নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরে সাজেদুর রহমান সেলিম নামে এক কলেজ শিক্ষককে পিটিয়ে দুই হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। শিক্ষক সেলিম সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক ও নাটোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রান্তজন পত্রিকার সম্পাদক। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, স্থানীয় বিএনপির কর্মী আব্দুল ওহাবের নেতৃত্বে ৮-১০ জন লোক শিক্ষক সেলিমের ওপর হামলা চালান। তাঁরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজের অনুসারী।
আজ রোববার (৬ এপ্রিল) দুপুরে সদর উপজেলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজসংলগ্ন চন্দ্রকলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার। শুরু থেকে কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁর মেয়ে রোখসানা পারভীন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কলেজের শিক্ষকদের একাংশের সংশ্লিষ্টতায় স্থানীয় বিএনপি নেতারা কলেজের নাম থেকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বাদ দিতে ও নতুন নামকরণের জন্য চাপ দেন। তাঁদের চাপে কলেজের নাম পরিবর্তন করে চন্দ্রকলা ডিগ্রি কলেজ নামকরণ করে প্রস্তাব পাঠানো হয়। সম্প্রতি কলেজের নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে উত্তেজনা চলছিল। আজ দুপুরে কলেজের ক্লাস শেষ করে শিক্ষক সেলিম বাড়ি ফেরার জন্য কলেজ থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় বিএনপি নেতা ওহাবের নেতৃত্বে ৮-১০ জন লোক তাঁর সঙ্গে কথা বলার নাম করে পাশের একটি চা স্টলে নিয়ে যান। চা স্টলে ঢুকে ওহাবসহ অন্যরা সেখানে থাকা জ্বালানি কাঠ ও সঙ্গে আনা লাঠিসোঁটা দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। শিক্ষক সেলিমকে মারতে দেখে এলাকার লোকজনও সেখান থেকে সরে যান। একপর্যায়ে ওহাব ও তাঁর লোকজন সেলিমকে ফেলে চলে যান। পরে কলেজের এক সহকর্মী তাঁকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পলাশ কুমার সাহা বলেন, শিক্ষক সেলিমের সারা শরীরে লাঠিসোঁটার আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এক্স-রের পর দেখা যায়, তার দুই হাতই ভেঙে গেছে। তাঁকে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে।
নাটোর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও যমুনা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি নাজমুল হাসান বলেন, ‘শিক্ষক সেলিম একজন অত্যন্ত সজ্জন ও প্রগতিশীল ভাবধারার মানুষ। তিনি স্থানীয় দৈনিক প্রান্তজন পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তাঁর ওপর হামলাকারীরা চিহ্নিত হয়েছে। অবিলম্বে গ্রেপ্তারে দাবি করছি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত আব্দুল ওহাবের ফোন নম্বরে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
হামলার ঘটনার ব্যাপারে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ বলেন, এ ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুর রহমান জানান, ঘটনার পর পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে আহত শিক্ষকের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা ও হামলাকারীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে পুলিশ জড়িতদের ধরার চেষ্টা করছে।