চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : আমরা আগামী দিনে নির্বাচন চাই, কিন্তু নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল।
বুধবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের কারবালা হাই স্কুল মাঠে মহারাজপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আয়োজনে এক পথসভায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি জামায়াত মনোনীত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী।
নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শহীদ পরিবারগুলোর কাছে যান এবং জিজ্ঞাসা করুন আপনি কী চান? শহীদ পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য হচ্ছে, আমাদের খুনিদের বিচার আমরা চাই। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, আমরা সংস্কার চাই। আমাদের সন্তানরা জীবন দিয়েছেন, একটি নতুন বাংলাদেশের জন্য তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে আমার দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যাবেন- এমন কোনো নির্বাচন আমরা চাই না। আর এটাই দেশের ১৮ কোটি মানুষের বক্তব্য। অযথা নির্বাচন নির্বাচন করে আমরা পাগল হয়ে গিয়েছি। জামায়াত ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী দল। আমরা প্রতিটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। আগামী দিনে নির্বাচনে অংশগ্রহনের জন্য প্রস্ততি গ্রহণ করছি এবং বাংলাদেশের ৩০০টি আসনে প্রার্থী নির্ধারণ করে আমরা আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।
নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ঢেলে সাজানোর জন্য মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজন। সেটি আমরা চাই। আমরা আগামী দিনে নির্বাচন চাই, কিন্তু নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার হতে হবে। নির্বাচনটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য যেসব সংস্কার প্রয়োজন এবং নির্বাচনকে সার্বিকভাবে সফল করার জন্য যেসব সংস্কার প্রয়োজন সেসব আমাদেরকে করতে হবে এবং এর পরেই নির্বাচন হতে হবে। এটিই হচ্ছে জনগণের দাবি। আমরা বলেছি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দেওয়ার মাধ্যমে জনদুর্ভোগ থেকে এই দেশের জনগণকে রক্ষা করতে হবে। আমরা সেই দাবি সরকারের কাছে জানিয়েছি। আজকেও এই সমাবেশ থেকে সরকারের কাছে সেই দাবিগুলো জানাতে চাই।
ইসলামের পক্ষের শক্তিকে জনগণ ক্ষমতায় দেখতে চায় জানিয়ে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত ও চাঁদাবাজমুক্ত দেশ চায়। জামায়াতে ইসলামী মনে করে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্ত, বৈষম্যবিরোধী ও নতুন ন্যায়বিচারের বাংলাদেশ যদি গড়তে হয় তাহলে সেই ধরনের নেতৃত্ব প্রয়োজন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বারবার উলট পালট করে ক্ষমতায় এসেছে। এই ৫৪ বছরে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা কী দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিমুক্ত দেশ গড়তে পেরেছে। উত্তর না। কেন পারেনি, কারণ তাদের প্রশিক্ষণ নেই , কর্মসূচি নেই বরং তাদের পয়সা দিয়ে নির্বাচন করে নির্বাচিত হওয়ার পর পয়সা তুলার সংস্কৃতি বাংলাদেশে চালু আছে। এজন্য এই দেশের জনগণের জামায়াতে ইসলামীর প্রতি তাদের সমর্থন, ভালোবাসা এবং তাদের সহোযোগিতা প্রকাশ করছে। এদেশের জনগণের কাছে এটি দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়েছে আমরা এ দল দেখেছি, আমরা বি দল দেখেছি, আমরা এবার নতুন দল জামায়াতে ইসলামীকে দেখতে চাই। ইসলামের পক্ষের শক্তিকে দেখতে চাই। এই ঘোষণা আজকে এই দেশের আপমার জনগণের, নারী পুরুষ ও তরুণ ছাত্র-জনতার।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা তৈরি হওয়ার প্রেক্ষিতে আমরা লক্ষ্য করছি, অস্থির হয়ে গিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিপক্ষে বক্তব্য দেওয়া শুরু হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের চরিত্র হননের জন্য মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামীকে আবারও বিতর্কিত করার জন্য ওই ৭১ কে তুলে এনে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হচ্ছে। এগুলো কারা করছে আপনারা জানেন। যাদের সাথে আমরা দীর্ঘ সময় একসাথে আন্দোলন সংগ্রাম করে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করেছি, আজকে তাদের পক্ষ থেকে আমাদের বিরোধিতায় নেমে পড়েছে। তার কারণ, আমাদের বন্ধুরা দেখছেন, জনগণ দুর্নীতিবাজদেরকে পছন্দ করেন না। আমাদের বন্ধুরা দেখছেন, এই দেশের জনগণ ২৪ এর আগস্টের পরে কোনো চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। কোনো সন্ত্রাসী ও কমিশন ভাগাভাগির নেতৃত্বকেও ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জামায়াতের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বড় মজলুম দল। জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আজম, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদসহ ১১ জন শীর্ষনেতাসহ সারা দেশের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিস থেকে শুরু করে ওয়ার্ড অফিস পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। জামায়াত ইসলামীকে কোনো মত প্রকাশ, কথা বলা ও সভা সমাবেশ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। জামায়াত ইসলামীর নেতৃবৃন্দ কোনো অনুষ্ঠানে গেলে সেখান থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে লাখ লাখ মামলা দিয়ে ঘরবাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। লক্ষাধিক নেতাকর্মী অমানবিক জীবন পরিচালনা করেছেন এবং খোলা আকাশের নিচে তারা রাত্রি যাপন করেছেন। অন্ধকার কারাগারের ভিতর লাখ লাখ নেতাকর্মীকে নির্ঘুম সময় পার করতে হয়েছে। তাই তারা যদি চায় ফুৎ করে নিভিয়ে দেবে তা সম্ভব নয়। জামায়াতে ইসলামীকে যারা নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল তারাই আজকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
এ সময় মহারাজপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আব্দুল আলীমের সভাপত্বিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা নায়েবে আমির ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান, জেলা অফিস সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কবির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার আমির হাফেজ গোলাম রাব্বানী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা আমির হাফেজ আব্দুল আলীম, সদর উপজেলা প্রকাশনা সম্পাদক মো. আকতারুল ইসলাম, মহারাজপুর ইউনিয়নের নায়েবে আমির মো. ওমর ফারুক প্রমুখ।