• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • ৯ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • somoyerkotha24news@gmail.com
  • +880-1727-202675

ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের ভয়ংকর তথ্য: ফেঁসে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু, গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা

প্রকাশ: রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১০:৩২

ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের ভয়ংকর তথ্য: ফেঁসে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু, গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা

অনলাইন ডেস্ক : সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েলের গণহত্যাকারী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নামের সঙ্গে একটি নতুন সংকট যুক্ত হয়েছে। নেতানিয়াহু, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা চলছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে – এরই মধ্যে ঘাড়ে চেপেছে নতুন সংকটটি। ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের তদন্তেই উঠে এসেছে ভয়ংকর তথ্য।

ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের হামলার বিষয়ে আগে থেকে জানা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেননি নেতানিয়াহু। এর জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের গুরুতর অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি। শুধু তাই নয় সেদিনের হামলায় হামাসকে কাতারের মাধ্যমে অর্থের জোগান দেওয়া এবং নিজেদের সৈন্য দিয়েই ইসরায়েলি মানুষদের সেদিন হত্যা করান তিনি।

৭ অক্টোবরের ঘটনায় নেতানিয়াহুর ভূমিকা নিয়ে ইসরায়েলি জনগণের মধ্যে আগে থেকেই বিতর্ক হয়েছে। সেই সময় যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, হামাস ৭ অক্টোবরে ১২০০ জনকে হত্যা করেছে। তবে উপলব্ধ প্রমাণের সাথে এটি অসঙ্গতিপূর্ণ। কেননা হামাসের কাছে কোনো অস্ত্র-সরঞ্জামই এতটা কার্যকর ছিল না যে, এতটা অল্প সময়ে এমন প্রভাব ফেলতে পারে।

হারেৎজ পত্রিকা জানিয়েছে, সেদিন কর্তব্যরত সৈন্য এবং এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য থেকে প্রকাশ করে যে, ‘হানিবাল নির্দেশিকার’ আদেশ দেওয়া হয়েছিল এবং ওই অঞ্চলে পাঠানো ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব সৈন্য এবং নাগরিকদের হত্যা করেছিল, যাতে তারা হামাসের হাতে আটক না হয়। অন্য কথায়, নেতানিয়াহুর দায় কেবল হাজার হাজার ফিলিস্তিনিদের গণহত্যাই নয়, বরং তার নিজস্ব সৈন্য ও মানুষদের হত্যার জন্যও তিনি দায়ী।

সংকট কীভাবে দেখা দিল?
সাম্প্রতিক ঘটনাটি পূর্ববর্তী অভিযোগগুলোর চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতির। ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটের পরিচালিত এবং ‘কাতারগেট’ নামে পরিচিত তদন্তের ভিত্তিতে, গুরুতর অভিযোগটি পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি এই গোয়েন্দা সংস্থা দেখেছে, নেতানিয়াহু এবং তার অফিস ৭ অক্টোবরের হামলা সম্পর্কে অবগত ছিল, কিন্তু নিরাপত্তা পরিষেবাগুলোকে তা জানায়নি। গাজার বেসামরিক লোকদের এতে যুক্ত করতে বেতন দেওয়ার জন্য কাতার হামাসকে যে অর্থ পাঠিয়েছিল, তা নেতানিয়াহুর উপদেষ্টাদের মাধ্যমে পাঠানো হয়। এই অর্থের কিছু অংশ আত্মসাতও করা হয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ  ইসরায়েলি বর্বরতা, পাকিস্তান-জুড়ে বিক্ষোভের ডাক জামায়াতে ইসলামীর

নেতানিয়াহু এবং তার উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে শিন বেটের তদন্তের প্রকাশ একটি কেলেঙ্কারিজনক অধ্যায়। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান আমান এবং চিফ অফ স্টাফ তাদের ব্যর্থতার কারণে পদত্যাগ করেছিলেন। এরপর নেতানিয়াহু শিন বেটের প্রধান রোনেন বারের পদত্যাগ চেয়ে বসেন। তবে, রোনেন বার পদত্যাগ করা থেকে বিরত থাকেন এই বলে যে, তারা দীর্ঘদিন ধরে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করে আসছেন এবং এই পর্যায়ে পদত্যাগ করা তার পক্ষে উপযুক্ত হবে না।

মূলত নতুন সংকট এখান থেকেই শুরু। নেতানিয়াহু তার বিবৃতিতে বলেন, তিনি আর শিন বেট প্রধান রোনেন বারকে বিশ্বাস করেন না এবং তাই তার সাথে কাজ করতে চান না। যদি রোনেন পদত্যাগ না করেন, তাহলে তিনি তাকে বরখাস্ত করবেন। তাছাড়া ইসরায়েলি আইন অনুসারে, প্রধানমন্ত্রীর শিন বেট প্রধানকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা রয়েছে।

তবে রোনেন বারের আপত্তির প্রেক্ষিতে, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় প্রতিক্রিয়া জানায় যে, প্রধানমন্ত্রীর শিন বেট প্রধানকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা রয়েছে, তবে পরিস্থিতির অসাধারণ সংবেদনশীলতা এবং বিষয়টির অভূতপূর্ব প্রকৃতি, সেইসঙ্গে এই উদ্বেগ রয়েছে যে, এই বরখাস্ত অবৈধতা এবং স্বার্থের সংঘাতের দ্বারা কলঙ্কিত হবে। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, শিন বেট প্রধানের পদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ব্যক্তিগত আস্থার পদ ছিল না এবং প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ করা আস্থার অভাব বরখাস্তের জন্য যথেষ্ট নয়।

