মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে দুই দিন ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) ও পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা ছাড়াও উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে অভিযান চালায়।
গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ও পশ্চিম রাজৈর গ্রামের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ, দোকানপাটে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
সংঘর্ষের সময় ১০ থেকে ১২টি দোকানে লুটপাট চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
পুলিশ, হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল ঈদের পরদিন ফুচকা ব্রিজ এলাকায় আতশবাজি ফোটায় বদরপাশা গ্রামের আতিয়ার আকনের ছেলে জুনায়েদ আকন ও তাঁর বন্ধুরা। এ সময় পশ্চিম রাজৈর গ্রামের মোয়াজ্জেম খানের ছেলে জোবায়ের খান ও তার বন্ধুরা এতে বাধা দেয়। বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে ৩ এপ্রিল সকালে জোবায়েরকে একা পেয়ে পিটিয়ে ডান পা ভেঙে দেয় জুনায়েদ ও তাঁর সহযোগীরা। পরে জোবায়েরের বড় ভাই অনিক খান বাদী হয়ে রাজৈর থানায় জুনায়েদসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন।
গত শনিবার সন্ধ্যায় অনিক খান রাজৈর বাজারে গেলে জুনায়েদ ও তাঁর বন্ধুরা তাঁকে ধাওয়া দেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত ৯টার দিকে দুই গ্রামের মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা ওই সংঘর্ষে কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে রাজৈর থানার ওসি, কয়েকজন পুলিশ সদস্য এবং উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হন।
পরদিন গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফের উত্তেজিত হয়ে পড়ে দুই গ্রামের লোকজন। প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষে ফের ককটেল বিস্ফোরণ ও দোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। সেনাবাহিনী, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও অভিযানে অংশ নেন।
ঘটনায় রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলমসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। গুরুতর আহতদের মধ্যে রাজৈর গ্রামের মেহেদী মীর (২২), রাসেল শেখ (২৮), সাহাপাড়া গ্রামের মনোতোষ সাহা (৫০) ও আলমদস্তার গ্রামের তাওফিককে (৩৭) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এএসপি জাহাঙ্গীর আলম মাদারীপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। বাকিদের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ছাড়া রাত সাড়ে ১২টার দিকে উত্তেজিত গ্রামবাসী রাজৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় থানার দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এতে এসআই মোস্তফা ও চালক শাহাবুদ্দিন আহত হন।
রাজৈর থানার ওসি মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, ‘আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এতে এসআই মোস্তফা ও চালক শাহাবুদ্দিনের মাথায় আঘাত লেগেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে চার দফায় সংঘর্ষ হলো। পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে, আমরা আহত হয়েছি। কিন্তু কারও ওপর দায় চাপাতে চাই না। আশা করি, সবার সহযোগিতায় দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করা যাবে।’