগ সুবিধা। ১০০ জন রোগীর জন্য খাবার বরাদ্দ, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং জনবল কাঠামো রয়েছে। ১০০ শয্যা জনবলের মধ্যে আবার ৩০ ভাগ জনবলের ঘাটতি রয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২১ সালে চালু হয় ২৫০ শয্যার সুবিধা। রোগী ভর্তির হার শতভাগের বেশি। বহির্বিভাগে দৈনিক হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসার জন্য আসছে। বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে ৩২ ধরনের ওষুধ। তবে এখনো ২৫০ শয্যার লোকবলের সুবিধা পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। পদের বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন ৪০ শতাংশের কম।
সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার কথা বলছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী। তিনি বলেন, ২৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর দূর-দূরান্ত থেকে সেবাপ্রত্যাশীরা পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসছেন। ১০০ শয্যার জন্য যে জনবল প্রয়োজন তাও এখানে নেই। ২৫০ শয্যা হওয়ার পরও ওষুধসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়েনি। এত সমস্যার মধ্যেও পরিপূর্ণ সেবা দেয়ার চেষ্টা চলছে। ভর্তি রোগীদের ৮০ শতাংশের বেশি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। অন্যত্র পাঠাতে হচ্ছে না। চিকিৎসকের অভাবে বেশকিছু জটিল অস্ত্রোপচার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
রাজশাহী বিভাগে ৯৪টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যা আছে। আইসিইউ চালাতে লোকবল সঙ্কটে রাজশাহী ও বগুড়া ছাড়া বাকি জেলাগুলোর হাসপাতালে ৪৪টি শয্যা অলস পড়ে আছে। এতে রোগীদের অতিরিক্ত চাপে সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছে হাসপাতাল দুটি। পাশাপাশি সংকটাপন্ন রোগীও সিরিয়াল না পেয়ে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ৪০টি, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ১০টি, সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ১০টি, জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ১০টি, বগুড়ার সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ৮টি ও সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ৬টি দেওয়া হয়। তবে রামেক ও শজিমেক হাসপাতাল ছাড়া বাকিগুলোতে ফেলে রাখা হয়েছে আইসিইউ শয্যা। ফলে উত্তরাঞ্চলের এই জেলাগুলোর গুরুতর রোগীদের চাপ পড়ছে এই দুই হাসপাতালে। ফলে সংকটাপন্ন রোগীরা সিরিয়াল না পেয়ে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, শয্যা ও জনবল সঙ্কট আছে বিভাগের সব হাসপাতালে। আমরা এই সমস্যা নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। শয্যা না বাড়লেও জনবল বাড়ানো হবে।