আরও জানা গেছে, সিন বেট প্রধানকে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য নেতানিয়াহুকে প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে একটি অনুকূল মতামত নিতে হবে। তারপর যদি আইনি উপদেষ্টা বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় যে, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থাপিত ভিত্তিগুলো অভিশংসনের জন্য যথেষ্ট, তাহলে নেতানিয়াহু তার কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারেন। তবে প্রকৃতপক্ষে, নেতানিয়াহুর সাথে একটি বৈঠকে অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারভ-মিয়ারা তাকে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, শিন বেটের সাথে স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে তাকে বরখাস্ত করা উপযুক্ত হবে না।

আরও পড়ুনঃ  যুদ্ধের মাঝে ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

তবে নেতানিয়াহু এই সমস্ত আইনি সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে ঘোষণা করেন, তিনি তার সরকারি অংশীদারদের সহায়তায় রোনেনকে বরখাস্ত করেছেন। এই ঘটনার পর, শিন বেট প্রধান সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন, বরখাস্ত স্থগিতের অনুরোধ করেন। অনুরোধের ভিত্তিতে, সুপ্রিম কোর্ট অ্যাটর্নি জেনারেলের সাথে একমত হন এবং রায় দেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী রোনেনকে বরখাস্ত করতে পারবেন না।

তা সত্ত্বেও, নেতানিয়াহু অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বলেছিলেন, তিনি আর রোনেনের সাথে কাজ করবেন না, রোনেনের পদ ছেড়ে দেওয়া উচিত এবং ৭ অক্টোবর নিয়ে তদন্ত অবিলম্বে শেষ করা উচিত।

ইসরায়েলকে গৃহযুদ্ধে নিক্ষেপ
অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এবং সুপ্রিম কোর্ট উভয়ের প্রতিকূল রায় সত্ত্বেও রোনেনকে বরখাস্ত করার জন্য নেতানিয়াহুর জেদকে ইসরায়েলের গণতন্ত্র এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল এবং নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তার ব্যক্তিগত লাভের জন্য ইসরায়েলকে গৃহযুদ্ধে টেনে আনার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

গাজায় যুদ্ধবিরতি বাতিল করে হামাসের কাছে আটক থাকা ৫৯ জন জিম্মির মধ্যে ২৪ জনের জীবন ‘নতুন করে বিপন্ন করার জন্য’ নেতানিয়াহুর ওপর ইসরায়েলি সমাজের একটি অংশ ইতিমধ্যেই ক্ষুব্ধ। তারা এখনো জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এবং সুপ্রিম কোর্টের বিরোধী মতামত সত্ত্বেও, শিন বেট প্রধানকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের ফলে জনগণের ক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

ফলস্বরূপ, গত সপ্তাহান্তে তেল আবিবে দুই লাখেরও বেশি মানুষ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে এবং নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছে। বিরোধী দলগুলো নেতানিয়াহুর সমালোচনায় যোগ দিয়েছে, বিশেষ করে প্রধান বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিড। এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে নেতানিয়াহুর দ্বন্দ ইসরায়েলের ক্ষতি করছে। নেতানিয়াহুর পথ শেষ।

আরও পড়ুনঃ  ভারতে বাস দুর্ঘটনা, ছিলেন ৭০ জনের বেশি বাংলাদেশি পর্যটক

সপ্তাহান্তে তেল আবিবে দুই লাখেরও বেশি মানুষ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। ছবিছ সংগৃহীত

ইয়ার লাপিড সকল প্রতিষ্ঠানকে ধর্মঘটে যাওয়ার এবং জনসাধারণকে নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে নাগরিক অবাধ্যতায় জড়িত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে নেতানিয়াহুকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা যায়।

ইসরায়েলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের একজন এহুদ ওলমার্ট বলেছেন, ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় শত্রু হামাস বা ইরান নয়, ইসরায়েলের আসল শত্রু নেতানিয়াহু। এরা সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, রাষ্ট্রকে দুর্বল করে দেয়।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, নেতানিয়াহু যদি পদত্যাগ না করেন, তাহলে দেশটি দ্রুত গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাবে।

প্রকৃতপক্ষে, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান এবং কার্যকারিতার বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর সংগ্রাম কেবল শিন বেট প্রধানকে অপসারণের চেষ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। নেতানিয়াহুর বিচারমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নির্বাচনকারী কমিটির গঠন পরিবর্তন নিয়ে দ্রুত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিচারমন্ত্রীর তৈরি খসড়া বিল অনুসারে, তারা বিচার বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির গঠন পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন, যাতে তাদের পছন্দের বিচারকরা সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচিত হন, তা নিশ্চিত করা যায়।

বিশেষজ্ঞদের মত, নেতানিয়াহুর শিন বেটের প্রধানকে বরখাস্ত করার প্রচেষ্টা এবং সুপ্রিম কোর্টে বিচারকদের নির্বাচিত করার জন্য বিচার বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির গঠন পরিবর্তন আনার ইচ্ছা সম্ভবত দেশে রাজনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং একদিকে ইসরায়েলকে গৃহযুদ্ধের দিকে টেনে আনবে, অন্যদিকে অর্থনীতির পতনের দিকে নিয়ে যাবে। ফলে ইসরায়েলের জনগণের জন্য এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে – হয় তারা দুর্নীতিগ্রস্ত এবং গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুর সাথেই থাকবে অথবা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নেতানিয়াহুকে অপসারণ করবে।-ইত্তেফাক

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



সম্পাদক ও প্রকাশক : ইয়াকুব শিকদার

ঢাকা অফিস: ১২১,ডি.আই.টি, এক্সটেনশন রোড, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০। রাজশাহী অফিস: বহরমপুর (সিটি বাইপাস), জিপিও-৬০০০, রাজপাড়া, রাজশাহী। ই-মেইল: somoyerkotha24news@gmail.com, মোবাইল: 01727202675