জয়পুরহাট প্রতিনিধি : জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম হোসেনের ওপর হামলা চালিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাত সোয়া ১০টায় পাঁচবিবি সুপার মার্কেটের নিউ গার্মেন্টস নামে একটি দোকানের সামনে হামলা ও গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে।
বহিরাগত ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের ছোড়া গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন শামীম হোসেন। এ সময় পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন ধাওয়া দিয়ে একজনকে পিস্তলসহ ধরে গণপিটুনি দিয়েছেন। পুলিশ গিয়ে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পিস্তলসহ আটককৃত ব্যক্তি হলেন- রুবেল হোসেন (৩৪)। তিনি ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার বাসিন্দা বলে থানা-পুলিশ জানিয়েছে।
ছাত্রদলের সাবেক নেতা শামীম হোসেনের দাবি, পিস্তলসহ আটক রুবেল হোসেন একজন ভাড়াটে সন্ত্রাসী। পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান সাবেকুন নাহার শিখার ইফতার পার্টি পণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করেছিল। লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম হোসেন ও স্থানীয় দুই সাংবাদিকসহ পাঁচবিবি সুপার মার্কেটের নিউ গার্মেন্টস নামে একটি দোকানের সামনে আড্ডা দিচ্ছিলেন। রাত সোয়া ১০টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে ৬ জন সেখানে আসেন। তারা ছাত্রদলের সাবেক নেতা শামীম হোসেন দেখতে পেয়ে তার ওপর হামলা করেন। শামীম হোসেন তাদের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে দৌড়ে নিরাপদে চলে যান। এসময় ৩-৪ রাউন্ড গুলির শব্দ হয়। সেখান থেকে অপরিচিত ৬ জন দুটি মোটরসাইকেলে চড়ে দ্রুত রেলগেটের দিকে পালিয়ে যান। শামীম হোসেনের চিৎকার ও গুলির শব্দ পেয়ে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে তাদের ধাওয়া করেন।
একপর্যায়ে রেলগেট এলাকায় রাঁখি হোটেলের সামনে মোটরসাইকেলে ধাক্কা লেগে ৩ জন পড়ে যান। সেখানে তারা মোটরসাইকেল ফেলে রেখে দ্রুত সটকে পড়েন। খোঁজাখুঁজির পর লোকজন রেলগেট এলাকায় রুবেল হোসেন নামে একজনকে পিস্তলসহ ধরে ফেলেন। উত্তেজিত লোকজন তাকে গণপিটুনি দেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। রাতেই সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
সাবেক ছাত্রদল নেতা শামীম হোসেন বলেন, পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান সাবিকুন নাহার শিখার স্বামী শাহ কামালের বাড়ি ফরিদপুরে। সাবেকুন নাহার শিখা গত ২৭ রমজান পাঁচবিবি দানেজপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন। বিক্ষুব্ধ লোকজন আগের রাতে ইফতার মাহফিলের প্যান্ডেল ভাঙচুর করায় ইফতার মাহফিল পণ্ড হয়ে যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাবেকুন নাহার শিখা ও তার স্বামী শাহ কামাল তার বাড়ি ফরিদপুর থেকে ৬ জন ভাড়াটে সন্ত্রাসী এনে আমাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি প্রাণে বেঁচে গিয়েছি।
পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাবেকুন নাহার শিখার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটস্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইফতার ঘটনার পর জনগণ বিষয়টি খারাপভাবে নিচ্ছিল। অনেকদিন তিনি পাঁচবিবিতে ছিলেন না। জামিন নেওয়ার পর এসে তার ইমেজটা ধরে রাখার জন্য নিজেই এমনটা করেছেন বলে আমি মনে করি। তিনি (শামীম) হিরো সাজার চেষ্টা করছেন।
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদলের সাবেক নেতা শামীমের ওপর হামলা হয়েছিল। পিস্তলসহ একজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।