• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • ১৫ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • somoyerkotha24news@gmail.com
  • +880-1727-202675

বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রাজশাহীতে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ: রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ৯:১৯

বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রাজশাহীতে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপনকে ঘিরে রাজশাহীর সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারের উদ্যোগে আয়োজিত রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল থেকেই রাজশাহী বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার চত্বরে মুখর ছিল শিক্ষার্থীদের কোলাহলে। একদিকে রচনার কলমে ফুটে উঠেছে নববর্ষের রঙিন আবহ, অন্যদিকে রঙতুলিতে ক্যানভাসে উঠে এসেছে বাঙালিয়ানার চিত্র।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এই আয়োজনটি শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিযোগিতায় রাজশাহী জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে। সকাল ৯টা থেকেই অংশগ্রহণকারীরা লাইনে দাঁড়িয়ে নিবন্ধন করে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করে।

গণগ্রন্থাগারের সহকারী পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান জানান, এবারের আয়োজনে মোট ১৬৭ জন প্রতিযোগী নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ৯৬ জন সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন যা আয়োজকদের জন্য একটি সন্তোষজনক ফলাফল।

রচনা প্রতিযোগিতা তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয় পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি, এবং স্নাতকোত্তর বা সর্বসাধারণ। প্রতিটি গ্রুপের জন্য নির্ধারিত ছিল ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। শিশু-কিশোরদের জন্য ছিল ‘বৈশাখী মেলা’, কিশোর-তরুণদের জন্য ‘উৎসবে, আনন্দে বর্ষবরণ’, এবং বয়োজ্যেষ্ঠ কিংবা উচ্চশিক্ষিতদের জন্য ‘বাংলা সংস্কৃতির বিকাশে বাংলা নববর্ষের প্রভাব’।

আরও পড়ুনঃ  নগরীতে ব্ল্যাকমেইল ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার ১

সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টাব্যাপী রচনার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা তাদের সৃজনশীল চিন্তা তুলে ধরার সুযোগ পায়। প্রতিযোগীদের কেউ লিখেছে গ্রামীণ বৈশাখী মেলার জীবন্ত বিবরণ, কেউবা তুলে ধরেছে শহুরে উৎসবের আয়োজন, আবার কেউ কেউ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নববর্ষের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ করেছে।

রাজশাহীর সরকারি একটি কলেজের শিক্ষার্থী মেহরাব হোসেন বলেন, “নববর্ষ নিয়ে লেখার সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে। আমরা যেমন আনন্দে উৎসব পালন করি, তেমনি তার ইতিহাস এবং সমাজে এর গুরুত্ব নিয়েও ভাবার সুযোগ হয়েছে।”

রচনা শেষ হওয়ার পরপরই ১১টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। শিশু শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রঙ, তুলি, পেন্সিল নিয়ে বসে পড়ে ক্যানভাসে তাদের কল্পনার রঙ ছড়াতে। প্রতিযোগিতাটি চলে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে জলবায়ু ধর্মঘট বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য খরা তহবিল গঠন ও জাতীয় খরা নীতিমালা তৈরীর দাবি

প্রতিযোগীদের আঁকা চিত্রে দেখা গেছে ঘুড়ি উড়ানো, পান্তা-ইলিশের থালা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, পয়লা বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জা, এবং বাংলার গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি। একেকটি ছবি যেন বাংলা সংস্কৃতির গল্প বলছে নির্ভারভাবে।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার তার আঁকা ছবির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলল, “এটা মঙ্গল শোভাযাত্রা। এখানে সবাই একসাথে গান গাইছে আর মুখে হাসি।”

চিত্রাঙ্কনের সময় অভিভাবকরা লাইব্রেরি চত্বরে দাঁড়িয়ে সন্তানের আঁকা ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলেন গর্বে। কেউ কেউ আবার মোবাইলে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন পুরো এলাকা যেন এক ছোটখাটো উৎসবে পরিণত হয়।

সহকারী পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান বলেন, “শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে আমাদের এই আয়োজন। আমরা চাই, শিশুরা কেবল আনন্দ করেই না, বরং তাদের শিকড়ে ফিরে যাক, বাংলা সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে জানুক, বুঝুক এবং লালন করুক।”

আরও পড়ুনঃ  তানোর পৌর এলাকায় খেলার মাঠ রক্ষায় গ্রামবাসীর মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ: নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এই আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি মনে করেন, সংস্কৃতির এই চর্চা শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, পুরো সমাজকেই ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং অভিভাবকরা।
বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে এমন আয়োজন শিক্ষার্থীদের মাঝে একদিকে যেমন উৎসবের আনন্দ জাগিয়েছে, অন্যদিকে তাদের চিন্তা, চেতনা ও সৃজনশীলতার দরজাও খুলে দিয়েছে।

রাজশাহীতে এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, সরকারি গ্রন্থাগার কেবল বই পড়ার জায়গা নয়, বরং তা হতে পারে এক একটি সৃজনশীল চর্চার কেন্দ্র। বাংলা নববর্ষ উদযাপনে এমন প্রতিযোগিতা নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

শুধু একদিনের উৎসব নয়—এই আয়োজন যেন বাংলা সংস্কৃতিকে হৃদয়ে ধারণ করার এক চিরন্তন প্রেরণা হয়ে ওঠে, সেটাই প্রত্যাশা রাজশাহীর সংস্কৃতিপ্রেমী নাগরিকদের।

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



সম্পাদক ও প্রকাশক : ইয়াকুব শিকদার

ঢাকা অফিস: ১২১,ডি.আই.টি, এক্সটেনশন রোড, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০। রাজশাহী অফিস: বহরমপুর (সিটি বাইপাস), জিপিও-৬০০০, রাজপাড়া, রাজশাহী। ই-মেইল: somoyerkotha24news@gmail.com, মোবাইল: 01727202675