স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে কার্যালয়ে একটি তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাজশাহীতে যে কোন ধরনের ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার হুমকি’ দেওয়ার পর রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ এ কৌশল নিয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সারাদেশেই বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ছিল। তবে তার আগেই সোমবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাজশাহীতে পদযাত্রা নিষিদ্ধ করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, সিটি নির্বাচনের আগে কোন পদযাত্রা করা যাবে না। তবে বিএনপির দাবি, তাদের দমন করতেই পুলিশ এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। রাতে পদযাত্রা নিষিদ্ধ ঘোষণার পর মঙ্গলবার সকালেই বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। ফলে দলটির নেতাকর্মীরা ভিড়তে পারেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিএনপি কার্যালয়সহ মধ্যনগরীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তাবলয় পড়ে তোলে পুলিশ। সাহেববাজারমুখী বিভিন্ন সড়কে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে করে তারা। মোড়ে মোড়ে পথচারীদের গতিরোধ করে চালানো হয় তল্লাশি। মহানগরীর মালোপাড়া এলাকায় বিএনপি কার্যালয়, ভ‚বনমোহন পার্ক, গণকপাড়া, সোনাদীঘি মোড় ও বাটার মোড় এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিপুলসংখ্যক ডিবি সদস্যও বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়। মাঠে পুলিশের বিশেষায়িত টিম ক্রাইসিস রেসপন্স টিম-সিআরটি বিএনপির কার্যালয় ঘিরে রাখে। নগরীর সোনাদীঘি মোড় এলাকায় প্রস্তুত রাখা হয় পুলিশের এপিসি গাড়ি এবং জলকামান। পুলিশের যুদ্ধাংদেহী অবস্থানের কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে কৌতূহল ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এমন কি সকালে দোকানী ও ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
জানা গেছে, পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে রাজশাহী মহানগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম সাহেব বাজার এলাকায় তেমন মানুষ যেতে পারেনি। এ কারণে দিনভর বাজার ছিল খালি। অন্যান্যদিন মানুষের ভীড়ে পায়ে হেঁটে সাহেব বাজার অতিক্রম করাই কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু মঙ্গলবার পুলিশের কড়াকড়ির কারণে লোকজন ছিল না বললেই চলে। এমনকি রাজশাহী কলেজের সামনে থেকেই সড়কে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। ওদিকে আলুপট্টি থেকেই সাহেববাজারমুখী কোনো যানবাহন যেতে দেয়া হয়নি। ফলে মাঝপথে যাত্রীদের নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সোনাদীঘি মোড়ে জলকামান ও এপিসি গাড়ি রেখে সড়কে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ পড়েন বিপাকে। তবে বিকেলে ঝড়-বৃষ্টির পর পুলিশের নিরাপত্তা শিথিল হয়।
আরএমপির অতিরিক্ত পুলিশ (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) বিজয় বসাক বলেন, ‘বিএনপি নেতা চাঁদ প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দেওয়ায় মামলা হয়েছে। এ কারণে বিএনপি পদযাত্রার নামে রাজশাহীতে সহিংসতা করতে পারে-এমন গোয়েন্দা তথ্য পুলিশের কাছে ছিল। তাই জনগণের জানমাল রক্ষায় পুলিশ কঠোর অবস্থানে ছিল। সাধারণ মানুষ কোনো হয়রানিতে পড়েননি। তবে পদযাত্রা কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা হয়েছে সিটি নির্বাচনের কারণে। এটি বিএনপির জন্য নয়।’
তবে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কর্মসুচি অনুযায়ী আমরা ভ‚বনমোহন পার্ক থেকে জিরোপয়েন্ট হয়ে রেলগেট পর্যন্ত পদযাত্রা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আবু সাঈদ চাঁদের ঘটনার কারণে পুলিশ আমাদের কর্মসুচি নিষিদ্ধ করেছে। পুলিশ বলছে নাশকতার তথ্য আছে তাদের কাছে। কিন্তু বিএনপির নাশকতার তথ্য তারা কি গায়েবী স্বপ্নে পেয়েছে? বিএনপি কখনো নাশকতা করে না। গোটা নগরীতে ১৪৪ ধারা জারির মতো পরিস্থিতি তৈরি করে পুলিশই জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষের চলাচলের অধিকারও হরণ করেছে। বিএনপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছে। মহানগরী ও আশেপাশে এলাকা থেকে অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। গায়েবী মামলার আসামি করা হচ্ছে। রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশির নামে হয়রানি করা হয়েছে।’
এদিকে গত শুক্রবার এক সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠানোর হুমকির অভিযোগে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের বিরুদ্ধে কাশিয়াডাঙ্গা ও পুঠিয়া থানায় দুটি মামলা হয়েছে। মামলার পর থেকে পলাতক চাঁদ। কিন্তু চাঁদের বিরুদ্ধে মামলার পর রাজশাহী মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক নজরুল হুদাসহ যুবদল ও ছাত্রদলের অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, চাঁদের বিরুদ্ধে মামলার পর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে না পুলিশ। রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে।
হুমকিদাতা আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেপ্তারে পুলিশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে রাজশাহীর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেছেন, ‘চাঁদকে গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। কিন্তু তাকে এখনো পাওয়া যায়নি। বিভিন্নস্থানে খোঁজা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই চাঁদের গ্রামের বাড়ি চারঘাটের মাড়িয়াতেই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ফেলে রেখে আত্মগোপনে যাওয়ায় চাঁদকে খুঁজে পেতে সময় লাগছে। তবে তথ্য-প্রযুক্তি মাধ্যমে চাঁদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে। যে কোনো সময় তিনি ধরা পড়বেন।’